ছাত্রলীগের সাবেক নেতা–কর্মীদের নিয়ে দপ্তরে প্রবেশের সময় শিক্ষক সমিতির নেতারা বাধা দেন। এ সময় উপাচার্য ও নেতা–কর্মীদের সঙ্গে সমিতির নেতাদের ধস্তাধস্তি ও ধাক্কাধাক্কি হয়। রোববার দুপুরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে
ছাত্রলীগের সাবেক নেতা–কর্মীদের নিয়ে দপ্তরে প্রবেশের সময় শিক্ষক সমিতির নেতারা বাধা দেন। এ সময় উপাচার্য ও নেতা–কর্মীদের সঙ্গে সমিতির নেতাদের ধস্তাধস্তি ও ধাক্কাধাক্কি হয়। রোববার দুপুরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের নিয়ে দপ্তরে উপাচার্য, শিক্ষকদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি

সাত দফা দাবিতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন করছেন শিক্ষক সমিতির নেতারা। দাবি আদায়ে উপাচার্যের দপ্তরে তালা দিয়ে আজ রোববার দুপুরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন তাঁরা। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের এনে নিজ দপ্তরে প্রবেশ করেছেন উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈন।

এ সময় শিক্ষকদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ধস্তাধস্তি ও হাতাহাতি হয়। উপাচার্যকেও কনুই দিয়ে ধাক্কাধাক্কি করতে দেখা যায়। আজ বেলা একটার দিকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

শিক্ষক সমিতির সাত দফা দাবির প্রধান দাবি হলো, ১৯ ফেব্রুয়ারি উপাচার্যের দপ্তরে শিক্ষকদের ওপর হামলার নেতৃত্ব দেওয়া কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার ও ঘটনার তদন্ত করা। পাশাপাশি হামলায় মদদ দেওয়া প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকীকে অপসারণ করা।

এ ঘটনার জন্য শিক্ষক সমিতির নেতাদের দায়ী করেছেন উপাচার্য। অন্যদিকে সমিতির নেতারা উপাচার্যকে দায়ী করে বলেছেন, বহিরাগতদের ক্যাম্পাসে এনে শিক্ষকদের ওপর হামলা করেছেন উপাচার্য।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সাত দফা দাবি আদায়ে আজ দুপুরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষক সমিতির নেতারা। তখন উপাচার্যপন্থী একদল শিক্ষক ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের নিয়ে প্রশাসনিক ভবনে যান। তাঁরা উপাচার্যের কক্ষের তালা খোলেন এবং প্রশাসনিক ভবনের প্রবেশপথে এসে উপাচার্যকে নিয়ে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করেন। তখন শিক্ষক সমিতির নেতারা তাঁদের বাধা দেন। এ সময় শিক্ষকদের ওপর ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে অতর্কিতভাবে হামলা করেন ওই নেতা–কর্মীরা। এ–সংক্রান্ত ভিডিও ফুটেজ প্রথম আলোর কাছে এসেছে।

ওই ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈন বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মুর্শেদ রায়হানকে কনুই দিয়ে ধাক্কা দেন। এ সময় মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোকাদ্দেস-উল-ইসলাম হামলার শিকার হন। হামলায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক দুলাল চন্দ্র নন্দী ও লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস। ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আমিনুর রহমান বিশ্বাস ও পার্থ সরকারকে তাঁদের ধাক্কা দিতে দেখা যায়। এ ছাড়া অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামিমুল ইসলামকে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা বিপ্লব দাস ও আমিনুর রহমান বিশ্বাস ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেন।

এ ব্যাপারে ছাত্রলীগ নেতা আমিনুর রহমান বিশ্বাসের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সবাই সবাইকে ধাক্কা দিয়েছে।’

এদিকে বিকেল পাঁচটায় প্রশাসনিক ভবনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈন। সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান, মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুর্শেদ রায়হানসহ শিক্ষক সমিতির ৮-১০ জন তিনিসহ অন্য সাধারণ শিক্ষকদের ওপর হামলা করেন। এ সময়ে সেখানে কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা–কর্মী আহত হন।

সংবাদ সম্মেলনে আহত ব্যক্তিদের পরিচয় জানতে চাইলে উপাচার্য কারও নাম বলতে পারেননি। উপাচার্য আরও বলেন, ‘এখনো আলোচনার পথ খোলা আছে। তাঁদের সাত দফার মধ্যে চার দফা দাবি ইতিমধ্যে মেনে নেওয়া হয়েছে।’

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এভাবে বহিরাগত, অছাত্র এনে শিক্ষকদের ওপর হামলা নজিরবিহীন। উনি (উপাচার্য) নিজেই বহিরাগতদের এনে হামলায় অংশ নেন। ভিডিও ফুটেজে উপাচার্যের কুনই দিয়ে ধাক্কার বিষয়টি দেখা যাচ্ছে। আগামীকাল সোমবার সাধারণ সভায় এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

শিক্ষক সমিতির সাত দফা দাবির মধ্যে প্রধান দাবি হলো, ১৯ ফেব্রুয়ারি উপাচার্যের দপ্তরে শিক্ষকদের ওপর হামলার নেতৃত্ব দেওয়া কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার ও ঘটনার তদন্ত করা। পাশাপাশি হামলায় মদদ দেওয়া প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকীকে অপসারণ করা।

অন্য দাবিগুলোর মধ্যে আছে ঢাকার অতিথিশালা শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য অবমুক্ত করা; অধ্যাপক গ্রেড ১ ও ২-তে আবেদন করা শিক্ষকদের পদোন্নতির ব্যবস্থা করা; কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী বিভাগীয় প্রধান ও ডিন নিয়োগ এবং ইতিমধ্যে বেআইনিভাবে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের প্রত্যাহার করা; শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতি স্থায়ীকরণে আইনবহির্ভূত শর্তারোপ করে জ্যেষ্ঠতা ক্ষুণ্নের বিষয়টি নিষ্পত্তি করা; ৯০তম সিন্ডিকেট সভায় বিতর্কিত শিক্ষাছুটি নীতিমালা প্রত্যাহার করে আগের নীতিমালা বহাল এবং ৮৬তম সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদিত স্থায়ীকরণ সিদ্ধান্ত বাতিল করা।