বাকৃবিতে চারা বিতরণ

প্রতি গাছে মিলবে দেড় কেজি আলু, চাষ করা যাবে সারা বছর

সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে বাকৃবি উদ্ভাবিত ‘বাউ মিষ্টি আলু-৫’ জাতের চারা ময়মনসিংহের দেড় শ কৃষকের মধ্যে বিতরণ করা হয়। রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের কৌলিতত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের খামারে
ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের একদল গবেষক মিষ্টি আলুর উচ্চফলনশীল একটি জাত উদ্ভাবন করেছেন। ‘বাউ মিষ্টি আলু-৫’ নামের জাতটি সাধারণ আলুর চেয়ে তিন গুণ বেশি ফলনশীল। প্রতিটি গাছে মিলবে এক থেকে দেড় কেজি আলু। ৯০ দিনের মধ্যেই ফলন পাওয়া সম্ভব। চাষ করা যাবে সারা বছর।

মাঠপর্যায়ে সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে আজ রোববার ময়মনসিংহের দেড় শ কৃষকের মধ্যে উদ্ভাবিত জাতটির চারা বিতরণ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের খামারে ওই চারা বিতরণ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে গবেষক দলের নেতৃত্ব দেওয়া অধ্যাপক এ বি এম আরিফ হাসান খান বাউ মিষ্টি আলু-৫ সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন।

অধ্যাপক আরিফ হাসান বলেন, বাউ মিষ্টি আলু-৫ একটি উচ্চফলনশীল জাত। সাধারণ আলু যেখানে প্রতি হেক্টরে ১০ দশমিক ২৫ টন ফলন দেয়, সেখানে উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে জাতটি প্রতি হেক্টরে ৩০ টনের বেশি ফলন দিতে সক্ষম। বাউ মিষ্টি আলু-৫–এর প্রতিটি গাছ থেকে এক থেকে দেড় কেজি আলু পাওয়া যায়। ১০০ থেকে ১১০ দিন বয়সে সর্বোচ্চ ফলন দেয় জাতটি। সারা বছর চাষযোগ্য জাতটি রবি মৌসুমে বেশি ফলন দেয়।

কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক জি এইচ এম সাগরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক এমদাদুল হক চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেমের (বাউরেস) পরিচালক অধ্যাপক মাহফুজা বেগম, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) গবেষণা পরিচালক মো. আবদুল মালেক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খামারবাড়ির অতিরিক্ত পরিচালক সুশান্ত কুমার প্রামাণিক ও ইন্টারন্যাশনাল পটেটো সেন্টারের (সিআইপি) কান্ট্রি প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর দেবাশীষ চন্দ।

উপাচার্য অধ্যাপক এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, মিষ্টি আলুর পুষ্টিগুণ ভাতের তুলনায় অনেক বেশি। পুষ্টিবিদেরা সাধারণত ফল ও সবজি খাওয়ার পরামর্শ বেশি দিয়ে থাকেন। মিষ্টি আলু ফল ও সবজি উভয় হিসেবেই খাওয়া যায়। পুষ্টি বিবেচনায় মিষ্টি আলুতে শর্করার পরিমাণ ভাতের তুলনায় কম, আমিষের পরিমাণ বেশি। কোষ্ট্যকাঠিন্য দূর করতে আঁশজাতীয় খাবার দরকার, যেটি ফল ও সবজির মধ্যে আছে। প্রতি ১০০ গ্রাম আলুতে আঁশজাতীয় উপাদান ও ক্যালসিয়াম থাকে যথাক্রমে প্রায় ৩ ও ৩৮ গ্রাম।

উপাচার্য আরও বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের আচার-আচরণ ও স্বভাবে পরিবর্তন আনতে হবে। শুধু প্রযুক্তি বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্মার্ট দেখালে হবে না। আমাদের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। মাঝেমধ্যে ভাতের বিকল্প হিসেবে অন্য খাবার খেতে হবে। পুষ্টির উৎসে ভিন্নতা আনতে হবে। সেটি যদি অধিক পুষ্টিগুণসম্পন্ন আলু হয়, সেটি আরও ভালো।’