কাশিমপুর কারাগারের শৌচাগার থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির লাশ উদ্ধার

গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার
ফাইল ছবি

গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত এক কয়েদির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শনিবার ভোররাত সাড়ে তিনটার দিকে কারাগারের একটি টয়লেটে ঝুলন্ত অবস্থায় তাঁকে পাওয়া যায়। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর ভোর পৌনে পাঁচটার দিকে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

ওই কয়েদির নাম আমিরুল ইসলাম ওরফে রাশেদউদ্দীন (৩৪)। তিনি নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার মধ্যম চেঙ্গা গ্রামের নুরুল ইসলাম চৌকিদারের ছেলে। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের একটি মামলায় তাঁর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়।

কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, কারাগারের বিছানার চাদরের অংশ দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন আমিরুল ইসলাম। এ ঘটনায় চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাত কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

কারাগার সূত্রে জানা গেছে, আজ ভোররাত সাড়ে তিনটার দিকে কারাগারের ভেতরে থাকা টয়লেটের ভেন্টিলেটরে ঝুলন্ত অবস্থায় আমিরুলের লাশ দেখতে পান কয়েদিরা। তাঁরা বিষয়টি কারারক্ষীদের জানালে আমিরুলকে কারাগারের হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাঁকে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ভোর পৌনে পাঁচটার দিকে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক রফিকুল ইসলাম বলেন, আমিরুল ইসলামকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর তাঁর মৃত্যুর সঠিক কারণ বলা যাবে।

আমিরুল ইসলামকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের একটি মামলায় ২০১১ সালের ১৩ নভেম্বর নোয়াখালী জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। সেখান থাকা অবস্থায় ২০১৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর নোয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক তাঁকে মৃত্যুদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দেন। পরে তাঁকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ২০১৫ সালের ২১ আগস্ট আমিরুল ইসলামকে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়।

আমিরুল ইসলামের বোনের স্বামী মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে আমিরুলের কয়েক দিন আগেও ফোনে কথা হয়েছে। তখন তাঁর মধ্যে কোনো চিন্তার ছাপ বা কথার মধ্যে খারাপ কিছু মনে হয়নি। হঠাৎ করে এমন কী হয়ে গেল যে সে আত্মহত্যা করল? গত রাত থেকে ৩০–৪০টা ফোন দিয়েছে কারাগার থেকে। জেলার পরিচয় দিয়ে বলতেছে, আমিরুল রাতে কারাগারের ভেতরে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। আপনারা এসে লাশটি নিয়ে যান। আমরা গরিব মানুষ। কীভাবে ঢাকায় গিয়ে লাশ নিয়ে আসব, সেই চিন্তায় আছি।’

কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা বলেন, ‘আগে থেকে অনেক আসামির ভাবসাব দেখে মনে হয় আত্মহত্যা করতে পারে। এমন কাউকে দেখলে আমরা বিশেষ নজরদারিতে রাখি। অনেক সময় তাঁর সঙ্গে থাকা বন্দীরা আপসেট দেখলে আমাদের অবহিত করেন। কিন্তু আমিরুলকে সে রকম মনে হয়নি। হঠাৎ তিনি আত্মহত্যা করেছেন। আইনি প্রক্রিয়া শেষে আমিরুলের লাশ তাঁর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’