ব্লগার অনন্ত হত্যার ৮ বছর, স্থায়ীভাবে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ না করায় ক্ষোভ

অনন্ত বিজয় হত্যার অষ্টম বার্ষিকীতে অনন্ত স্মরণ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে নগরের সুবিদবাজার নুরানি আবাসিক এলাকায়
 ছবি: প্রথম আলো

সিলেটের বিজ্ঞানলেখক ও ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ (৩২) হত্যার অষ্টম বার্ষিকীতে অনন্ত স্মরণ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। আজ শুক্রবার দুপুরে নগরের সুবিদবাজার নুরানি আবাসিক এলাকার চৌরাস্তার মোড়ে দস্তিদার দিঘিরপাড়ে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

অনন্ত বিজয়কে যেখানে হত্যা করা হয়েছে, সেখানে সিলেট সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের আশ্বাস দেওয়া স্থায়ী ‘অনন্ত স্মৃতিস্তম্ভ’ নির্মাণ না করায় বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

২০১৫ সালের ১২ মে সকালে সিলেট শহরের নিজ বাসা থেকে বেরোনোর পর নুরানি আবাসিক এলাকার চৌরাস্তার মোড়ে খুন হন অনন্ত বিজয়। পেশায় ব্যাংকার অনন্ত বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখির পাশাপাশি ‘যুক্তি’ নামে বিজ্ঞানবিষয়ক একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। গত ৩০ মার্চ অনন্ত হত্যা মামলায় চার আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

অনন্ত হত্যার প্রথম বার্ষিকীতে এলাকাবাসীর সহায়তায় প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী প্রয়াত মঈনুদ্দিন আহমদ জালালের ব্যবস্থাপনায় ঘটনাস্থলে অস্থায়ীভাবে নির্মিত হয়েছিল একটি দেয়াল স্মৃতিস্তম্ভ। অরূপ বাউলের নকশা করা ‘জ্ঞানের জ্যোতি ছড়াবে অনন্ত, অনন্তকাল’ শীর্ষক এ স্মৃতিস্তম্ভে এর পর থেকে প্রতিবছরই অনন্ত হত্যার দিনে তাঁকে স্মরণ করে শ্রদ্ধা জানিয়ে আসছে এলাকাবাসী।

আজ দুপুরে অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় বক্তারা বলেন, ‘অনন্ত বিজয় হত্যার পর থেকে স্থানটিতে একটি স্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবি জানানো হচ্ছে। সিটি করপোরেশন থেকে বারবার এ বিষয়ে আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এটা দুঃখজনক। এতে আমরা ক্ষুব্ধ। দ্রুত অনন্ত স্মরণে স্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করতে হবে।’

গণজাগরণ মঞ্চ সিলেটের মুখপাত্র দেবাশীষ দেবুর সঞ্চালনায় স্মরণসভায় বক্তারা আরও বলেন, ‘অনন্ত বিজয় হত্যার রায়ে সন্দেহভাজন একজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। এ রায়ে অসন্তোষের কথা জানিয়েছে তাঁর পরিবার। আমরা রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করার জন্য রাষ্ট্রের কাছে দাবি জানাই। একই সঙ্গে রায় দ্রুত কার্যকর করতে হবে।’

এ সময় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন (সিরাজ), শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাজিয়া চৌধুরী, অনন্ত বিজয়ের ভগ্নিপতি সমর বিজয় শেখর, পরিবেশ আন্দোলনের সংগঠক আবদুল করিম চৌধুরী ও তোফাজ্জল সোহেল, অনন্ত বিজয়ের মামলার আইনজীবী মনির উদ্দিন আহমদ, যুব ইউনিয়নের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিউর রহমান, সংস্কৃতিকর্মী রিপন চৌধুরী, বাসদ নেতা প্রণব জ্যোতি পাল, সাম্যবাদী আন্দোলনের নেতা নিরঞ্জন সরকার, অনন্ত বিজয়ের বন্ধু আবুল কাশেম, নাট্যকর্মী অরুপ বাউল, উজ্জ্বল চক্রবর্তী, গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক রাজীব রাসেল, দেবজ্যোতি দাস, শহিদুজ্জামান পাপলু, সিলেট জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নাহিদ হাসান, সাবেক সভাপতি সপ্ত দাস, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল সিলেটের সাধারণ সম্পাদক তানজিনা বেগম প্রমুখ।

আলোচনা পর্ব শেষে গণজাগরণ মঞ্চ সিলেট, ছাত্র ইউনিয়ন, যুব ইউনিয়ন, নগরনাটসহ বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তির পক্ষ থেকে অনন্ত বিজয়ের অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এর কিছুক্ষণ পর এসে সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেট স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। এ সময় সংগঠনটির পরিচালক অনুপ কুমার দেব, সভাপতি রজতকান্তি গুপ্ত, সহসভাপতি সুপ্রিয় দেব শান্ত, সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।