দুদিন আগে নিউজিল্যান্ড সিরিজ শেষ করে দেশে ফিরেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। সেই দলের সদস্য সৌম্য সরকারকে বুধবার দুপুরে দেখা গেল মাগুরা শহরে নৌকা মার্কার প্রচারপত্র বিলি করতে। মাগুরা-১ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের পক্ষে প্রচার চালাতে সৌম্যসহ কয়েকজন মাগুরায় আসেন। শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকলেও প্রচারে কোনো কমতি রাখছেন না সাকিব।
বুধবার দুপুরে মাগুরা শহরের কাঁচা বাজার থেকে শুরু করে ঢাকা রোড হয়ে ভায়না মোড় ও কাটাখালী এলাকায় সাকিবের পক্ষে প্রচার চালান ক্রিকেটার সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমান ও নাজমুল ইসলাম। এ সময় ক্রিকেটারদের কাছে পেয়ে অনেককে সেলফি তুলতে দেখা যায়।
এ সময় সৌম্য সরকার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘সাকিব আল হাসান আমাদের ক্রিকেটের গৌরব। তিনি এখন নৌকার মাঝি। এ জন্যই মাগুরায় আসা। তাঁর পক্ষে আমরা ভোটারদের অনুরোধ করছি যেন ৭ জানুয়ারি তাঁরা বিপুল ভোটে সাকিবকে বিজয়ী করে তোলে।’
মাগুরা-১ আসনের নৌকার প্রার্থী হিসেবে প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকেই ধাপে ধাপে সাকিবের পক্ষে মাগুরায় প্রচার চালিয়েছেন জাতীয় দলের বর্তমান ও সাবেক ক্রিকেটাররা। স্থানীয় লোকজন বলেন, গত ২৯ ডিসেম্বর মাগুরা ও শ্রীপুরে স্থানীয় ক্রিকেটারদের সঙ্গে আলাদা দুটি ক্রিকেট ম্যাচ খেলেন রুবেল হোসেন, নাজমুল ইসলাম, নুরুল হাসান, মিজানুর রহমান, মোসাদ্দেক হোসেন, সোহাগ গাজী, আবু হায়দার প্রমুখ। পরে তাঁরা নৌকার পক্ষে প্রচার চালান। ওই দিন তাঁদের সঙ্গে প্রচারে ছিলেন সাকিবের দুই গুরু কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিম ও মোহাম্মদ সালাউদ্দিন।
সদর উপজেলার একাংশ ও শ্রীপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত মাগুরা-১ আসনে সাকিব আল হাসানের প্রতিদ্বন্দ্বী চারজন। তাঁরা হচ্ছেন বাংলাদেশ কংগ্রেসের কাজী রেজাউল হোসেন, জাতীয় পার্টির মো. সিরাজুস সায়েফিন, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) কে এম মোতাসিম বিল্লা এবং তৃণমূল বিএনপির সনজয় কুমার রায়। এর মধ্যে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সিরাজুস সায়েফিন নির্বাচনের প্রচারেই নামেননি। বাকি তিনজনের মধ্যে রেজাউলের প্রচার মাইক ও পোস্টার দেখা গেলেও বাকি দুজনের প্রচার চলছে খুবই সীমিত পরিসরে। স্থানীয় ভোটাররা বলছেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে যাঁরা মাঠে আছেন, তাঁরা কেউই দল বা প্রার্থী হিসেবে সাকিবের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নন।
সাকিবের নির্বাচন পরিচালনায় যুক্ত স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকেই সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় ভোটারদের কাছে ছুটছেন সাকিব আল হাসান। প্রতিদিন ভোর সকালে লোকজন নিয়ে বেরিয়ে পড়ছেন তিনি। একেক দিন একেক এলাকায় উঠান বৈঠক করছেন বা হেঁটে বাজারগুলোতে ভোট চাইছেন। একেক দিন তিন থেকে চারটি নির্বাচনী পথসভা বা জনসভায় উপস্থিত হচ্ছেন।
বুধবার সকালে সাকিব পৌরসভার নড়িহাটি এলাকায় জনসংযোগ করেন। এরপর বেলা তিনটায় সদর উপজেলার রাঘবদাইড় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ আয়োজিত পথসভায় বক্তব্য দেন সাকিব। এরপর সেখান থেকে আঠারোখাদা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের পথসভায় যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। বিভিন্ন নির্বাচনী সভায় যোগ দিয়ে দেখা যায়, সভায় ৭ তারিখে সবাইকে ভোট দিতে কেন্দ্রে যেতে এবং তাঁকে জয়ী করতে ভোটারদের আহ্বান জানাচ্ছেন সাকিব। সাকিব ছাড়াও তাঁর পক্ষে জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা নিজ নিজ দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকায় প্রচার চালাচ্ছেন। প্রচার চালাচ্ছেন সাকিবের বন্ধুরাও।
জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁদের কাছেও ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোই বড় চ্যালেঞ্জ। তাঁরা বলছেন, মাঠে যেহেতু শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নেই, তাই সাধারণ মানুষের ভোট নিয়ে আগ্রহ অন্যবারের চেয়ে তুলনামূলক কম। তাই জয় নিশ্চিত জেনেও জোরালো প্রচার চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।
এ–সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে গত ২৭ ডিসেম্বর সাকিব বলেছিলেন, ‘এখনো কমপিটিশন (প্রতিযোগিতা) আছে। আমি যদি ক্রিকেট দিয়ে উদাহরণ দিই, একটা বড় দলের সঙ্গে যখন একটা বড় দলের খেলা হয়, তখন কমপিটিশনটা একটু বেশি হয়। ছোট দলের সঙ্গে যখন খেলে, কমপিটিশনটা একটু কম হয়। কিন্তু কমপিটিশনটা সব সময় আছে, চ্যালেঞ্জটা সব সময় থাকে। একটা দলের সঙ্গে খেলার আগে হয়তো আমরা জানি আমরা জিতব, তবু খেলতে নামার আগে বুকের মধ্যে একটু হলেও ধুঁক ধুঁক করে।’