তেলাপিয়া মাছ চাষে আগ্রহ কমছে

  • ১ কেজি মাছের উৎপাদনে ব্যয় হচ্ছে মোট ১৬৭ টাকা। পাইকারি দাম পাওয়া যাচ্ছে ১৬০-১৭০ টাকা।

  • অভয়নগরে দুটি হ্যাচারি লোকসানে পড়ে বন্ধ।

মনোসেক্স তেলাপিয়া মাছ উৎপাদনে বিশেষ অবদান রাখায় যশোরের চাঁচড়া এলাকার হারুন অর রশীদ দুবার রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পেয়েছেন। সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তেলাপিয়া মাছ উৎপাদন করায় ২০১৩ ও ২০১৭ সালে তিনি পুরস্কার পান। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে তাঁর ২৫০ বিঘার ১৯টি পুকুরে ৫০ লাখ পোনা ছেড়েছিলেন। উৎপাদন হয়েছিল সাত লাখ কেজি তেলাপিয়া মাছ। তবে চলতি বছরে তিনি দুই লাখ তেলাপিয়া মাছের পোনা ছেড়েছেন।

মাছের খাবারসহ অন্যান্য উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি ও বেশি টাকা বিনিয়োগ করতে না পারায় হারুন অর রশীদ তেলাপিয়ার চাষ কমিয়ে দিয়েছেন। একই কারণে তাঁর মতো অনেক চাষি তেলাপিয়া মাছ উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। ফলে যশোরে মনোসেক্স তেলাপিয়া মাছ উৎপাদনে ভাটা পড়েছে। এই মাছের রেণু পোনা উৎপাদনের ৯টি হ্যাচারির বেশির ভাগ বন্ধের পথে।

মাছের খাবারসহ অন্যান্য উপকরণের দাম বেড়েছে। পোনা উৎপাদনের হ্যাচারিগুলো বন্ধের পথে।

যশোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে জেলায় ২ লাখ ৩১ হাজার ১৪৩ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়। এর মধ্যে তেলাপিয়া মাছের উৎপাদন ছিল ১৯ হাজার ৭১০ মেট্রিক টন। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ২ লাখ ৩২ হাজার ৭০৯ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়, যার মধ্যে তেলাপিয়া ছিল ১২ হাজার ২৬৩ মেট্রিক টন। এ ছাড়া তেলাপিয়া মাছের রেণু পোনা উৎপাদনের জন্য জেলায় ৯টি হ্যাচারি রয়েছে। প্রান্তিক পর্যায়ে তেলাপিয়া মাছের চাষ কমে গেছে। অভয়নগর উপজেলার দুইটি হ্যাচারি লোকসানে পড়ে এ বছর থেকে পোনা উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে।

অভয়নগর উপজেলার সুন্দরবন মৎস্য হ্যাচারির মালিক শরিফুজ্জামান ফারাজী বলেন, ‘করোনার পর থেকেই মাছ চাষের অবস্থা খারাপ। বিশেষ করে তেলাপিয়া মাছ চাষের অবস্থা বেশি নাজুক। এ বছর মৌসুমের শুরুর দিকে কিছু পোনা উৎপাদন করেছি। কিন্তু বিক্রি হয়নি। পোনাগুলো নষ্ট হয়েছে। এ জন্য হ্যাচারিতে আর পোনা উৎপাদন করব না।’

অভয়নগরের গাজী মনোসেক্স তেলাপিয়া হ্যাচারির মালিক ইমাদ উদ্দীন বলেন, ‘এ বছর ২০ হাজার তেলাপিয়ার পোনা উৎপাদন করেছিলাম। অর্ধেকের মতো বিক্রি হয়েছে। বাকি অর্ধেক নষ্ট হয়েছে। এতে দেড় লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ জন্য তেলাপিয়া পোনা উৎপাদন বন্ধ করে দিচ্ছি।’

জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ৮৮ হাজার ৭৬২ জন মাছচাষি রয়েছে। এর মধ্যে এককভাবে মনোসেক্স তেলাপিয়া মাছ চাষের সঙ্গে কতজন জড়িত, সে বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। যশোর শহরের চাঁচড়া এলাকার ভাই ভাই মৎস্য খামারের স্বত্বাধিকারী হারুন অর রশীদ ও চাঁচড়ার অগ্রগামী মৎস্য প্রকল্পের স্বত্বাধিকারী আনিসুর রহমান আগে শুধু মনোসেক্স তেলাপিয়া মাছের চাষই করতেন। এ বছর থেকে তারা মিশ্র মাছ চাষ শুরু করেছেন।

এ বিষয়ে হারুন অর রশীদ বলেন, এক কেজি মনোসেক্স তেলাপিয়া মাছ উৎপাদন করতে খাবার (রেডি ফিড) লাগে এক কেজি ৭০০ গ্রাম। যার দাম ১২৭ টাকা। এর সঙ্গে পুকুরের ইজারা মূল্য, ওষুধ, রাসায়নিক সার, বিদ্যুৎ ও শ্রমিকের খরচ পড়ে কেজিতে আরও ৪০ টাকা। ১ কেজি মাছের উৎপাদনে ব্যয় হচ্ছে মোট ১৬৭ টাকা। সেখানে ৩টি মাছে কেজি সাইজের ১ কেজি মাছের পাইকারি দাম পাওয়া যাচ্ছে ১৬০-১৭০ টাকা।

হারুণ অর রশীদ আরও বলেন, ১ কেজি ২০০ গ্রাম খাবার খাওয়ালে ১ কেজি মাছ পাওয়া যাবে বলে ফিড কোম্পানির পক্ষ থেকে যে প্রচার করা হচ্ছে, বাস্তবে তা হচ্ছে না। আরও আধা কেজি খাবার বেশি খাওয়াতে হচ্ছে। ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে কোয়ালিটি ফিড লিমিটেডের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মোহাম্মদ আবদুর রহিম বলেন, করোনা পরিস্থিতির পর থেকে মাছের খাবারের দাম কেজিতে ২০ শতাংশ বেড়েছে। কোম্পানি থেকে এখন বাকিতে খাবার বিক্রি কমানো হয়েছে। মাছ উৎপাদনের জন্য পুকুরে শুধু খাবার দেওয়াটাই শেষ কথা নয়। পুকুরের পানি ও মাটির গুণগত মান, অক্সিজেনের মাত্রা, খাবারের ব্যবহারবিধি ঠিকমতো অনুসরণ করতে হবে।