সাভার ও আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে অধিকাংশ শিল্পকারখানা খোলা রয়েছে। আজ সকাল থেকে এসব কারখানায় শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করছেন শ্রমিকেরা। তবে বেতন পরিশোধ করতে না পারা, কারখানায় কাজ না থাকা ও সম্প্রতি আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতায় ১৬টি শিল্পকারখানা বন্ধ রয়েছে।
এদিকে পোশাক খাতে অস্থিরতার ঘটনায় গতকাল শুক্রবার আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথ বাহিনী।
আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১ জানায়, আজ শনিবার সাভার ও আশুলিয়ায় বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬–এর ১৩ (১) ধারায় বন্ধ রয়েছে ১৩টি কারখানা। সাধারণ ছুটি রয়েছে তিনটি কারখানায়। বন্ধ কারখানাগুলোর অধিকাংশ তৈরি পোশাক কারখানা। তবে বন্ধ কারখানাগুলোর মধ্যে অন্যান্য কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে। শিল্পাঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবির সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। দুপুর দেড়টা পর্যন্ত শিল্পাঞ্চলের কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পক্ষ থেকে জানানো হয়, আশুলিয়ায় মোট ২৭২টি কারখানার মধ্যে ১৩ (১) ধারায় বন্ধ রয়েছে ৯টি কারখানা। কারখানা খোলা রাখার পর কাজ বন্ধ বা ছুটি রয়েছে ৫টি কারখানায়। আশুলিয়ায় আজ চালু কারখানার সংখ্যা ২৫৮। আগস্ট মাসের বেতন পরিশোধ করছে ২৬৬টি কারখানা কর্তৃপক্ষ। বেতন পরিশোধ করেনি ৬টি কারখানা কর্তৃপক্ষ।
আশুলিয়ার শিল্প পুলিশ-১–এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। সাভার ও আশুলিয়ায় বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬–এর ১৩ (১) ধারায় ১৩টি এবং ৩টি কারখানায় সাধারণ ছুটি রয়েছে। বন্ধ থাকা এসব কারখানার মধ্যে শ্রমিকদের বেতন দিতে পারছে না কিংবা কারখানায় কাজ নেই এমন কারখানাও রয়েছে।
পুলিশ সুপার বলেন, বন্ধ কারখানাগুলোর অধিকাংশ তৈরি পোশাক কারখানা। অন্যান্য পণ্য উৎপাদনকারী কিছু প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। খোলা কারখানাগুলোতে শ্রমিকেরা শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করছেন। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
শ্রমিকদের উসকানিদাতা ৫ জন গ্রেপ্তার
গার্মেন্টস শিল্পে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে শ্রমিকদের উসকানি, আন্দোলনরত শ্রমিকদের দ্বারা উসকানিমূলক স্লোগান, বিভিন্ন গার্মেন্টস ভাঙচুর, রাস্তা ব্যারিকেড দিয়ে গাড়ি ভাঙচুর ও গাড়ি পোড়ানোর অভিযোগে আশুলিয়ার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর, জামগড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করে।
আজ শনিবার দুপুর একটার দিকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবু বকর সিদ্দিক।
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন ঢাকার ধামরাই উপজেলার মোকামটুলা গ্রামের মো. লাবু খানের ছেলে ধামরাই সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. হাবিব খান (৩১), আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকার মৃত দুর্জন মোল্লার ছেলে ইয়ারপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আলকাছ মোল্লা (৩৬), একই এলাকার মৃত মহিবুর রহমান ওরফে মহিউদ্দিনের ছেলে একই ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আজাহারুল ইসলাম (৪২), লালমনিরহাট জেলা সদরের হাড়ভাঙা গ্রামের জাহিদুল ইসলামের ছেলে আওয়ামী লীগ সমর্থক মো. মজিদুল ইসলাম (২৮) ও আশুলিয়ার পবনারটেক এলাকার মৃত সোনা মিয়া তালুকদারের ছেলে ধামসোনা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক রাসেল তালুকদার (৩৫)।
ওসি আবু বকর সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, গত ৮ সেপ্টেম্বর শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় দায়িত্ব পালনরত র্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর গাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরদিন ওই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ দুপুরে তাঁদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।