বধ্যভূমিতে কোনো স্মৃতিস্তম্ভ নেই। সেই জমিতে কলার চাষ করা হচ্ছে। গতকাল গাইবান্ধা শহরের শাহ আবদুল হামিদ স্টেডিয়াম মাঠের দক্ষিণ পাশে
বধ্যভূমিতে কোনো স্মৃতিস্তম্ভ নেই। সেই জমিতে কলার চাষ করা হচ্ছে। গতকাল গাইবান্ধা শহরের শাহ আবদুল হামিদ স্টেডিয়াম মাঠের দক্ষিণ পাশে

গাইবান্ধা

বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নেই, জমিতে কলার চাষ

গাইবান্ধার শাহ আবদুল হামিদ স্টেডিয়াম মাঠের দক্ষিণ পাশের জায়গায় চারদিকে ইটের প্রাচীর। ভেতরের জমিতে কলা চাষ করা হয়েছে। আগাছায় ভরে গেছে। পাশে পরিত্যক্ত একটি পুরোনো আধা পাকা ভবন। কিছুদিন আগেও সেখানে গবাদিপশু পালন করা হতো। শহরের আদর্শ কলেজ রোডের এই স্থান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বধ্যভূমি। তবে স্থানটি সংরক্ষণে উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ধরে রাখতে কাজ করছে গাইবান্ধা জেলা বধ্যভূমি সংরক্ষণ কমিটি। ওই কমিটি সূত্রে জানা যায়, একাত্তরে পাকিস্তানি সেনারা গাইবান্ধা শহরে তৎকালীন হেলাল পার্কে (বর্তমানে শাহ আবদুল হামিদ স্টেডিয়াম) ঘাঁটি বানায়। এখানে তারা হত্যাযজ্ঞ ও নারী নির্যাতন চালায়। হত্যার পর লোকজনকে মাটিচাপা দিয়ে রাখত। স্বাধীনতার পর এই বধ্যভূমিতে কাপড়চোপড় ও হাড়গোড় পাওয়া যায়। তবে বধ্যভূমিতে ঠিক কতজনকে মাটিতে পুঁতে রাখা হয়েছে, তার কোনো সঠিক হিসাব পাওয়া যায়নি।

জেলা বধ্যভূমি সংরক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক জি এম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এই বধ্যভূমিতে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার পর এখন পর্যন্ত সরকার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তবে কমিটির পক্ষ থেকে প্রতিবছর ২৫ মার্চ রাতে মোমবাতি জ্বালিয়ে বধ্যভূমিতে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।

এ বিষয়ে গাইবান্ধা পৌরসভার মেয়র মতলুবর রহমান বলেন, ‘স্টেডিয়াম মাঠের দক্ষিণ পাশের বধ্যভূমির জায়গাটি ব্যক্তিমালিকানাধীন। তাই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা যাচ্ছে না। তবে এখানে বধ্যভূমির স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণসহ শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার।

এ জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ প্রক্রিয়াধীন। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতে একটি রিট হওয়ার কথা শুনেছি। এর ফলে জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া থেমে আছে।’

এ প্রসঙ্গে জেলা বধ্যভূমি সংরক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক আরও বলেন, ২০১০ সালে সরকার দেশের সব বধ্যভূমি সংরক্ষণের জন্য স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। এ জন্য একটি প্রকল্পও গ্রহণ করা হয়। কিন্তু স্টেডিয়াম মাঠের দক্ষিণ পাশে বধ্যভূমির জায়গায় আইটি সেন্টার নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়। তাই বধ্যভূমি সংরক্ষণ কমিটির পক্ষ থেকে আইটি সেন্টার নির্মাণের পরিকল্পনা বাতিল করে সেখানে আগের প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য উচ্চ আদালতে রিট করা হয়। মামলাটি চলমান।

তবে জমির মালিকপক্ষের দাবি, স্টেডিয়াম মাঠের দক্ষিণ পাশের জায়গায় নয়, স্টেডিয়ামের জায়গায় বধ্যভূমি হওয়ার কথা।

এদিকে পাকিস্তানি সেনারা হত্যার পর এই বধ্যভূমিতে যাঁদের লাশ পুঁতে রেখেছিল, তাঁদের পরিবার ও আত্মীয়স্বজন এখন স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছেন। হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা শুনে এখনো তাঁরা আহাজারি করেন। পাকিস্তানি সেনাদের হাতে নিহত পরেশ নাথ প্রসাদের বাড়ি গাইবান্ধা শহরের কলেজ রোডে। পরেশ নাথ প্রসাদের এক ছেলে, দুই মেয়ে। ছেলে গৌতম প্রসাদের চায়ের দোকান রয়েছে। তিনি বলেন, ‘মায়ের কাছে গল্প শুনেছি, পাকিস্তানি সেনাদের ভয়ে আমার বাবা জেলা শহরের অদূরে রামচন্দ্রপুর ঠাকুরবাড়ি গ্রামে সুরেন চন্দ্র রায়ের বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন। সেখান থেকে ১৯৭১ সালের ২৪ এপ্রিল দিনের বেলা আমার বাবাকে হেলাল পার্কে তাদের ক্যাম্পে ধরে এনে গুলি করে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনারা। পরে তাঁকে মাটিচাপা দিয়ে রাখা হয়।’