কক্সবাজারের বিমানবন্দর দিয়ে গতকাল রোববার থেকে রাতের বেলায় কক্সবাজার-ঢাকা রুটে উড়োজাহাজের চলাচল শুরু হয়েছে। তাতে দেশি-বিদেশি পর্যটকেরা রাতে সমুদ্র ছুঁয়ে রানওয়েতে নামার দৃশ্য উপভোগের সুযোগ পাচ্ছেন। আগে সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে ফ্লাইট ওঠানামা করত। এখন রাত ১০টা পর্যন্ত যাত্রীবাহী ফ্লাইট ওঠানামার সুযোগ করে দিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ-বেবিচক। নতুন সুবিধা কার্যকর হওয়ায় পর্যটকেরা ঢাকা থেকে সকালে কক্সবাজার পৌঁছে সমুদ্রসৈকতসহ দর্শনীয় স্থানে ঘুরেফিরে রাতের ফ্লাইটে ঢাকায় ফিরে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। তাতে পর্যটনের প্রসার ঘটবে।
গতকাল দুপুরে বিমানবন্দর ঘুরে দেখা গেছে, রাতের ফ্লাইট পরিচালনার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। বিকেল ৪টা পর্যন্ত ১২টি ফ্লাইট পরিচালিত হয়। গত শনিবার কক্সবাজার-ঢাকা রুটে পরিচালিত হয় ৪টি পরিবহন সংস্থার ১৭টি ফ্লাইট।
কক্সবাজার বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক গোলাম মোর্তুজা হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, রোববার থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিমানবন্দরের রানওয়ে উড়োজাহাজ ওঠানামার জন্য উন্মুক্ত রাখা হচ্ছে। রোববার রাত ১০টা পর্যন্ত বিভিন্ন পরিবহন সংস্থার ১৬টি ফ্লাইট কক্সবাজার-ঢাকা রুটে আসা–যাওয়া করেছে। গত শনিবার কক্সবাজার-ঢাকা রুটে ফ্লাইট পরিচালিত হয় ১৭টি। সে তুলনায় রোববার ফ্লাইট বাড়েনি জানিয়ে বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক গোলাম মোর্তুজা হোসাইন বলেন, পর্যটকের চাহিদা দেখে ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়ানো হবে। আগামী নভেম্বর থেকে শীত মৌসুম শুরু হচ্ছে, পর্যটকদের আগমনও বাড়বে। যাত্রীদের সুবিধার জন্যই রাত ১০টা পর্যন্ত উড়োজাহাজ চলাচলের নতুন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
বেবিচক সূত্র জানায়, রাত ১০টা পর্যন্ত বিমান ওঠানামার জন্য সব ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। ওয়াচ আওয়ার বাড়ানো, উন্নত প্রযুক্তি স্থাপন এবং পর্যটন অঞ্চলের উন্নয়নে দেশের বিমান খাতকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে নিরলসভাবে কাজ করছে বেবিচক।
রাত ১০টা পর্যন্ত বিমান চলাচলের এই পদক্ষেপ পর্যটনশিল্পে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে জানিয়ে কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, কক্সবাজারের পর্যটন দেশের অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। নতুন সময়সীমা বাড়ানোতে ফ্লাইটের সংখ্যাও বাড়বে। বিদেশি পর্যটকদের আগমন ঘটবে।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস এখন দিনে দুটি, কোনো দিন তিনটি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। বেসরকারি এয়ারলাইনস ইউএস বাংলা এখন কক্সবাজার-ঢাকা রুটে দিনে সাত থেকে আটটি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। নভো এয়ারের চার থেকে পাঁচটি ফ্লাইট পরিচালিত হচ্ছে। নতুন সময়সীমায় ফ্লাইটের সংখ্যা আরও বাড়বে।
কক্সবাজার বিমানবন্দরের ৯ হাজার ফুট দৈর্ঘ্যের রানওয়ের উত্তর দিকে বঙ্গোপসাগর চ্যানেল ভরাট করে আরও ১ হাজার ৭০০ ফুট সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। সম্প্রতি নতুন রানওয়ের নির্মাণকাজের ৮৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর নাগাদ অবশিষ্ট কাজ শেষ হলে দিবারাত্রি অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট (উড়োজাহাজ) ওঠানামা সম্ভব হবে।
গত ৩০ আগস্ট কক্সবাজার বিমানবন্দর পরিদর্শন করেন সিভিল অ্যাভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মনজুরুল কবির ভূঁইয়া। এ সময় তিনি রানওয়ে, লাইটিং সিস্টেম, প্রতিরক্ষা বাঁধ, যাত্রী টার্মিনালসহ বিভিন্ন উন্নয়নকাজ ঘুরে দেখেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমানে বিমানবন্দরের ৯ হাজার ফুট রানওয়ের প্রস্তুত আছে। আরও ১ হাজার ৭০০ ফুট রানওয়ে করা হয়েছে। সর্বমোট ১০ হাজার ৭০০ ফুট রানওয়ে হচ্ছে। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রানওয়ে হবে।
মনজুরুল কবির ভূঁইয়া বলেন, ঝিনুক আকৃতির এখন যে প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল নির্মাণ হচ্ছে, সেটি ভবিষ্যতে ডোমেস্টিক টার্মিনাল হয়ে যাবে। এটির কাজও ৯৩ শতাংশ শেষ হয়েছে। এখন ভেতরের কিছু কাজ বাকি আছে।
দেশের প্রথম সমুদ্রবক্ষের ওপর নির্মিতব্য এই রানওয়ের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা, যার পুরোটাই অর্থায়ন করছে বেবিচক। ২০২১ সালের ২৮ আগস্ট কক্সবাজার বিমানবন্দর রানওয়ে সমুদ্রে সম্প্রসারণ প্রকল্পের উদ্বোধন হয়।
বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক গোলাম মোর্তজা হোসাইন বলেন, কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ফ্লাইট পরিচালনার পাশাপাশি কক্সবাজার-যশোর রুটে চিংড়ির পোনা সরবরাহ করছে দুই থেকে তিনটি কার্গো বিমান।