আইনমন্ত্রী আনিসুল হক
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক

আইনমন্ত্রীর অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে সাড়ে ১১ গুণ, ব্যাংকে বিনিয়োগ ৪০ কোটি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের অস্থাবর সম্পদ পাঁচ বছরের ব্যবধানে সাড়ে ১১ গুণ বেড়েছে। স্থাবর সম্পদ বেড়েছে প্রায় চার গুণ। ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে তাঁর অস্থাবর সম্পদ ছিল প্রায় ৫ কোটি ৯২ লাখ টাকার এবং স্থাবর সম্পদ ছিল ৯০ লাখ টাকার কিছু বেশি। বর্তমানে সিটিজেন ব্যাংক ও এক্সিম বাংলাদেশেই তাঁর বিনিয়োগ ৪০ কোটি ১০ লাখ টাকা। শুধু তা–ই নয়, আগের দুই সংসদ নির্বাচনে আইনমন্ত্রীর কাছে কোনো অস্ত্র না থাকলেও এবার একটি পিস্তল আছে। পাঁচ বছরে তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতাও বেড়েছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় দেখা যায়, এবার তাঁর নামে ৬৮ কোটি ৮৫ লাখ ৯৯ হাজার ৮৮৪ টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। বর্তমানে স্থাবর সম্পদ রয়েছে ৩ কোটি ৪৮ লাখ ১৯ হাজার ৮৫৮ টাকার।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আনিসুল হক ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী। তিনি কসবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রথমবার এই আসনে প্রার্থী হন। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় বিনা ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আনিসুল হক।

আইনমন্ত্রী এবারের হলফনামায় শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করেছেন এলএলএম পাস। দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করেছিলেন এলএলবি। এবার হলফনামায় পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন ‘সিনিয়র আইনজীবী ও বর্তমানে মন্ত্রী’। আনিসুল হকের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই।

হলফনামা অনুযায়ী, আইনমন্ত্রীর বার্ষিক আয় এখন ১ কোটি ৫ লাখ ৯৫ হাজার ৫২৭ টাকা, যা ২০১৮ সালে ছিল ৮ কোটি ৬ হাজার ২১২ টাকা এবং ২০১৪ সালে ছিল ৫ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। বর্তমানে বাড়িভাড়া থেকে ৫ লাখ ২৪ হাজার ৫৭৯ টাকা, ব্যাংকে মায়ের নামের সঞ্চয়পত্র থেকে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৬০০ টাকা, পেশা থেকে প্রায় ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং ব্যাংকের মুনাফা বাবদ ৪৩ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮৪ টাকা আয় করেন তিনি। গতবারের তুলনায় ব্যাংকের মুনাফা বাবদ আয় বেড়েছে। ২০১৮ সালে ব্যাংকের মুনাফা থেকে আয় ছিল ১২ লাখ ৮৬ হাজার ৬৬০ টাকা।

আইনমন্ত্রীর অস্থাবর সম্পদ আছে ৬৮ কোটি ৮৫ লাখ ৯৯ হাজার ৮৮৪ টাকার। রয়েছে ২০ ভরি সোনা ও প্রায় দেড় হাজার ইউএস ডলার।

আয়ের উৎস কৃষি খাত থেকে ২০১৪ সালে কোনো আয় না থাকলেও ২০১৮ সালে ছিল প্রায় ৩ কোটি ২২ লাখ টাকা। বর্তমানে এই খাতে আয় প্রায় সাড়ে ৭ গুণ কমে হয়েছে ৪৩ লাখ টাকা। ২০১৪ সালে ব্যাংক আমানত থেকে আয় ছিল সাড়ে ৪ কোটি টাকা এবং ২০১৮ সালে ছিল ৪ কোটি ৫৮ লাখ ৬২ হাজার ৯৯২ টাকা। ২০১৪ সালে আইন পেশা থেকে আয় ছিল প্রায় দেড় কোটি টাকা। কিন্তু গত ১০ বছর ধরে বর্তমান পেশা থেকে আয় ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

আইনমন্ত্রীর অস্থাবর সম্পদ আছে ৬৮ কোটি ৮৫ লাখ ৯৯ হাজার ৮৮৪ টাকার। রয়েছে ২০ ভরি সোনা ও প্রায় দেড় হাজার ইউএস ডলার। ৪টি মোটরগাড়ি ও একটি মোটরসাইকেল রয়েছে। ২০১৮ সালে অস্থাবর সম্পদ ছিল ২৪ হাজার ৭৭৯ ইউএস ডলার ও ২০ ভরি সোনাসহ প্রায় ৫ কোটি ৯১ লাখ ৪২ হাজার ৯৯২ টাকার। ২০১৪ সালে অস্থাবর সম্পদ ছিল ১৩ হাজার ইউএস ডলারসহ ৪ কোটি ৬০ লাখ টাকার। বর্তমানে সিটিজেন ব্যাংক ও এক্সিম বাংলাদেশে তাঁর বিনিয়োগ ৪০ কোটি ১০ লাখ টাকা, যা ২০১৪ ও ২০১৮ সালে ছিল না। বর্তমানে একটি পিস্তল রয়েছে, যা আগে ছিল না। আনিসুল হকের কাছে নগদ আছে ১০ কোটি ৯২ লাখ ৯৪ হাজার ১৯৯ টাকা, যা ২০১৮ সালে ছিল ৬ লাখ ও ২০১৪ সালে ছিল ৫ লাখ টাকা।

আনিসুল হকের বর্তমানে স্থাবর সম্পদও বেড়েছে। এখন তাঁর স্থাবর সম্পদ রয়েছে ৩ কোটি ৪৮ লাখ ১৯ হাজার ৮৫৮ টাকার। ২০১৮ সালে তা ছিল ৯০ লাখ ৩৮ হাজার ৪৪৫ টাকার ও পৈতৃকভাবে প্রাপ্ত ৩টি মৎস্য খামার এবং ২০১৪ সালে ছিল ৩ কোটি ৯১ লাখ টাকার। এ ছাড়া যৌথ মালিকানায় পৈতৃকভাবে প্রাপ্ত ৪৮ বিঘা জমি ও একটি বাড়ি, যা ২০১৩ ও ২০১৮ সালেও সমপরিমাণের ছিল। তাঁর কোনো ঋণ নেই।

স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে বর্তমানে আনিসুল হকের নামে বনানীতে ৪৫ লাখ টাকা মূল্যের একটি বাড়ির ৫০ শতাংশের মালিক দেখানো হয়েছে, যা ২০১৮ সালে ছিল না। ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকায় কেনা দুটি ফ্ল্যাট দেখানো হয়, ২০১৮ সালে ৪৫ লাখ টাকায় কেনা ছিল যার একটি। ২০১৪ সালে হলফনামায় সাড়ে তিন কোটি টাকায় কেনা তিনটি বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্ট দেখানো হয়েছিল।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা গত রোববার যাচাই শেষে পাঁচজন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেন। হলফনামা অনুযায়ী, এই আসনের সবচেয়ে ধনী প্রার্থী আনিসুল হক। পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে দুজন স্নাতকোত্তর, একজন মাধ্যমিক পাস ও দুজন স্বশিক্ষিত।

হলফনামা ঘেঁটে দেখা যায়, জাতীয় পার্টির প্রার্থী তারেক আহমেদ মাধ্যমিক পাস। তাঁর বার্ষিক আয় প্রায় ৪৭ লাখ টাকা। তাঁর প্রায় ২ কোটি ৫৮ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। তাঁর নিজ নামে ৪৫ ভরি সোনা ও স্ত্রীর রয়েছে ৩০ ভরি সোনা। তারেকের স্থাবর সম্পদ আছে ৪৮ লাখ ২০ হাজার টাকার। তাঁর বিরুদ্ধে একটি মামলা ছিল, যা থেকে বেকসুর খালাস পান।

জাকের পার্টির প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর আলম হলফনামায় নিজেকে ‘স্বশিক্ষিত’ দাবি করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। তাঁর বার্ষিক আয় ১৫ লাখ টাকা। তাঁর ৪ লাখ ৫০ হাজার ৯০০ টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। জাহাঙ্গীরের স্থাবর সম্পদের মূল্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। তাঁর কোনো দেনা নেই।

বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের প্রার্থী ছৈয়দ জাফরুল কুদ্দুছ হলফনামায় নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর উল্লেখ করেছেন। তিনি পেশায় শিক্ষক। তাঁর বিরুদ্ধে একটি মামলা ছিল, যা থেকে খালাস পান তিনি। তাঁর বার্ষিক আয় ৫ লাখ ১৭ হাজার টাকা। তাঁর অস্থাবর সম্পদ রয়েছে প্রায় ১৩ লাখ ৮০ হাজার টাকার। তাঁর ৪ বিঘা কৃষি ও ৬ শতাংশ অকৃষি জমিসহ ৫ লাখ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং তাঁর স্ত্রীর নামে ৭ শতাংশ অকৃষি ও ৪ শতাংশের একটি বাড়ি রয়েছে। তাঁর কোনো দেনা নেই।

ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) প্রার্থী শাহীন খান হলফনামায় নিজেকে ‘স্বশিক্ষিত’ দাবি করেছেন। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী। তাঁর বিরুদ্ধে একটি মামলা ছিল, তা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। তাঁর বার্ষিক আয় নেই। তাঁর ২৫ ভরি সোনাসহ ১৩ লাখ ৩৫ টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। তাঁর কোনো স্থাবর সম্পদ নেই। তাঁর কোনো দেনা নেই।