পোরশা উপজেলায় নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলন করেন তৌফিকুর রহমান শাহ্ চৌধুরী
পোরশা উপজেলায় নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলন করেন তৌফিকুর রহমান শাহ্ চৌধুরী

নওগাঁয় বিএনপি নেতার দাবি

জমি দখলের প্রকাশিত সংবাদ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন, সত্যতা পায়নি কেন্দ্রীয় কমিটি

নওগাঁর পোরশা উপজেলায় ১৩ কৃষকের জমি দখলের প্রকাশিত সংবাদ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি তৌফিকুর রহমান শাহ্ চৌধুরী। আজ মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার মিনাবাজারে নিজ বাসায় প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদে করা সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন।

তৌফিকুর রহমান শাহ্ চৌধুরী বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সত্যতা পায়নি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি। সংবাদ প্রকাশের পর বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক ওবায়দুর রহমান চন্দন সরেজমিনে এসে অভিযোগের কোনো সত্যতা পাননি।’

সংবাদ সম্মেলনে তৌফিকুর রহমান শাহ্ চৌধুরী বলেন, ‘সম্প্রতি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় আমার বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ তুলে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করে স্বার্থ হাসিলের জন্য উপজেলা বিএনপির একাংশের এক নেতা কতিপয় বর্গা কৃষককে দিয়ে থানায় জমি দখলের মিথ্যা অভিযোগ করিয়ে ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশ করিয়েছেন। প্রকাশিত ভিত্তিহীন সংবাদের আমি প্রতিবাদ জানাচ্ছি। রাজনৈতিক দলের প্রভাব খাটিয়ে আমি কারও জমি দখল করিনি; বরং গত ১৬ বছরে আমাদের ব্যক্তিমালিকানাধীন ৬৫ বিঘা ও ওয়াক্ফ এস্টেট করা ৪০০ বিঘা জমি দখল করে নিয়েছেন আওয়ামী লীগের লোকজন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরেও জমিগুলো পুনর্দখল করেননি। এখন জমি দখলের যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তার কোনো ভিত্তি নেই। বিএনপির রাজনীতি করায় একটি মহল আমার ব্যক্তিগত সুনাম ও দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য মিথ্যা তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করিয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে জমির দলিলপত্র দেখিয়ে তৌফিকুর রহমান শাহ্ চৌধুরী বলেন, ‘সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের সহচর সাব্বির হামজা চৌধুরী ৪০০ বিঘা ওয়াক্ফ সম্পত্তি ও আমাদের ব্যক্তিমালিকানাধীন ৬৫ বিঘা সম্পত্তি অবৈধভাবে দখল করে নেন। গত ৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর তাঁরা এলাকাছাড়া। দখল করা আবাদি জমিতে সাব্বির হামজার বর্গাদারেরা রোপা আমন ধান রোপণ করেছেন। ওই সব জমিতে আবাদ করা ধানগাছ অক্ষত অবস্থায় আছে। জমি পুনর্দখলের জন্য কোনো বর্গাদারকে আমি ও আমার লোকজন কোনো হুমকিধমকি দেয়নি। জমি দখলের যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তার কোনো ভিত্তিই নেই।’

তৌফিকুর রহমান শাহ্ চৌধুরী বলেন, ‘আমার বাবা আবদুল ওয়াহাব শাহ্ চৌধুরী পোরশা উপজেলা বিএনপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। দীর্ঘ সময় ধরে তিনি উপজেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাবার মৃত্যুর পর স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীদের নিয়ে আমি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশিত সব কর্মসূচি পালন করেছি। জেল–জুলুমের হুমকি মাথায় নিয়ে গত ১৬ বছর পোরশায় বিএনপির রাজনীতিতে সরব ছিলাম। এ জন্য অনেক অন্যায়-অত্যাচারের শিকার হয়েছি। ১৬ বছরে আমার বিরুদ্ধে ৫২টি মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলা হয়েছে। এর পরেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো আপস করিনি।’

নিজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে জানিয়ে তৌফিকুর রহমান শাহ্ চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হঠাৎ কিছু সুবিধাভোগী মানুষ বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। উপজেলা বিএনপির সভাপতি দাবি করা বিএনপির একাংশের এক নেতা আমার সুনাম ক্ষুণ্ন করার জন্য ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন। সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে জমি দখলের মিথ্যা অভিযোগ করে পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করিয়েছেন।’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক আজাহার আলী, উপজেলা বিএনপির (একাংশ) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক এহিয়া শাহ্, পোরশা উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক ইকবাল হাসান শাহ্ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

তৌফিকুর রহমান শাহ্ চৌধুরীর বিরুদ্ধে ৫৬ বিঘা জমি দখলের অভিযোগ তুলে উপজেলার তেঁতুলিয়া ও মর্শিদপুর ইউনিয়নের ১৩ কৃষক সম্প্রতি পৃথকভাবে পোরশা থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। সেই সব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ১৩ সেপ্টেম্বর প্রথম আলো অনলাইনে ‘নওগাঁয় বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে ১৩ কৃষকের ৫৬ বিঘা জমি দখলের অভিযোগ’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।