ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার পর উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। কমিটি ঘোষণার দ্বিতীয় দিনেও বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান নিচ্ছেন নতুন কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা ‘পদবঞ্চিত’নেতা-কর্মীরা। আজ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কয়েকটি মোটরসাইকেলে করে তাঁরা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন।
এদিকে নতুন কমিটি ঘোষণার ৩৮ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল গালিব ক্যাম্পাসে আসেননি। কবে আসবেন, সে বিষয়ে জানতে ফোন দেওয়া হলেও তাঁরা ফোন ধরেননি।
একটি সূত্র জানিয়েছে, নতুন কমিটির শীর্ষ দুই নেতা ঢাকায় অবস্থান করছেন। গতকাল রোববার রাতে তাঁরা ঢাকায় রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, তাঁর স্ত্রী রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শাহীন আকতার, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের সঙ্গে দেখা করে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। সাক্ষাতের ছবি নতুন কমিটির সভাপতি–সাধারণ সম্পাদকের সমর্থকেরা ফেসবুকে দিয়েছেন।
‘পদবঞ্চিত’ নেতা–কর্মীরা গতকাল ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে ঘোষণা দিয়েছিলেন, আজ সকাল ১০টার দিকে তাঁরা আবারও ক্যাম্পাসে অবস্থান নেবেন। নতুন কমিটির সভাপতি–সাধারণ সম্পাদককে ক্যাম্পাসে ঢুকতে না দেওয়ার ঘোষণাও দেন তাঁরা। তবে দুপুর ১২টার পর ক্যাম্পাসে আসেন ছাত্রলীগের এই অংশের নেতা–কর্মীরা।
কাঙ্ক্ষিত পদ না পাওয়া নতুন কমিটির সহসভাপতি শাহিনুল ইসলাম সরকার বলেন, তাঁরা তাঁদের অবস্থানে অনড় আছেন। ধীরে ধীরে ক্যাম্পাসে তাঁদের অনুসারী নেতা-কর্মী বাড়তে থাকবে। আরেক সহসভাপতি তাওহীদুল ইসলাম বলেন, কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ক্যাম্পাসে আসবেন না বলেই তাঁরা একটু ঢিলেঢালায় আছেন। ক্যাম্পাসে তাঁদের প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। ইতিমধ্যে ৩৬ ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে।
এদিকে আজ বেলা সাড়ে ১১টার পর পুলিশের কয়েকটি গাড়ি ক্যাম্পাসে এসেছে। মহানগর পুলিশের মতিহার জোনের উপকমিশনার (ডিসি) মধুসুদন রায়, অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) একরামুল হক, মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিনসহ পুলিশ সদস্যদের ক্যাম্পাসে দেখা গেছে। ওসি রুহুল আমিন বলেন, রুটিন দায়িত্বের অংশ হিসেবেই তাঁরা ক্যাম্পাসে আছেন।
মোস্তাফিজুর রহমানকে সভাপতি ও আসাদুল্লা-হিল গালিবকে সাধারণ সম্পাদক করে গত শনিবার রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় কমিটি। আগামী এক বছরের জন্য অনুমোদিত এই আংশিক কমিটিতে ২০ জনকে সহসভাপতি করা হয়েছে। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আছেন আটজন। সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পেয়েছেন নয়জন। তাঁদের মধ্যে অন্তত চারজনের নিয়মিত ছাত্রত্ব নেই। শিক্ষার্থী নির্যাতন, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আছে অন্তত সাতজনের বিরুদ্ধে।
কাঙ্ক্ষিত পদ না পেয়ে সংগঠনের একাংশের নেতা–কর্মীরা গতকাল সকাল ১০টার দিকে ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে নতুন কমিটিকে ‘অবাঞ্ছিত ঘোষণা’ করেন। ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দলীয় টেন্টে দিনভর তাঁদের অবস্থান ছিল।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মাদার বখশ হলে নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল গালিবের দখলে থাকা কক্ষে ভাঙচুর চালান পদবঞ্চিত নেতারা। দুপুরের দিকে সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের এক সমর্থককে ক্যাম্পাসে মারধর ও ধাওয়া দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। এরপর গতকাল সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথাও ছিল। কিন্তু সভাপতিসহ দলবল ক্যাম্পাসে আসার খবরে বিভিন্ন জায়গায় ‘বঞ্চিতরা’ অবস্থান নেন। সন্ধ্যা থেকে শুরু করে রাতভর তাঁরা ক্যাম্পাসে মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া ও সন্ধ্যায় চারটি আবাসিক হলের সামনে ককটেল ফাটিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দেন।