সাপের কামড়ে সাঁথিয়ার শামুকজানি গ্রামের জাহেদ আলী মারা যান। তাঁর বাড়িতে স্বজন ও এলাকাবাসীর ভিড়
সাপের কামড়ে সাঁথিয়ার শামুকজানি গ্রামের জাহেদ আলী মারা যান। তাঁর বাড়িতে স্বজন ও এলাকাবাসীর ভিড়

সাপে কাটার পর ওঝার বাড়িতে দৌড়ঝাঁপ, হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলায় মাছ ধরতে গিয়ে জালে প্যাঁচানো বিষধর সাপের কামড়ে জাহেদ আলী খাঁ (৬৫) নামের এক মৎস্যজীবীর মৃত্যু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ভোরে পাবনা সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।

এর আগে গতকাল বুধবার রাত আটটার দিকে জাহেদ আলীকে সাপে কাটলে স্বজনেরা তাঁকে দুজন ওঝার বাড়িতে নিয়ে ঝাড়ফুঁক দেওয়ান। পরে অবস্থার অবনতি হলে প্রথমে বেলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। জাহেদ আলী খাঁ উপজেলার করমজা ইউনিয়নের শামুকজানি গ্রামের বাসিন্দা। তিনি কৃষিকাজ করার পাশাপাশি মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

স্বজন ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যার পর বাড়ির পাশে কাগেশ্বরী নদীতে খরাজালে মাছ ধরছিলেন জাহেদ আলী। রাত আটটার দিকে জালের সঙ্গে একটি সাপ পেঁচিয়ে যায়। সাপটি ছাড়াতে গেলে হঠাৎ সেটি তাঁর হাতে কামড় দেয়। বিষয়টি স্বজনদের জানালে তাঁকে প্রথমে বেড়া উপজেলার চাকলা ইউনিয়নের পাঁচুড়িয়া গ্রামের বেল্লাল হোসেন নামের এক ওঝার বাড়িতে নিয়ে যান স্বজনেরা। ওঝা ঝাড়ফুঁক দিয়ে বিষ নেমে গেছে জানালে স্বজনেরা বাড়িতে চলে আসেন।

স্বজনেরা জানান, রাত সাড়ে ১১টার আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন জাহেদ আলী। এরপর স্বজনেরা তাঁকে আরেক কবিরাজের বাড়িতে নিয়ে যান। কিন্তু কবিরাজ অপারগতা প্রকাশ করলে তাঁকে বেড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসক দ্রুত তাঁকে পাবনা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। ভোরে সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে জাহেদ আলী মারা যান।

মৃত জাহেদ আলীর ভাগনে ইলিয়াস খাঁ প্রথম আলোকে বলেন, সাপে কামড় দেওয়ার বিষয়টি জানার পর মামাকে প্রথমে কবিরাজের বাড়িতে না নিয়ে হাসপাতালে নেওয়া উচিত ছিল বলে তিনি জানান।

করমজা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলী বাগচী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মাছ ধরতে গিয়ে জাহেদ আলী সাপের কামড়ে মারা যান।

এদিকে সাপটি জাহেদ আলীকে কামড় দেওয়ার পর সেটিকে জীবিত অবস্থাতেই আটক করেন এলাকাবাসী। সাপটিকে কেউ চিনতে না পারায় আজ সকাল ১০টার দিকে সেটির একটি ছবি তুলে রাজশাহী বিভাগীয় বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বন্য প্রাণী পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবিরের কাছে পাঠানো হয়। তিনি সেটিকে ‘কালাচ সাপ’ বলে নিশ্চিত করেছেন।

জাহাঙ্গীর কবির বলেন, কালাচ সাপ অত্যন্ত বিষধর। এ সাপ কামড় দিলে তেমন জ্বালা-যন্ত্রণা হয় না। এমনকি অনেক সময় মানুষ বুঝতেই পারে না যে সাপে কেটেছে। তবে সময়মতো হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দিলে আক্রান্ত ব্যক্তি বেঁচে যেতে পারেন। বিষধর যেকোনো সাপ কামড়ালে ওঝার কাছে না নিয়ে তিনি দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।