নিহত কাদির হোসেনের মা নাছিমা বেগম ও ভাই শহিদুল ইসলাম। গতকাল মঙ্গলবার কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার সূর্যপুর গ্রামে
নিহত কাদির হোসেনের মা নাছিমা বেগম ও ভাই শহিদুল ইসলাম। গতকাল মঙ্গলবার কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার সূর্যপুর গ্রামে

‘ছেলেটাও গুলি লেগে মারা গেল, আমার মতো অভাগী আর কেউ নেই’

প্রায় ২০ বছর আগে নাছিমা বেগমের স্বামী নিখোঁজ হন। ঢাকায় বাসাবাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করে দুই ছেলেকে বড় করেছেন। বড় ছেলে বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি শুরু পর তিনি গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। ছেলের আয়েই সংসার চলছিল। কিন্তু সেই ছেলে ঢাকায় কোটা আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। স্বামীর পর ছেলেকে হারিয়ে এখন অকূল পাথারে নাছিমা বেগম।

নাছিমা বেগমের (৪৫) বাড়ি কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার ভানী ইউনিয়নের সূর্যপুর গ্রামে। কোটা আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষে ঢাকার গোপীবাগে ২০ জুলাই তাঁর বড় ছেলে কাদির হোসেন (২৫) গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। তাঁর ছোট ছেলে শহিদুল ইসলাম (২২) ঢাকা রায়েরবাগে বই বাঁধাইয়ের কাজ করেন।

গতকাল মঙ্গলবার সূর্যপুর গ্রামে গিয়ে কথা হয় নাছিমা বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, ২০ জুলাই সন্ধ্যা সাতটার দিকে মেসের বন্ধুদের সঙ্গে নাশতার জন্য বের হন কাদির। এ সময় চারদিকে গোলাগুলি, ককটেল বিস্ফোরণ হচ্ছিল। গলি থেকে সড়কে উঠতেই কাদিরের পিঠে গুলি লাগে। রাত তিনটায় ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিন মারা যায়। ২১ জুলাই রাতে গ্রামে তাঁকে দাফন করা হয়।

কথা বলতে বলতে কেঁদে ওঠেন নাছিমা; চোখ মুছতে মুছতে বলেন, ‘স্বামী হারিয়ে গেল। এখন আমার ছেলেটাও গুলি লেগে মারা গেল। আমার মতো অভাগী আর কে আছে?’

কাদির হোসেন

নাছিমা বেগম জানান, তাঁর স্বামী মোহাম্মদ আলী রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। ২০০২ সালের দিকে তিনি বাড়ি থেকে বের হন। এরপর আর ফিরে আসেননি। স্বামী নিখোঁজ হওয়ার পর তিনি দুই ছেলেকে নিয়ে ঢাকা যান; মুগদায় বসবাস শুরু করেন। সংসার চালাতে বাসাবাড়িতে কাজ শুরু করেন। অনেক কষ্টে ছেলে দুটিকে বড় করেছেন। বড় ছেলে কাদির কুরিয়ার সার্ভিস কোম্পানিতে চাকরি শুরু করেন। ছেলের আয়ে সংসার চলতে থাকে। শরীর ভালো না থাকায় তিন বছর আগে তিনি বাবার বাড়িতে চলে আসেন।

মায়ের পাশেই নির্বাক হয়ে বসেছিলেন শহিদুল ইসলাম। তিনি জানান, সেদিন রাতে (২০ জুলাই) তাঁর বড় ভাইয়ের বন্ধু ফোনে জানান, আবদুল কাদির গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। রাত একটার দিকে তিনি হাসপাতালে পৌঁছান। বড় ভাই তাঁকে দেখে বলেন, ‘এত রাতে কেন ঝুঁকি নিয়ে এসেছি। কাল সকালে আসলেও হতো’—এটুকুই কথা হয়েছে। রাত তিনটার দিকে বড় ভাই মারা যান।

ভানী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নবীরুল ভুইয়া জানান, নাছিমা বেগম বাবার বাড়িতে থাকেন। ছেলে হারিয়ে তিনি খুব কষ্টে আছেন। তাঁর স্বামী অনেক বছর আগে নিখোঁজ হয়ে আছেন।

দেবীদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিগার সুলতানা জানান, নাছিমা বেগমের ছেলে হারানোর বিষয়টা জেনেছেন। তাঁদের জন্য সরকারি সহযোগিতা করা হবে।