খায়রুল কবিরের কুশপুত্তলিকা দাহ করলেন ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতাদের সমর্থকেরা

নরসিংদীতে জেলা ছাত্রদলের কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করে পদবঞ্চিত নেতাদের সমর্থকেরা খায়রুল কবিরের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন। আজ বিকেলে জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

নরসিংদীতে জেলা ছাত্রদলের সদ্য ঘোষিত আংশিক কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করে পদবঞ্চিত নেতাদের সমর্থকেরা বিক্ষোভ সমাবেশ করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবিরের কুশপুত্তলিকা পুড়িয়েছেন। এ সময় নিজ কার্যালয়ে প্রবেশ করতে গেলে পুলিশ খায়রুল কবিরকে বাধা দেয়। এ সময় তিনিসহ দলীয় নেতা–কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। আজ সোমবার বিকেলে সদর উপজেলার চিনিশপুরের জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

ঢাকার ১০ জানুয়ারির সমাবেশ থেকে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর ১৬ দিনের কারাবাস শেষে গত বুধবার জামিনে মুক্তি পান খায়রুল কবির। পরদিন জেলা ছাত্রদলের পাঁচ সদস্যের আংশিক কমিটির অনুমোদন দেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ। দীর্ঘ ১২ বছর পর ঘোষিত কমিটিতে সিদ্দিকুর রহমানকে সভাপতি ও মেহেদী হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। অন্য তিনজন হলেন সিনিয়র সহসভাপতি মাইন উদ্দিন ভূঁইয়া, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক জোবায়ের আহমেদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক সজীব ভূঁইয়া।

এই কমিটির প্রতিবাদে পদবঞ্চিত নেতাদের ২০ থেকে ২৫ জন সমর্থক গত বৃহস্পতিবার রাত নয়টার দিকে জেলা বিএনপি কার্যালয়ে মিছিল নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে কার্যালয়ের প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। পরে কার্যালয়ের কলাপসিবল গেটের ফাঁক দিয়ে ভেতরে থাকা শতাধিক প্লাস্টিকের চেয়ারে আগুন লাগিয়ে দেন তাঁরা। এতে কার্যালয়ের ভেতরে থাকা ব্যানার, প্রচারপত্র ও ফেস্টুন পুড়ে যায়। এ সময় ইটপাটকেল ছুড়ে কার্যালয়টির জানালা ও সিঁড়ির গ্লাস ভাঙচুর করে তাঁরা চলে যান। স্থানীয় লোকজন ওই আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

বিএনপির নেতা–কর্মীরা বলেন, আজ সকাল থেকে খায়রুল কবির বিএনপির কার্যালয়ে অবস্থান করছিলেন। বেলা তিনটার দিকে খায়রুল কবিররের আসার খবরে পদবঞ্চিত ২০ থেকে ২৫ নেতা-কর্মী বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে যান। এ সময় খায়রুল কবিরকে উদ্দেশ করে ‘ছাত্রদলের কমিটি মানি না, মানব না’, ‘খোকনের চামড়া, তুলে নেব আমরা’, ‘জামাই-বৌয়ে মিললা, বিএনপি খাইলো গিললা’, ‘ধরি ধরি ধরি না, ধরলে কিন্তু ছাড়ি না’, ‘জ্বালোরে জ্বালো, আগুন জ্বালো’, ‘টাকা দিয়ে কমিটি, মানি না মানবো না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন তাঁরা। পরে পুলিশ তাঁদের সরিলে দিলে তিতাস গ্যাস রোডে লাঠিসোঁটাসহ অবস্থান নেন ও খায়রুল কবিরের কুশপুত্তলিকা পুড়িয়ে দেন।

একই সময়ে খায়রুল কবিরসহ নেতা–কর্মীরা কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করতে গেলে নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম ভূঁইয়ার নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক পুলিশ সদস্য বাধা দেন। এ সময় খায়রুল কবিরসহ বিএনপির নেতা–কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে কার্যালয়ে প্রবেশ করতে না পেরে খায়রুল কবির ঢাকায় ফিরে যান।

বিএনপি ও ছাত্রদলের একাধিক নেতা–কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সদ্য ঘোষিত জেলা ছাত্রদলের আংশিক কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি মাইন উদ্দিন ভূঁইয়া সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ছিলেন। প্রত্যাশিত পদ না পাওয়ায় তাঁর সমর্থকেরাই কমিটি ঘোষণার পর জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটান। এর পর থেকেই কয়েক দিন ধরে ধারাবাহিকভাবে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে আসছেন তাঁরা। আজ বিকেলে খায়রুল কবিরের কুশপুত্তলিকা পুড়ানোর অভিযোগও তাঁদেরই বিরুদ্ধে।

জানতে চাইলে মাইন উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘আমি জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব ছিলাম। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতেও সাধারণ সম্পাদক পদ পাব, এ বিশ্বাস আমার ছিল। কিন্তু সেই আমাকে পদবঞ্চিত করে সাধারণ সম্পাদক পদ দেওয়া হয়েছে এমন একজনকে, যার সেভাবে কোনো অ্যাকটিভিটি নেই। সাধারণ সম্পাদক পদ না দিয়ে আমাকে সিনিয়র সহসভাপতি করে অপমান করা হয়েছে। বিষয়টি মানতে না পেরেই আমাদের সমর্থকেরা এ বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন।’

মাইন উদ্দিন ভূঁইয়া আরও বলেন, ‘দলীয় কর্মসূচিতে সক্রিয় থাকায় এ পর্যন্ত ৩১টি মামলা দেওয়া হয়েছে আমার বিরুদ্ধে। এসব মামলায় জেল খেটেছি অন্তত ২০ বার। অথচ যাঁকে সাধারণ সম্পাদক পদ দেওয়া হয়েছে, তাঁর পরিচয় জেলার একজন বড় নেতার ভাতিজা তিনি।’

জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির বলেন, ‘কেন্দ্র যাদের ভালো মনে করেছে, তাদের কমিটিতে রেখেছে। এ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে আমার ভূমিকা না থাকার পরও পদবঞ্চিত নেতাদের সমর্থকেরা দলীয় কার্যালয় ও আমার বাসায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। যারা এসব সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করছে, তাদের বিরুদ্ধে আমি লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও পুলিশ মামলা নিচ্ছে না, তাদের গ্রেপ্তারও করছে না। উল্টো আমাকেই কার্যালয়ে ঢুকতে দিচ্ছে না পুলিশ।’

ওসি আবুল কাশেম ভূঁইয়া বলেন, ‘জেলা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতাদের বিক্ষোভ মিছিলে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে আমরা অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছি। জেলা বিএনপি কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আমরা কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে মামলা নেওয়া হবে, আসামিও গ্রেপ্তার করা হবে।’

জেলা ছাত্রদলের সর্বশেষ কমিটি ঘোষিত হয়েছিল ২০১১ সালের ৫ আগস্ট। ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট ওই কমিটির সভাপতি ছিলেন মো. নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আবদুর রউফ ফকির।