ঢাকার সাভারে ২০২১ সালে মাহমুদুর রহমান নামে দাফন করা লাশটি বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীর কি না, তা নিশ্চিত হতে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামিরা তানজিন চৌধুরীর এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের নির্দেশে আজ বুধবার সকালে লাশটি উত্তোলন করেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সদস্যরা। এ সময় সামিরা তানজিনসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সাভার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্টেট এস এম রাসেল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসারে হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামিরা তানজিন চৌধুরীর এক রিট পিটিশনের আদেশের আলোকে ফরেনসিক বিভাগ, সিআইডি, স্থানীয় সরকার সচিবের প্রতিনিধি, জেলা রেজিস্ট্রারের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মরদেহটি কবর থেকে তোলা হয়।
হারিছ চৌধুরী বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব ছিলেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্টেট এস এম রাসেল ইসলাম বলেন, লাশটি তোলার পর মরদেহের ডিএনএ পরীক্ষা করার জন্য নমুনা সংগ্রহ করেছে সিআইডি। ডিএনএ পরীক্ষার পর মরদেহটি হারিছ চৌধুরীর কি না, সেটি নিশ্চিত হওয়া যাবে। নিশ্চিত হওয়ার পর তিনি যেহেতু বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, তাই তাঁকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা গার্ড অব অনার প্রদান করাসহ তাঁকে দাফনের বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ততক্ষণ মরদেহটি সংরক্ষণের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হবে।
আজ সকাল ১০টার দিকে সাভারের বিরুলিয়ায় জামিয়া খাতামুন্নাবিয়্যীন মাদ্রাসায় গিয়ে দেখা যায়, মাদ্রাসার কবরাস্থানের একটি অংশে খোঁড়া হচ্ছে। সেখানে পুলিশ ও জনপ্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, হারিছ চৌধুরীর পরিবারের সদস্য ও মাদ্রাসার শিক্ষকেরা উপস্থিত রয়েছেন। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে লাশটি কবর থেকে তোলা হয়। পরে মরদেহের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে সিআইডি। পরে মরদেহটি সংরক্ষণের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
লাশ উত্তোলনের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামিরা তানজিন চৌধুরী বলেন, এক–এগারোর পর তাঁর বাবা আত্মগোপনে চলে যান। তিনি দেশ ছেড়ে যাননি। তিনি দেশ ছেড়ে কোথাও যাবেন না আবার নিজের পরিচয় নিয়ে দেশে থাকার মতো পরিবেশও ছিল না, এ জন্য তিনি বাধ্য হয়ে পরিচয় পরিবর্তন করেন। মাহমুদুর রহমান নামে তাঁর একটি জাতীয় পরিচয়পত্র ছিল। তাঁর পাসপোর্টে ওমরা করার জন্য ভিসা লাগানো ছিল, তবুও তিনি দেশ ছাড়েননি।
সামিরা তানজিন বলেন, ‘২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর বাবা মারা যাওয়ার পর আমি কখনোই তাঁর পরিচয় গোপন করিনি। যখনই কেউ জিজ্ঞাসা করেছে, আমি বলেছি, সাভারে দাফন করা মাহমুদুর রহমান নামের ব্যক্তি আমার বাবা হারিছ চৌধুরী এবং তিনি বাংলাদেশেই মারা গেছেন। বাবা মারা যাওয়ার পর দাদাবাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে ওই সময়ের স্বৈরাচারী সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে বাধা দেওয়ায় বাধ্য হয়ে সাভারে কবর দেওয়া হয়।’
সামিরা তানজিন আরও বলেন, ‘সাভারের ওই মাদ্রাসার সুরা সদস্য আমার বড় মামা। মামা ও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের সহায়তায় মাহমুদুর রহমান নামে বাবাকে মাদ্রাসার কবরাস্থানে দাফন করা হয়। এরপর আমি নিজে গোয়েন্দা সংস্থার কাছে বাবার মৃত্যুর বিষয়টি জানিয়েছিলাম। আমার বাবার মৃত্যুর সনদ দেওয়া হয়নি আমাকে। বাবার মৃত্যু নিয়ে ধূম্রজাল থাকতে পারে না।’
হারিছ চৌধুরীর জানাজা পড়ান মাওলানা আশিকুর রহমান কাশেমী। তিনি বলেন, ২০২১ সালের ওই দিন বাদ আসর তিনি নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন। তখন করোনার পরিবেশ ছিল। তাঁরা অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান হিসেবে মরদেহ দাফন করেন। এখন পর্যন্ত তাঁকে অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান হিসেবেই জানেন।
বিরুলিয়া ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য সামাদ মোল্লা বলেন, এখানে অনেকেই কবরের জন্য জমি নেন। এটা অন্যের নামে বরাদ্দ ছিল। মাহমুদুর রহমানের আত্মীয়রা কবরের জন্য জায়গা লাগবে জানালে অপর একজনের বরাদ্দ করা জমি তাঁদের দেওয়া হয়। এলাকাবাসী বা মাদ্রাসার কেউ জানতেন না, এটি হারিছ চৌধুরীর মরদেহ।