চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগের একাংশ। গতকাল সোমবার বিকেলে নির্বাচনী প্রচারণার প্রথম দিনেই বিএনএমের প্রার্থী সাবেক বিএনপির নেতা আবদুল মতিনের সভায় অংশ নিয়েছেন তাঁরা। সেখানে ‘নোঙর’ (বিএনএমের প্রতীক) দিয়ে নৌকা আটকানোর ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের এক নেতা।
গতকাল বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার দ্বারিয়াপুর মহল্লায় বিএনএমের প্রার্থী আবদুল মতিনের পক্ষে সভা হয়। সেখানে বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গোলাম রাব্বানী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মোখলেসুর রহমান, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুর রহমান, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল জলিল, জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আল কামাল ইব্রাহীম প্রমুখ।
সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মোখলেসুর রহমানের দেওয়া বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে তিনি বলেন, ‘আজকের এ সভায় সবার নৌকার কথা বলার কথা। কিন্তু কেউ কি নৌকার কথা বলেছে? অথচ মঞ্চে যে লোকগুলোকে দেখছেন, তারা সবাই আওয়ামী লীগের লোক। নৌকার কথা কেউ বলছে না।’ নৌকা প্রতীক নিয়ে নিজের মেয়র নির্বাচিত হওয়ার কথা উল্লেখ করে মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নৌকা দিয়েছে, তাই যে পাস হয়ে যাবে? গতবার ভোট ছিল উপনির্বাচনে এক রকম, জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে অন্য রকম। কেউ যদি জোর করে হাত দিয়ে ভোট নিতে চায়, সে হাত ভেঙে ফেলা হবে।’
মোখলেসুর রহমান সভায় আরও বলেন, ‘এই এমপি (আবদুল ওদুদ) ২০০৮ সালে নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১৪ সালে বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১৮ সালে ফেল করেছেন। ২০২৩ সালে আবার উপনির্বাচনে আপনি বিজয়ী হয়েছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষকে শুধু যন্ত্রণা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী আপনাকে নৌকা দিয়েছেন। নৌকা চলার মতো পানি এখন নাই। ইনশাল্লাহ, আমরা নোঙর দিয়ে আটকে রাখব এবার।’
৭ জানুয়ারি নোঙরের বিজয় মিছিল করার আশাবাদ জানিয়ে মোখলেসুর রহমান আরও বলেন, ‘আবদুল ওদুদ সাহেব, আপনি কোথায় পালিয়ে যাবেন, আমরা দেখব। মানুষকে আপনি অনেক জ্বালিয়েছেন, তার প্রতিবাদ আমরা করব। তার ফলাফলও আপনি পাবেন ৭ তারিখের পর।’ তিনি আরও বলেন, ‘কেউ যদি জোর করে ভোট নিতে চায় তার ব্যবস্থা আমরা করব। পুলিশ প্রশাসন আছে, র্যাব আছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আছে। কেউ যদি আপনার ভোট জোর করে নিতে চায় সঙ্গে সঙ্গে জানাবেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আমরাও ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
বিএনএম প্রার্থীর পক্ষে নামার বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের একজন উপজেলা সভাপতি। আমার উচিত বিশেষ একটি প্রতীকের পক্ষে কথা বলা। কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ, এবার আপনারা ভালো লোককে ভোট দেন। সৎ লোককে ভোট দেন। যেন শেখ হাসিনা বিশ্বকে দেখাতে পারেন, বাংলাদেশে সুষ্ঠু ভোট হয়। জনগণ ভোট দেয় এবং আমার নেতৃত্বে বাংলাদেশ চলে।’
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবদুল ওদুদ বলেন, ‘দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে দাঁড়ালেও তবু কথা ছিল। কিন্তু এটা প্রকাশ্যে অন্য দলের প্রার্থীর পক্ষে সভা করে ভোট চাওয়া। এটা দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কী হতে পারে। বিষয়টি কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ও প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করব।’
উল্লেখ্য, গত ১৯ এপ্রিল সাবেক যুবলীগ নেতা ও আবদুল ওদুদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত খাইরুল আলমকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। এই হত্যা মামলায় প্রধান আসামি মোখলেসুর রহমান কয়েক মাস কারাগারে থাকার পর জামিনে মুক্ত হয়েছেন। হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই আবদুল ওদুদের সঙ্গে মোখলেসুরের দ্বন্দ্ব তীব্র হয় বলে জানিয়েছেন দলের নেতারা।