ভর্তুকিতে ‘অনিয়মের’ খোঁজ নিতে কৃষি অফিসে গিয়ে চেয়ারম্যানের হামলার শিকার ৪ ইউপি সদস্য

চুয়াডাঙ্গা জেলার মানচিত্র
চুয়াডাঙ্গা জেলার মানচিত্র

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার বেলগাছি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান ওরফে চঞ্চলের বিরুদ্ধে চার ইউপি সদস্যকে মারপিটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কৃষকদের বিভিন্ন ভর্তুকিতে ‘অনিয়মের’ খোঁজ নিতে উপজেলা কৃষি অফিসে যাওয়ায় এ হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী ইউপি সদস্যদের। তবে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা অসহযোগিতার অভিযোগ করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান।

গতকাল সোমবার দুপরে এ ঘটনায় চার ইউপি সদস্য জেলা প্রশাসক কিসিঞ্জার চাকমার সঙ্গে দেখা করে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। হামলায় আহত ইউপি সদস্যরা হলেন ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ঠান্ডু মণ্ডল, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের শামীম রেজা, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের শাহাদাত হোসেন ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের হারুন মণ্ডল। এর মধ্যে ঠান্ডু মণ্ডলের ডান হাত ভেঙে গেছে। তাঁরা চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

জেলা প্রশাসক কিসিঞ্জার চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, চার ইউপি সদস্য গতকাল সন্ধ্যায় উপস্থিত হয়ে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মারপিটের লিখিত অভিযোগ করেছেন। আহত ইউপি সদস্যদের আলমডাঙ্গা থানায় এজাহার দিতে বলা হয়েছে। তাঁদের দেওয়া অভিযোগ তদন্তসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা প্রশাসকের কাছে দেওয়া লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, বেলগাছি ইউপি নির্বাচনের পর থেকে টানা ২১ মাস ধরে চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান এককভাবে পরিষদ চালাচ্ছেন। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হওয়ার পরও ইউপি সদস্যদের মানসিকসহ বিভিন্নভাবে নির্যাতন চালিয়ে আসছেন। ইউপি সদস্যদের সব সেবামূলক কাজ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। নিয়ম থাকলেও ইউনিয়ন পরিষদের কোনো মাসিক সভা হয় না। সচিবও কোনো নোটিশ পাঠান না। পরিষদে যেসব সরকারি অনুদান, সরকারি ভর্তুকি আসে, তা–ও জানানো হয় না। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ইউপি সদস্যরা কোনো ভাতা পাননি। চেয়ারম্যান তাঁর অনুসারী দলীয় কর্মীদের নিয়ে কাজ করেন। কৃষি ভর্তুকি এলাকার প্রকৃত কৃষকেরা না পাওয়ার বিষয়ে জানতে গতকাল ইউপি সদস্যরা উপজেলা কৃষি অফিসে গেলে চেয়ারম্যান ও তাঁর গাড়িচালক সাবেক ইউপি সদস্য বিপ্লবসহ লোকজন নিয়ে হামলা চালানো হয়।

হামলায় আহত ইউপি সদস্য শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গত ২১ মাসে সরকারের কৃষি ভর্তুকি হিসেবে যেসব বীজ, সার, কীটনাশক ও টাকা দেওয়া হয়েছে, এলাকার প্রকৃত কৃষকদের কেউই তা পাননি। চেয়ারম্যান ও তাঁর অনুসারীরা মিলে ভাগবাঁটোয়ারা করে নিয়েছেন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান জানাননি। সচিবের কাছে কয়েক দিন ধরে জানতে চাইলে তিনি নানা টালবাহানা করছেন। এ জন্য গতকাল উপজেলা কৃষি অফিসে যান। খবর পেয়ে চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান ও তাঁর গাড়ির চালকসহ অনুসারী লোকজন তাঁদের মারধর করেন। এতে ঠান্ডু মেম্বারের ডান হাত ভেঙে যায়। তাঁরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

মারধরের অভিযোগ সঠিক নয় দাবি করে ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ওই চার সদস্য দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম থেকেই অসহযোগিতা করেছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন দপ্তরে কাল্পনিক অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করছেন। আজ মঙ্গলবার ইউনিয়ন পরিষদে কৃষি ভর্তুকির বিষয়ে সভা আহ্বান করা হয়েছে। তার আগে ওই চারজন কৃষি অফিসে গিয়ে প্রণোদনার হিসাব চান এবং কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। এমন খবর পেয়ে তিনি সেখানে যান এবং কথা বলতে গেলে তর্কবিতর্ক সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে ইউপি সদস্য শামীম রেজা তাঁর শার্টের কলার ধরে টানাটানি করলে আশপাশে থাকা শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে তাঁদের ধাক্কাধাক্কি হয়।

আলমডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কুমার নাথ প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলা পরিষদ চত্বরে কৃষি অফিসের সামনে এই মারপিটের ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছেন। থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ বা মামলা করেনি। মামলা করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।