ইদ্রিস আলী (৪৩) পেশায় একজন সংবাদপত্র হকার। ২৭ বছর ধরে প্রতিদিন কাকডাকা ভোরে সাইকেলে খবরের কাগজ নিয়ে পাঠকের হাতে পৌঁছে দিয়ে আসছেন। মাঝেমধ্যে পাঠককে জানিয়েও দেন ওই দিনের পত্রিকার বিশেষ প্রতিবেদনগুলোর কথা। সেই ইদ্রিস কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে দুই মাস ধরে শয্যাশায়ী। আয়ের পথ বন্ধ হওয়ায় একদিকে চিকিৎসা চালাতে পারছেন না, অন্যদিকে সংসার চালাতে হিমশিম অবস্থায় পড়েছেন।
ইদ্রিসের বাড়ি দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের হড়হড়িয়া গ্রামে। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ৫ শতক জমিতে আধা পাকা বাড়ি। স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে চারজনের সংসার। বড় মেয়ে ইরিন আক্তার (১৭) এবার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। ইরিন বাক্প্রতিবন্ধী। ছোট মেয়ে ইয়াসমিন (১০) পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সে শারীরিক প্রতিবন্ধী। অসুস্থ হওয়ার পর থেকে সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে ইদ্রিসের। ইতিমধ্যে বাড়িতে থাকা তিনটি গরু বাছুরসহ বিক্রি করে সেই টাকা চিকিৎসার কাজে ব্যয় করেছেন।
ইদ্রিস আলী জানান, গত বছরের জুলাইয়ে হঠাৎ তাঁর শরীর ফুলে যেতে শুরু করে। সেই সঙ্গে রক্তচাপ বেড়ে যায়। কাউকে চিনতে পারছিলেন না। পরে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন। সেই সময় জানতে পারেন, তাঁর একটি কিডনির সমস্যা আছে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেয়ে কিছুদিন সুস্থ ছিলেন। সর্বশেষ গত ৮ ফেব্রুয়ারি আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। স্বজনেরা তাঁকে নিয়ে যান রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কিডনি বিশেষজ্ঞ সুশান্ত কুমার বর্মণ জানান, ইদ্রিসের দুটি কিডনিতেই সমস্যা। শিগগিরই ডায়ালাইসিস শুরু করার পরামর্শ দেন তিনি। তবে এখনো ডায়ালাইসিস শুরু করতে পারেননি ইদ্রিস।
ইদ্রিস বলেন, ডায়ালাইসিস শুরু করার আগে একটা অস্ত্রোপচার করতে হয়। সেখানে খরচ পড়বে ২০-২৫ হাজার টাকা। এই টাকা এখনো জোগাড় করতে পারেননি দেখে ডায়ালাইসিস শুরু করা যায়নি।
গরু বিক্রির টাকা শেষ হওয়ার পর কয়েক দিন আগে স্থানীয় একজন কিছু আর্থিক সহায়তা করেছেন উল্লেখ করে ইদ্রিসের স্ত্রী রাবিয়া বেগম বলেন, ‘তিনটি গরুই দুধ দিচ্ছে। প্রতিদিন সাড়ে তিন কেজি দুধ বিক্রি করছি। দুধ দেওয়া শেষ হলে যিনি গরুগুলো কিনেছেন, তিনি নিয়ে যাবেন। দুই মেয়েকে নিয়ে কী যে করব, কোথায় যাব, ভেবে পাচ্ছি না। চোখের সামনে মানুষটা এভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে।’
পত্রিকার হকার ইদ্রিস আলী তাঁর চিকিৎসার জন্য সমাজের বিত্তবানদের কাছে আর্থিক সহায়তার আবেদন জানিয়েছেন। আর্থিক সহায়তা পাঠানো যাবে ইদ্রিস আলীর মুঠোফোনে। বিকাশ নম্বর—০১৭৩৭৬৮১৯৫৪।