উপাচার্য ছাড়া শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা দুরূহ হয়ে দাঁড়িয়েছে

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) ১০ মাসের বেশি সময় ধরে নিয়মিত উপাচার্য নেই। শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে গত ২৮ মে চলতি দায়িত্ব পালনকারী উপাচার্য সাজ্জাদ হোসেন পদত্যাগ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, নিয়মতি উপাচার্য না থাকায় একাডেমিক ও প্রশাসনিকভাবে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। সার্বিক বিষয় নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. রবিউল আওয়াল।

রুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. রবিউল আওয়াল
প্রশ্ন

বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান অবস্থা কেমন?

রবিউল আওয়াল: শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে উপাচার্যকে ২০২২ সালের ৩ আগস্ট নিয়োগ দিয়েছিল। যেটা ছিল অতিরিক্ত দায়িত্ব এবং সাময়িক কাজকর্ম চালানোর জন্য। সেখানে দৈনন্দিন কাজকর্মগুলোই উনি দেখতেন। এর বাইরে আর কোনো কিছু দেখার এখতিয়ার ছিল না বলে উনি সব সময়ই বলতেন। তার বাইরে কিছু করতেনও না তিনি। ফলে দৈনন্দিন কিছু বিষয় মিটতো, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি সবকিছু দেখতে পারতেন না। সামনে একটা গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এটা সুনামের সঙ্গে ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর আগেই উপাচার্য নিয়োগ খুবই প্রয়োজন। উপাচার্য ছাড়া বর্তমানে একটা স্থবির অবস্থা বিরাজ করছে আরকি।

প্রশ্ন

প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম কেমন চলছে, শিক্ষকদের কী ধরনের অসুবিধা হচ্ছে?

রবিউল আওয়াল: প্রায় সব কটি বিভাগের অন্তত ৮০ জন শিক্ষকের পদোন্নতি এক বছরের বেশি সময় ধরে আটকে আছে। অনেক নতুন নতুন বিভাগ আছে, সেগুলোতে শিক্ষকসংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। ওইসব বিভাগের কিছু শিক্ষক আবার উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাই শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে বিভাগের প্রধানদের জন্য দুরূহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ জন্য রুয়েটে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হচ্ছে কি না, এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা বলতে পারবেন।

প্রশ্ন

আমরা জানতে পেরেছি, শিক্ষার্থীরাও নানা ধরনের অসুবিধার মধ্যে আছেন। এ বিষয়ে আপনাদের কাছে শিক্ষার্থীরা এসেছেন কখনো?

রবিউল আওয়াল: অনেক শিক্ষার্থীদের মাস্টার্স, পিএইচডির ডিফেন্স হবে। তা পরীক্ষা কমিটির অনুমোদনের জন্য জেনারেল একাডেমিক কাউন্সিলের প্রয়োজন পড়ে। সেই সভাগুলো চলতি দায়িত্বের উপাচার্য করতে না পারায় আটকে আছে। শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যা রয়েছে। তাঁদের শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও প্রভাব পড়েছে। শিক্ষার্থীরা দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছিল, তার একটা কপি আমাদের কাছেও দিয়েছিল। আমাদের কাছে শিক্ষার্থীরা এসেছিলেন। শিক্ষার্থীরা বলেছেন, তারাও অসুবিধার মধ্যে আছেন। এই ধরনের নানা সমস্যা আছে। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও অনেক কাজ থাকে। প্রায় সব কটিই এ রকম স্থবির হয়ে আছে।

প্রশ্ন

এত দিন ধরে নিয়মিত উপাচার্য নেই কেন? রুয়েটে যোগ্য কেউ কি উপাচার্য হওয়ার মতো নেই?

রবিউল আওয়াল: নিয়মিত উপাচার্য নিয়োগ না দেওয়া পর্যন্ত সাময়িক কাউকে দায়িত্ব দিয়ে থাকে সরকার। এটা অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই হয়ে থাকে। তবে এটা থাকে সাময়িক। আমরাও মনে করেছিলাম এটা সাময়িকই হবে। কিন্তু এত দীর্ঘায়িত হবে, প্রায় ১০ মাস পার হয়ে গেছে। সেটা আমরা কেউই আসলে আশা করি না। এবং এটা কেন যে হচ্ছে, এটাও বুঝতে পারছি না। আমাদের কাছে সঠিক ব্যাখ্যাও আসছে না। তবে একটা বিশ্ববিদ্যালয়কে দীর্ঘদিন পূর্ণাঙ্গ উপাচার্যবিহীন রাখা যৌক্তিক নয়। বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিতীয় প্রাচীনতম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। আশা করি, উপর মহল থেকে দ্রুতই পূর্ণাঙ্গ উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হবে। এখানে উপাচার্য হওয়ার মতো অনেক শিক্ষকই আছেন।

প্রশ্ন

১০ মাস চলতি দায়িত্বের উপাচার্য ছিলেন। শিক্ষকদের আন্দোলন এত পরে কেন?

রবিউল আওয়াল: শিক্ষকেরা দীর্ঘ দিন ধরেই আন্দোলন করছেন। দাবিদাওয়া ও সমস্যার কথা উল্লেখ করে আমরা শিক্ষক সমিতি শিক্ষামন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে স্মারকলিপি দিয়েছি। আমরা উপাচার্যের কাছে গিয়ে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধানের পথে আনতে বলেছিলাম। উপাচার্য বিষয়টি সমাধানে একটা কমিটি করে দিতে পারতেন। পরে শিক্ষকেরা হতাশ হয়ে আন্দোলন করেন এবং উপাচার্য পদত্যাগ করেন। ওই শিক্ষকেরা অনেক দিন ধরেই এই আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন। মাঝে চলতি দায়িত্বের উপাচার্য দুই মাস অসুস্থ ছিলেন, তাঁর স্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনা করে শিক্ষকেরা এই সময়ে আন্দোলনে যাননি।

প্রশ্ন

বর্তমানে চলতি দায়িত্বের উপাচার্যও নেই, এখন শিক্ষক সমিতি কী করণীয়?

রবিউল আওয়াল: অভিভাবকহীন বিশ্ববিদ্যালয় আসলে চলতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো কিছুতেই তাঁর অনুমোদন, অনুমতি লাগে। সে ক্ষেত্রে এখন একেবারেই অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে আমরা শিক্ষক সমিতি গত মঙ্গলবার আলোচনায় বসেছিলাম। গ্রীষ্মকালীন ছুটি শেষে ১০ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের নিয়োগের দাবিতে একটি মানববন্ধন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করি, সরকার এর আগেই আমাদের একজন নিয়মিত উপাচার্য নিয়োগ দিবেন।

প্রথম আলো: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
রবিউল আওয়াল: আপনাদেরও ধন্যবাদ।