সাগর মোহনা ও নদী থেকে মাছ ধরে নৌকা ভিড়েছে ঘাটে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে ভোলা সদর উপজেলার চডারমাথা মাছঘাটে
সাগর মোহনা ও নদী থেকে মাছ ধরে নৌকা ভিড়েছে ঘাটে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে ভোলা সদর উপজেলার চডারমাথা মাছঘাটে

‘মাছের এত দাম, তারপরও খরচের টাকা ওঠে না’

সূর্যের মুখ তখনো দেখা যায়নি। ভোর থেকেই সাগর মোহনা ও গভীর নদী থেকে মাছ ধরা ট্রলার ভিড়ছে ভোলা সদর উপজেলার চডারমাথা মাছঘাটে। এসব ট্রলারে ইলিশের চেয়ে পোয়া মাছ বেশি। একটি–দুটি বড় পাঙাশ মাছও আছে। আজ বৃহস্পতিবার ভোরে গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়।

ইলিশ শিকারে টানা ২২ দিনের (১৩ অক্টোবর-৩ নভেম্বর) সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলে আবারও সাগর ও নদীতে মাছ ধরতে নেমেছেন। ভোলার নদী ও সাগর মোহনার মাছঘাটগুলো আবার মুখর হয়ে উঠেছে। মাছের দাম বেশি। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পাওয়ায় জেলেদের মুখে হাসি নেই। সদর উপজেলার তুলাতুলি, ভোলার খাল, ভাংতির খাল, ইলিশা চডারমাথা, জোড়খালসহ বিভিন্ন মাছঘাটে একই রকম চিত্র।

আজ সকালে চডারমাথা মাছঘাটে গিয়ে দেখা যায়, দোকানপাট জমজমাট। রেস্তোরাঁগুলোতে গরম পরোটা, রুটি ও চা বিক্রি হচ্ছে। ফড়িয়া–পাইকারদের নিলাম, ডাক–চিৎকার মাছঘাটে আবার প্রাণ ফিরে এসেছে।

ঘাটের আড়তদার শাহাবুদ্দিন ফরাজির আড়তের বাক্সে মাছে ফেলেছেন হালান মাঝি, রাজিব মাঝি, ও মিরাজ মাঝি। তাঁরা গত সোমবার রাতে নৌকা নিয়ে বের হয়েছিলেন। গতকাল বুধবার দিবাগত রাতে ঘাটে ফিরে এসেছেন। যাওয়ার সময় ছয় হাজার টাকার জ্বালানি তেল আর বাজার সঙ্গে নিয়েছিলেন। হালান মাঝি ৪ হাজার ৮০ টাকার, মিরাজ মাঝি ৪ হাজার ৭৮০ টাকার এবং রাজিব মাঝি ৮ হাজার ৩০০ টাকার মাছ বিক্রি করেছেন।

হালান মাঝি আক্ষেপ করে বলেন, ‘মাছের এত দাম, তারপরও খরচের টাকা ওঠে না।’
সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের তুলাতুলি মাছঘাটের জেলে সাধু মাঝি। গত

রোববার মাঝিমাল্লাসহ সাতজন মেঘনা নদীতে মাছ শিকারে বের হন। দিন শেষে শূন্য হাতে ঘাটে ফিরে এসেছেন। এরপর আর মাছ শিকারে বের হননি।
তুলাতুলি এলাকার জেলে মনসুর মাঝি জানান, তিনি ছোট ট্রলার নিয়ে ১ হাজার ৩০০ টাকা খরচ করে নদীতে মাছ শিকারে গিয়েছিলেন। সাতটি জাটকা ইলিশ পেয়েছেন। ঘাটে এনে সেগুলো ৮০০ টাকায় বিক্রি করেছেন। এতে তাঁর ৫০০ টাকা লোকসান হয়েছে। আশা ছিল, মাছ ধরে গত ২২ দিনের দেনা শোধ করবেন। কিন্তু উল্টো আরও দেনা হয়ে যাচ্ছে।

বর্তমানে ইলিশের চেয়ে পোয়া মাছ বেশি পাওয়া যাচ্ছে। আজ সকালে ভোলা সদর উপজেলার চডারমাথা মাছঘাটে

তুলাতুলি মাছঘাটের আড়তদার ইউনুছ ব্যাপারী ও জসিম ব্যাপারী জানান, অভিযানের আগে তুলাতুলির একেকটি আড়তে দিনে লক্ষাধিক টাকার মাছ বেচাকেনা হতো। এখন মাছের মাছের দাম বেশি; কিন্তু বিক্রি করে লাখ টাকাও হচ্ছে না।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব জানান, এবারের মা ইলিশ রক্ষা অভিযান অন্যবারের তুলনায় অনেকটা সফল হয়েছে। এতে মাছের উৎপাদন আগের তুলনায় বৃদ্ধি পাবে।

বর্তমানে নদীতে মাছ কম পাওয়ার কারণ হিসেবে বিশ্বজিৎ কুমার দেব জানান, সাধারণত অমাবস্যা ও পূর্ণিমার ওপর ভিত্তি করে নদীতে মাছ কমবেশি হয়ে থাকে। চার দিন আগে অমাবস্যা চলে গেছে। সাধারণত এর চার-পাঁচ দিন থেকে এক সপ্তাহ নদীতে তেমন একটা মাছ থাকে না। পূর্ণিমার আগমনে আবার মাছ পাওয়া যায়। এ ছাড়া প্রজনন মৌসুমে মা-ইলিশ ডিম ছেড়ে সাগরে চলে গেছে। পূর্ণিমার আগে আবার নতুন করে সাগর থেকে নদীতে ইলিশ উঠবে।