ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অচলাবস্থা দূর করে আদালতে ফিরেছেন আইনজীবীরা। আজ রোববার সকাল থেকে দুই বিচারকের আদালত বাদে জেলার বাকি সব আদালতে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আদালতের কর্মচারী ও আইনজীবীদের মধ্যে ফিরেছে কর্মচাঞ্চল্য। টানা কয়েক দিনের অচলাবস্থার পর আদালতে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হওয়ায় খুশি বিচারপ্রার্থীরা।
তবে আইনজীবীরা জেলার সব আদালতে গেলেও জেলা জজ শারমিন নিগার এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের-১-এর বিচারক (জেলা জজ) মোহাম্মদ ফারুকের আদালতে যাননি। তাঁরা ওই দুই বিচারকের আদালত প্রত্যাহার অব্যাহত রেখেছেন এবং ২৪ জানুয়ারির মধ্যে তাঁদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে বদলি ও নাজিরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আলটিমেটাম দিয়েছেন।
এর আগে ৫ থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত আইনজীবীদের ৬ কার্যদিবস কর্মবিরতি ও ৪ জানুয়ারি বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের কর্মবিরতির কারণে জেলার প্রায় দেড় লাখ বিচারপ্রার্থী দুর্ভোগে পড়েন। বিচার পেতে প্রতিদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে আসেন ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষ।
আদালত সূত্রে জানা যায়, আজ সকালে আদালতে আসেন আইনজীবীরা। তাঁদের সঙ্গে বিচারপ্রার্থীরাও আদালতে আসতে থাকেন। সকালে জেলা জজ আদালত ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়। আইনজীবীরা সব আদালতে যান। তবে জেলা জজ শারমিন নিগার ও বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের আদালতে যাননি।
কয়েকজন আইনজীবী জানান, সকালে জেলা জজ শারমিন নিগারের খাস কামরায় বিচারকেরা বৈঠক করেন। তবে কী বিষয় নিয়ে তাঁরা বৈঠক করেছেন, সে ব্যাপারে কিছুই জানা যায়নি। সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে আদালতে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিভিন্ন আদালতে বিচারিক কার্যক্রম চলছে। আইনজীবীদের কর্মবিরতির কারণে সব আদালতে মামলার চাপ বেড়েছে। আদালতে কর্মচাঞ্চল্য বেড়েছে।
বিচারপ্রার্থী বিজয়নগর উপজেলার শাহানা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘একাধিকবার আদালতে তাঁদের ফিরে যেতে হয়েছে। আজ মামলার বিষয়ে আদালতে এসে বিচারকের দেখা পেলাম। অন্তত ভোগান্তিটা কমেছে।’
জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গত মঙ্গল ও শুক্রবার রাতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে তাঁদের বৈঠক হয়। তিনি দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে আইনজীবীদের আদালতে ফিরে যেতে বলেছেন। গতকাল সাধারণ সভা করে আইনজীবীদের আদালতে ফিরে যেতে বলা হয়েছে। তবে জেলা জজ শারমিন নিগার ও মোহাম্মদ ফারুকের আদালতে যাবেন না তাঁরা। ২৪ জানুয়ারির মধ্যে দুই বিচারককে বদলি ও নাজিরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
আইনজীবী সমিতির সভাপতি তানভীর ভূঞা বলেন, ২৪ জানুয়ারি সমিতির সাধারণ সভা হবে। এর মধ্যে যদি জেলা জজ শারমিন নিগার, বিচারক মোহাম্মদ ফারুককে বদলিসহ নাজিরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে সব আদালতে আবার কর্মবিরতি ঘোষণা করা হবে।
শীতকালীন ছুটির আগে ১ ডিসেম্বর আদালতের শেষ কার্যদিবস ছিল। ওই দিন তিনটি মামলা না নেওয়ায় ১ জানুয়ারি বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের আদালত বর্জন করেন আইনজীবীরা। এরপর ২ জানুয়ারি বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের সঙ্গে আইনজীবীদের বাদানুবাদের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ৫ জানুয়ারি আইনজীবীরা তিন কার্যদিবসের কর্মবিরতির ডাক দেন। ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ছয় কার্যদিবস কর্মবিরতি পালন করেন তাঁরা। এর আগে ৪ জানুয়ারি এক দিনের কর্মবিরতি পালন করে জেলা বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন। এতে আদালতে অচলাবস্থার তৈরি হয়।