সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের বিরুদ্ধে জালজালিয়াতি করে রায় দেওয়া এবং রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা হয়েছে।
গতকাল রোববার রাতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা মডেল থানায় জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারী ভূঁইয়া বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় এ বি এম খায়রুল হককে একমাত্র আসামি করা হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আমীর খসরু মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, এ বি এম খায়রুল হক প্রধান বিচারপতি থাকাকালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করে আনা সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করা হয়। ওই মামলার শুনানির সময় সুপ্রিম কোর্টের খ্যাতিমান আট জ্যেষ্ঠ আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি নিযুক্ত করা হয়। তাঁরা হলেন সাবেক বিচারপতি টি এইচ খান, সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল রফিক-উল হক, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলাম, সংবিধান–বিশেষজ্ঞ এম এ জহির, সংবিধান প্রণেতা আমীরুল ইসলাম, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি রোকন উদ্দিন মাহমুদ ও আজমালুল হক কিউসি। আজমালুল হক কিউসি ছাড়া সবাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে মতামত দেন। তবে বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হক, বিচারপতি এস কে সিনহা ও বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের পক্ষে রায় দেন। অপর দিকে বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহাব মিঞা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা ও বিচারপতি ঈমান আলী তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে রায় দেন।
এই পরিস্থিতিতে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক সরকারের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের পক্ষে ভোট দেন। ফলে চার-তিনে মেজরিটি হয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতিদের সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ২০১১ সালের ১০ মে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায় হয়।
এজাহারে আরও বলা হয়, ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় ঘোষণার সময় প্রকাশ্য আদালতে এ বি এম খায়রুল হক পরবর্তী দুটি জাতীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে বলে উল্লেখ করেন। এই সংক্ষিপ্ত রায়ের ওপর ভিত্তি করে সরকার তড়িঘড়ি করে (২০১১ সালের ৩০ জুন) সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে।
মামলায় বাদী আরও উল্লেখ করেন, ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় দেওয়ার পরপরই সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক অবসরে চলে যান। অবসরে যাওয়ার প্রায় ১৬ মাস পরে তিনি পূর্ণাঙ্গ রায় জমা দেন। তাতে ক্ষমতাসীন দলের কর্তাব্যক্তিদের পরামর্শ ও ইন্ধনে যাতে এ বি এম খায়রুল হক পরবর্তী দুটি জাতীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে মর্মে (প্রকাশ্য আদালতে ঘোষিত রায়ে) কথাটি বাদ দেন। সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক প্রকাশ্য আদালতে দেওয়া রায়টি পরিবর্তন করে বিশ্বাসভঙ্গ, তঞ্চকতা, জালজালিয়াতি, রাষ্ট্রদ্রোহ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা ধ্বংসের ফৌজদারি অপরাধ করেছেন বলে মামলায় বাদী উল্লেখ করেন।