সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে ঢাকায় একটি বেসরকারি কারখানায় চাকরি নিয়েছিলেন সাজু ইসলাম (২৬)। সম্প্রতি ঢাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশ নিতেন তিনি। রংপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্র আবু সাঈদ নিহত হওয়ার পর আন্দোলনে আরও সক্রিয় হন সাজু। এর মধ্যে গত ২৭ জুলাই গ্রামের বাড়িতে ছেলের জন্ম দেন সাজু ইসলামের স্ত্রী। মুঠোফোনে সেই খবর পেয়ে ১৬ জুলাই রংপুরে গুলিতে নিহত আন্দোলনকারী আবু সাঈদের নামে নিজের ছেলের নাম রাখেন তিনি।
ছেলের জন্মের ৯ দিনের মাথায় ৫ আগস্ট গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা এলাকায় মিছিলে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন সাজু। এরপর ১১ আগস্ট দিবাগত রাতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। নবজাতক সন্তানের মুখ তিনি দেখে যেতে পারেননি।
নিহত সাজু ইসলাম পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার চিলাহাটি ইউনিয়নের টোকরাভাসা-মীরপাড়া এলাকার আজাহার আলীর ছেলে। চার ভাইবোনের মধ্যে তিনি সবার বড় ছিলেন। ১২ আগস্ট গ্রামের বাড়িতে এনে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় সাজুর লাশ।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সাজু ইসলামের বাবা নির্মাণশ্রমিকের কাজ করতেন। নিজেদের ভিটেবাড়ির ৮ শতাংশ জমি ছাড়া আর কোনো জায়গা নেই তাঁদের। দুই ভাই-দুই বোনের মধ্যে সাজু ইসলাম সবার বড়। সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে এইচএসসি পাস করার পর প্রায় ছয় বছর আগে ঢাকায় পাড়ি জমান সাজু। একটি বেসরকারি কারখানার চাকরির টাকায় চলত তাঁদের সংসার। এর মধ্যে ছোট দুই বোনের বিয়ে দিয়েছেন। আর ভাইটি স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছে। বাবার বয়স হয়ে যাওয়ায় সংসারের সব দায়িত্ব ছিল সাজুর।
মঙ্গলবার বিকেলে দেবীগঞ্জ উপজেলার টোকরাভাসা-মীরপাড়া এলাকায় নিহত সাজু ইসলামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছেলের জন্য কাঁদতে কাঁদতে চোখ ফুলে গেছে মা সামিনা আক্তারের। পুরো বাড়িতে সুনসান নীরবতা। সাজুর বাবা আজাহার আলী ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেছেন ছেলের মৃত্যুসনদ নিতে। ছেলেকে নিয়ে বাবার বাড়িতে গেছেন সাজুর স্ত্রী।
সাজুর মা সামিনা আক্তার বলেন, ‘ছেলেটাই আমাদের একমাত্র ভরসা ছিল। ও-ই সংসারটা চালাত। এখন ওর ছোট্ট ছেলেটাকে কীভাবে মানুষ করব? কীভাবে আমাদের সংসার চলবে?’
সাজু ইসলামের চাচাতো ভাই স্বপন হোসেন বলেন, ৫ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে ঢাকার মাওনা এলাকায় মিছিলে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন সাজু। সেখানে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়ার লোক ছিল না। দীর্ঘক্ষণ পড়ে থাকার পর স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় সাজুর এক বন্ধু একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিকেলে নিয়ে ভর্তি করেন। সাজুর পেটের বাঁ দিকে গুলি ঢুকে পেটের ভেতরে আটকে ছিল। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি বারবার বাড়িতে গিয়ে সন্তানকে দেখার আকুতি জানাচ্ছিলেন।