প্লাকার্ড হাতে নিজেদের আবাসস্থলের ব্যাপারে স্থায়ী সমাধান দাবি করেছেন খুলনার বাস্তুহারা কলোনির বাসিন্দারা। শনিবার বিকেলে নগরের বাস্তুহারা কলোনি এলাকায়
প্লাকার্ড হাতে নিজেদের আবাসস্থলের ব্যাপারে স্থায়ী সমাধান দাবি করেছেন খুলনার বাস্তুহারা কলোনির বাসিন্দারা। শনিবার বিকেলে নগরের বাস্তুহারা কলোনি এলাকায়

আবাসস্থলের স্থায়ী সমাধান চান খুলনার বাস্তুহারা কলোনির বাসিন্দারা

‘বাস্তুহারা কলোনিতে আমরা যারা থাকি, সবাই অত্যন্ত দরিদ্র, শ্রমজীবী মানুষ। খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করি। দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে সরকারের দেওয়া ৪৫০ বর্গফুট জায়গায় পিতা–মাতা, সন্তান নিয়ে বসবাস করি। কষ্টের টাকা ও বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে কেউ পাকা, কেউ আধা পাকা ও টিনশেড ঘর বানিয়ে পরিবার নিয়ে থাকছে। কিন্তু এত বছরেও এই জায়গা স্থায়ীভাবে আমাদের নামে বরাদ্দ হয়নি। তাই আমরা ৪৫০ বর্গফুট জায়গার স্থায়ী বরাদ্দ চাই।’

খুলনায় গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরীর সামনে কথাগুলো বলছিলেন বাস্তুহারা কলোনির বাসিন্দা শামসুল হক। তাঁর মতো কলোনির কয়েক হাজার বাসিন্দার একই দাবি। ছিন্নমূল মানুষের এই আবাসস্থল ৫০ বছর পরও স্থায়ীভাবে বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হয়নি। তাঁদের দাবি, নামমাত্র মূল্যে বা প্রতীকী মূল্যে তাঁদের প্লটগুলোর স্থায়ী নিবন্ধন দেওয়া হোক।

আজ শনিবার বিকেলে নগরের বাস্তুহারা কলোনি এলাকায় গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রীর খুলনা আগমন উপলক্ষে সংবর্ধনার আয়োজন করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। অনুষ্ঠানে বাস্তুহারা কলোনির কয়েক হাজার মানুষ মন্ত্রীর কাছে তাঁদের বাসস্থানের স্থায়ী বরাদ্দের আবেদন জানান। কলোনিতে বর্তমানে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ বাস করেন। সেখানে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়, চারটি মসজিদ, একটি মাদ্রাসা ও একটি এতিমখানা আছে।

গণপূর্তমন্ত্রীর কাছে দেওয়া স্মারকলিপিতে কলোনির বাসিন্দারা জানান, ১৯৭০ সালে খুলনা সার্কিট হাউস ময়দানে নির্বাচনী জনসভায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রতিশ্রুতি দেন, তিনি সরকার গঠন করলে ছিন্নমূল মানুষের স্থায়ী পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবেন। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু ৩৩ একর জমি বাস্তুহারা কলোনির নামে বরাদ্দ দেন। বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে সেখানে ঘর বানিয়ে দেন। তাঁর নির্দেশে বাস্তুহারা কলোনির উন্নয়ন ও বরাদ্দ নিবন্ধনের প্রক্রিয়া চলছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর সেই প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, ১৯৯৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাস্তুহারা কলোনির সামনে জনসভায় বাস্তুহারা কলোনি নিবন্ধনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই মোতাবেক নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। কিন্তু ২০০১ সালে সরকার পরিবর্তন হলে সেটি থমকে যায়। ২০১৩ সালে সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, খুলনার সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক ও গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কলোনি নিবন্ধন ও নাম ‘বঙ্গবন্ধু নগর’ করতে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। সে মোতাবেক প্রতিমন্ত্রী, মেয়র ও জেলা প্রশাসকের সম্মিলিতভাবে সরেজমিনে জরিপ করতে মন্ত্রীর প্রতিনিধি, সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধি, জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি, হাউজিংয়ের প্রতিনিধি ও বাস্তুহারা কলোনি নিবন্ধন কমিটির প্রতিনিধির সমন্বয়ে ৮ সদস্যের সার্ভে কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি সরেজমিনে জরিপের মাধ্যমে বাস্তুহারা কলোনিতে বসবাসরত ১ হাজার ৫০২টি পরিবারের তালিকা প্রস্তুত করে প্রতিবেদন দেয়। এরপর আবার কার্যক্রম থমকে যায়।

আজ অনুষ্ঠানে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী দ্রুততম সময়ের মধ্যে সবাইকে নিয়ে একটা সুষ্ঠু সমাধানের আশ্বাস দেন। অনুষ্ঠানে সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক, খুলনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য এস এম কামাল হোসেন, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক রুনু ইকবাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।