এক সপ্তাহের ব্যবধানে বগুড়ায় বিভিন্ন সবজির দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে বগুড়া শহরের কলোনী বাজারে
এক সপ্তাহের ব্যবধানে বগুড়ায় বিভিন্ন সবজির দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে বগুড়া শহরের কলোনী বাজারে

উৎপাদন এলাকা বগুড়ায় এক সপ্তাহে সবজির দাম প্রায় দ্বিগুণ, মরিচের কেজি ৪০০

উৎপাদন এলাকা বগুড়ায় সব ধরনের সবজির দাম হঠাৎ লাফিয়ে বাড়ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি পর্যায়ে সবজির দাম গড়ে দ্বিগুণ বেড়েছে। শীতকালীন সবজি উঠতে শুরু করলেও খুচরা বাজারে চড়া সব ধরনের সবজির দাম। অধিকাংশ সবজির দাম এখন শতক ছাড়িয়েছে। খুচরা পর্যায়ে এক কেজি দেশি কাঁচা মরিচ আজ বৃহস্পতিবার ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

বিক্রেতা ও পাইকারেরা বলছেন, বর্ষার কারণে কৃষকের খেতে সবজি নষ্ট হয়েছে। এতে সবজির উৎপাদন বিপর্যয় ঘটেছে। হাটে সবজির সরবরাহ হ্রাস পাওয়ায় পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। তবে ক্রেতারা বলছেন, সরকারের বাজার তদারকি না থাকায় অতিরিক্ত মুনাফার সুযোগ নিচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। পাইকারি পর্যায়ের চেয়ে অনেক বেশি দামে সবজি কিনতে হচ্ছে খুচরা ক্রেতাদের।

সবজির অন্যতম পাইকারি মোকাম বগুড়ার মহাস্থান হাট। পাইকারি এই হাট থেকে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ছাড়াও সারা দেশের সবজির অন্যতম সরবরাহস্থল এই হাট। বৃহস্পতিবার এ হাটে এক কেজি করলা বিক্রি হয়েছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়। হাটে পটোল বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা দরে। এ ছাড়া হাইব্রিড শসা প্রতি কেজি ৫০ টাকা, দেশি শসা ৭০, কাকরোল ৬৫ টাকা, বেগুন ৭০ টাকা, কচুমুখি ৫০ টাকা, মুলা ৫০ টাকা ও ঢ্যাঁড়স ৬৫ টাকা ও পেঁপে ৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। লাউ প্রতিটি ৬০ টাকা ও মিষ্টিকুমড়া প্রতি কেজি ৪৮ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। কাঁচা মরিচের কেজি ছিল ২৯০ টাকা।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক সপ্তাহ আগে মহাস্থান হাটে পাইকারি পর্যায়ে এক কেজি কাঁচামরিচ ১৪০, করলা ৫০, পটোল ২৫ টাকা, হাইব্রিড শসা ৩০ টাকা, দেশি শসা ৪০ টাকা, কাকরোল ৩০ টাকা, বেগুন ৩০ টাকা, কচুমুখি ৩০ টাকা, মুলা ২৫ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৩০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা, লাউ প্রতিটি ৪০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

হাটে মরিচ বিক্রি করতে আসা চাষি আশরাফ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতবার এই হাটত ১০০ টেকা কেজি দামেও কাঁচা পত্তা (মরিচ) বেচপার পরিনি। সেই পত্তা এইবার ২৯০ টেকা কেজি দরে বেচ্চি।’ বেগুন বিক্রি করতে আসা মোকামতলা এলাকার কৃষক শাহজাহান আলী বলেন, বৃষ্টিতে সবজিখেত প্রতিবছরই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এবারও কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তবে উৎপাদনে খুব বেশি বিপর্যয় ঘটেনি। মূলত বাজার নিয়ন্ত্রণহীন। মাছ, মাংস, ডিম, আলু—সব জিনিসের দাম চড়া। এ কারণে সবজির দামও চড়া।

মহাস্থান হাটের সবজির পাইকারি ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বৃষ্টিতে সবজিখেত নষ্ট হয়েছে। এ কারণে হাটে সবজির সরবরাহ হ্রাস পেয়েছে। এতে সব ধরনের সবজির দামও বেড়েছে। অন্য বছরের বর্ষাকালেই শীতকালীন সবজিতে হাট ভরপুর হয়ে উঠত। এবার মুলা ও লাউ ছাড়া শীতকালীন সবজির তেমন সরবরাহ নেই। ফলে সবজির দাম তুলনামূলকভাবে চড়া। গত বছর এ সময়ে হাটে সবজির সরবরাহ ছিল গড়ে প্রতিদিন ২০ ট্রাক। অথচ এবার গড়ে প্রতিদিন সবজির সরবরাহ মিলছে ১০ ট্রাক। হাটে সবজির সরবরাহ অর্ধেকে নেমেছে।

সরবরাহ কম থাকায় সবজির দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। আজ বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে বগুড়া শহরের কলোনী বাজারে

এদিকে বগুড়া শহরের ফতেহ আলী বাজারে খুচরা পর্যায়ে পাইকারি বাজারের চেয়ে দেড় থেকে দুই গুণ বেশি দরে বিক্রি হয়েছে। এ বাজারে বৃহস্পতিবার এক কেজি কাঁচা মরিচ ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মরিচের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সব ধরনের সবজির দাম। প্রতি কেজি দেশি শসা ১০০ টাকা, হাইব্রিড শসা ৮০ টাকা, কাকরোল ১০০ টাকা, পটোল ৮০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, বেগুন ১৪০ টাকা, কচুমুখি ৭০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৮০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। প্রতিটি লাউ গড়ে ৮০ টাকা ও মিষ্টিকুমড়া ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে।

এক সপ্তাহে আগে ফতেহ আলী বাজারে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি দেশি শসা ৫০ টাকা, কাকরোল ৪০ টাকা, পটোল ৩০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, বেগুন ৫০ টাকা, কচুমুখি ৫০ টাকা, মুলা ৪০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৪০ টাকা ও পেঁপে ৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতিটি লাউ বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকায়। কাঁচা মরিচের দাম ছিল ১৮০ টাকা কেজি।

বৃহস্পতিবার বিকেলে ফতেহ আলী সবজি বাজারের একটি দোকানে এক কেজি কাঁচা মরিচের দাম জানতে চান একজন ক্রেতা। ৪০০ টাকা কেজি দাম চেয়ে বিক্রেতা বলেন, ‘দাম করা চলবি না, পত্তের (মরিচ) দামে আগুন।’ দাম শুনে ক্ষুব্ধ ক্রেতা আবু সুফিয়ান বলেন, ‘এক কেজি কাঁচা মরিচের দাম ৪০০। বেগুনের কেজি ১৪০। শসার কেজি ১০০। গরুর গোস্ত ৭৫০ টেকা। ইলিশের কেজি ২০০০। বাজারে সব জিনিসের দাম নিয়ন্ত্রণহীন। বাজার নিয়ন্ত্রণে কারও কোনো নজর নেই।’

ফতেহ আলী বাজারে কাঁচা মরিচ কিনতে এসেছিলেন শহরের চেলেপাড়া এলাকার গৃহিণী অনিমা রায়। তিনি বলেন, শারদীয় পূজায় রান্নার আয়োজন বেড়েছে। এ সুযোগে নারকেল, গুড়, ইলিশের দাম হঠাৎ বেড়েছে। এখন কাঁচা মরিচ ও সবজির দামেও আগুন। এক শর নিচে বেশির ভাগ সবজি পাওয়া যাচ্ছে না।

ফতেহ আলী বাজারের খুচরা বিক্রেতা মতিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বৃষ্টিতে খেতের ক্ষতি হওয়ায় বাজারে সবজির সরবরাহ কমেছে। এতে সব সবজির দাম বেড়েছে। বুধবার খুচরা পর্যায়ে এক কেজি কাঁচা মরিচ ৩২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেই কাঁচা মরিচের দাম বৃহস্পতিবার ৪০০ থেকে ৪২০ টাকা কেজিতে উঠেছে।

রাজাবাজার ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পরিমল প্রসাদ প্রথম আলোকে বলেন, কাঁচা পণ্যের দাম নির্ভরশীল সরবরাহব্যবস্থার ওপর। বৃষ্টির কারণে বাজারে দেশি কাঁচা মরিচের সরবরাহ হঠাৎ কমেছে। এ ছাড়া শারদীয় দুর্গোৎসব ও সাপ্তাহিক ছুটির কারণে শুল্ক বন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বিদেশে থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি বন্ধ হয়েছে। ফলে সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে কাঁচা মরিচের দাম কিছুটা বেড়েছে। পূজার ছুটির পর বিদেশ থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি কার্যক্রম শুরু হলে দামও কমে আসবে