কিছুটা স্বস্তি নিয়ে রাত পার করেছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালীর মিয়ানমার সীমান্তঘেঁষা গ্রামের লোকজন। কয়েক ঘণ্টা পরপর এক-দুটি গুলির শব্দ ভেসে এলেও ভারী গোলাবর্ষণ হয়নি গতকাল মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল আটটা পর্যন্ত। আতঙ্ক থাকলেও আজ সকাল থেকে সাধারণ মানুষকে রাস্তাঘাটে দেখা যাচ্ছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি ও উখিয়া সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের তুমব্রু রাইট ক্যাম্প ও ঢেঁকিবনিয়া সীমান্তচৌকি দখলকে ঘিরে গত শনিবার দিবাগত রাত তিনটা থেকে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) গোলাগুলি শুরু হয়। তুমব্রু রাইট ক্যাম্প দখলের পর গত রোববার রাত ১১টার দিকে ঢেঁকিবনিয়া সীমান্তচৌকি দখলে নিতে হামলা শুরু করে আরাকান আর্মি। তাদের হামলা ঠেকাতে না পেরে প্রাণে বাঁচতে দেশটির সেনাবাহিনী, সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি), পুলিশ, ইমিগ্রেশনসহ বিভিন্ন সংস্থার ২৬৪ সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, তাঁরা শুনেছেন, গতকাল মঙ্গলবার ঢেঁকিবনিয়া সীমান্তচৌকি দখল করে নিয়েছে আরকান আর্মি। ফলে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে গুলির শব্দ কমে এসেছে। কয়েক ঘণ্টা পরপর এক-দুটি গুলির শব্দ শোনা গেলেও ছিল না ভারী গোলাবর্ষণের আওয়াজ। মিয়ানমারে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর ঘুমধুম ও পালংখালীর ১৩টি গ্রামের মানুষ আতঙ্ক আর ভয় নিয়ে দিন কাটাচ্ছে। গোলাগুলি কমায় এখন কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছে তারা।
ঘুমধুম ইউনিয়নের মণ্ডল পাড়ার অবস্থান মিয়ানমারের ঢেঁকিবনিয়া সীমান্তচৌকির খুব কাছে। এ গ্রামের তৌহিদুল ইসলাম (৪২) প্রথম আলোকে বলেন, গত রোববার থেকে পরিবারের সদস্যরা টেকনাফের হোয়াইক্ষ্যংয়ে আত্মীয়ের বাড়িতে অবস্থান করছেন। জীবনের ভয় থাকলেও গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি ফেলে তিনি যাননি। গতকাল রাত থেকে গুলির খুব কম শব্দ পেয়েছেন তিনি। এতে তাঁর স্বস্তি লাগছে।
আজ সকাল সাড়ে আটটায় ঘুমধুমের বেতবুনিয়া বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ৫০-৬০টি দোকানের মধ্যে বেশির ভাগ দোকান খুলেছে। মানুষ চায়ের দোকানগুলোতে আড্ডা দিচ্ছেন। তরকারির দোকানগুলোতে ভিড় বাড়ছে। কয়েক দিন ধরে এই বাজারের মাত্র কয়েকটি দোকান খোলা থাকত। বেতবুনিয়া বাজার থেকে জলপাইতলী-তুমব্রু সড়কে ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চলাচল আগের চেয়ে বেশি দেখা গেছে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন মিয়ানমার সীমান্তঘেঁষা ঘুমধুমের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেন। উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
গতকাল রাত আটটার দিকে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ১৩৭ নারী-পুরুষ ও শিশু আশ্রয় নিয়েছেন। ঘুমধুমের ইউপি সদস্য দিল মোহাম্মদ ভুট্টো তাঁদের খাবার দিচ্ছেন। দিল মোহাম্মদ বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে তাঁদের খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আশ্রিত মানুষের সংখ্যা এত কম কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত সোমবার বিকেলে জলপাইতলীতে মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলে দুজন নিহত হওয়ার পর অনেকে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে চলে গেছেন। কিছু বাড়িতে পুরুষ সদস্যরা থেকে গেছেন।
উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে গুলির শব্দ কমেছে। তবে এলাকার মানুষজন এখনো আতঙ্কে আছে। সীমান্তের মানুষের অতীতের অভিজ্ঞতা ভালো না। টানা ১২ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর আবারও সংঘর্ষ শুরু হয় তাদের মধ্যে।
উখিয়া সীমান্তের রহমতের বিল এলাকার গিয়াস উদ্দিন (৬০) বলেন, মিয়ানমারের ভেতরে বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠী আছে। এর মধ্যে আরকান আর্মি, আরএসও এবং আল ইয়াকিন নামে বিভক্ত তারা। আরকান আর্মির সঙ্গে সরকারি বাহিনীর যুদ্ধ শেষ হলেও নানা কারণে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে গোলাগুলি হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।