গ্রেপ্তার আসামি ছিনতাইয়ের পর পুলিশের গুলিতে নিহত আসামির বাবা, গুলিবিদ্ধ আরও ২ জন

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মানচিত্র
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মানচিত্র

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে গ্রেপ্তার আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়ার সময় পুলিশের গুলিতে ওই আসামির বাবা আইয়ুব নূর (৬০) নিহত হয়েছেন। এ সময় নারী-শিশুসহ তিনজন গুলিবিদ্ধ হন। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটা থেকে সাড়ে চারটার দিকে উপজেলার পত্তন ইউনিয়নের আদমপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশের ভাষ্য, আসামিকে গ্রেপ্তারের পর মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশের ওপর হামলা করেন। আত্মরক্ষার্থে পুলিশ পাল্টা গুলি চালায়। হামলায় পুলিশের ১০ সদস্য আহত হয়েছেন। নিহত আইয়ুব একজন মাদক ব্যবসায়ী। তাঁর বিরুদ্ধে মাদক মামলাসহ পাঁচটি মামলা রয়েছে।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা ছাত্রলীগের এক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশের গুলিতে যিনি মারা গেছেন, তিনি মাদক ব্যবসায়ী নন এবং তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলাও নেই। মধ্যরাতে বাড়িতে ঢুকে নারীদের মারধর করে পুলিশ গুলিবর্ষণ করেছে। এটা একটা অমানবিক কাজ করেছে পুলিশ। পুলিশ আসামি ধরার জন্য এলাকায় এলে গ্রাম পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে আসতে হয়। কিন্তু পুলিশ তা না করে গুলি ছুড়ে গ্রামে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।

নিহত আইয়ুব উপজেলার পত্তন ইউনিয়নের আদমপুরের দক্ষিণপাড়া গাবুন্নিমুড়া এলাকার মস্তু ভূঁইয়ার ছেলে। আহত ব্যক্তিরা হলেন আইয়ুব নূরের ভাতিজা আকাশ নূরের স্ত্রী সালমা বেগম (২৫) ও আরেক ভাতিজা রাসেল মিয়ার ছেলে মো. ইমন (১১)।

হাতকড়া পরানো অবস্থায় স্বজনেরা আরিফকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেন। একপর্যায়ে তাঁরা পুলিশের ওপর হামলা চালান। আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি ছোড়ে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিহত আইয়ুবের ছেলে আরিফ নূরের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অভিযোগে পাঁচটি মামলা এবং আরেক ছেলে তোফাজ্জল নূরের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা, পুলিশের ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১০টির বেশি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে সম্প্রতি আরিফ নূরের বিরুদ্ধে মাদক মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। ওই পরোয়ানার সূত্র ধরে গতকাল দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে আদমপুর গ্রামের গাবুন্নিমুড়া এলাকায় আইয়ুব নূরের বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় ওই বাড়ি থেকে আরিফকে গ্রেপ্তার করে হাতকড়া পরায় পুলিশ। হাতকড়া পরানো অবস্থায় স্বজনেরা আরিফকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেন। একপর্যায়ে তাঁরা পুলিশের ওপর হামলা চালান। আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি ছোড়ে। এতে আইয়ুব নূর, সালমা ও ইমন নামের তিনজন আহত হন।

পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় লোকজন জানান, আইয়ুব বুকের ডান পাশে, শিশু ইমন পিঠে এবং সালমা বুক, গলা ও মুখে গুলিবিদ্ধ হন। তাঁদের উদ্ধার করে প্রথমে বিজয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকায় নেওয়ার পথে আইয়ুব নূর মারা যান।

পত্তন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, এটি অত্যন্ত ন্যক্কারজনক একটি ঘটনা। যিনি মারা গেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নেই। তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। পুলিশ তাঁর ছেলেকে ধরতে এলে বাড়ির লোকজনের সঙ্গে পুলিশের কথা-কাটাকাটি হয়। এতে পুলিশ ক্ষিপ্ত হয়ে বাড়ির নারীদের মারধর করে একপর্যায়ে গুলি করে। এতে আইয়ুব, এক শিশু ও এক নারী গুলিবিদ্ধ হন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে আইয়ুব মারা যান।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাজু আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, আইয়ুব নূরের পরিবারের সবাই মাদক ব্যবসায়ী। আইয়ুবের বিরুদ্ধে ৫টি, তাঁর ছেলে আরিফ নূরের বিরুদ্ধে ৫টি ও তোফাজ্জল নূরের বিরুদ্ধে ১০টি মামলা রয়েছে। মাদক মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় আরিফকে গ্রেপ্তার করতে তাঁর বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় ওই বাড়ির সদস্যরা পুলিশের ওপর হামলা চালান। এতে ৩ এসআইসহ পুলিশের ১০ জন সদস্য আহত হয়েছেন। আত্মরক্ষার্থে পুলিশ শটগানের আটটি গুলি ছোড়ে। এ ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে।