রাতভর গোলাগুলি, মর্টার শেল নিক্ষেপ, আকাশ থেকে ফেলা হচ্ছে গোলা। দিনেও একই অবস্থা। প্রকম্পিত হচ্ছে ঘরবাড়ি, জনপথ। এমন অবস্থা ৭০ বছর বয়সের জীবনে আর কখনো দেখেননি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের মধ্যমপাড়ার বাসিন্দা ছৈয়দ নুর।
ঘুমধুমের বেতবনিয়া বাজারে আজ বুধবার সকাল ১০টায় একটি চায়ের দোকানে বসে কথা হয় ছৈয়দ নুরের সঙ্গে। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় ১৮ বছর বয়সী তরুণ ছিলেন তিনি। স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে বয়োবৃদ্ধ ছৈয়দ নুর বলেন, ‘যুদ্ধের সময় বাংকার বানিয়ে সেখানে ঢুকে যেতাম। পাঞ্জাবিদের (পাকিস্তানি হানাদার) সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হতো। তারা ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিত। তারা যা করত, তা দৃশ্যমান। কিন্তু মিয়ানমারের ভেতরে সংঘর্ষের গুলি, মর্টার শেল কখন যে আমাদের গ্রামের ঘরবাড়িতে এসে পড়ছে, বুঝতেই পারছি না।’
প্রায় এক মাস ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে দেশটির সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) লড়াই চলছে। বাংলাদেশ সীমান্তের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে এত দিন লড়াই চললেও এর প্রভাব বাংলাদেশে পড়েনি। তবে গত শনিবার দিবাগত রাত থেকে নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু-ঘুমধুম সীমান্তে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সংঘর্ষ তীব্র হয়। সেই সংঘর্ষ এখনো চলছে।
মিয়ানমারের ঢেঁকিবনিয়া সীমান্তের এপারে ঘুমধুমের মধ্যমপাড়া এলাকায় ছৈয়দ নুরের বাড়ি। সোমবার বিকেলে মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলে পার্শ্ববর্তী জলপাইতলী গ্রামের দুজন নিহত হন। মিয়ানমারের সীমান্ত পরিস্থিতি অনেকটাই ছৈয়দ নুরের নখদর্পণে। তিনি বলেন, রোববার বিকেল পাঁচটার দিকে তুমব্রু রাইট ক্যাম্প সীমান্তচৌকি দখল করে নেয় আরাকান আর্মি। এরপর রোববার রাত ১১টা থেকে তাঁরা আরেকটু দক্ষিণ-পশ্চিমের ঢেঁকিবনিয়া সীমান্তচৌকি দখলের জন্য আক্রমণ শুরু করে।
ছৈয়দ নুর বলেন, ‘রোববার রাত থেকে আমরা ঘুমাতে পারিনি। রাতে-দিনে গুলি ও মর্টার শেলের বিকট শব্দে প্রকম্পিত হচ্ছে ঘরবাড়ি। কিছু মর্টার শেল বসতঘরের উঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় পড়ছে। এতে পুরো গ্রামে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সবাইকে উখিয়ায় পাঠিয়ে দিয়ে আমি সাহস করে বাড়িতে থেকে গেছি।’
তবে সবকিছুর পর স্বস্তির বিষয় হচ্ছে, গতকাল রাত থেকে গুলির শব্দ কমে এসেছে। ছৈয়দ নুর বলেন, ‘যে পরিমাণ মর্টার শেল ও গুলি বাংলাদেশের লোকালয়ে পড়েছে, এর কড়া প্রতিবাদ হওয়া দরকার। মিয়ানমারের অভ্যন্তরের সমস্যা, সেটি তাদের বিষয়। এতে আমরা বাংলাদেশের মানুষ কেন ভুগব?’