শাহজালাল বিমানবন্দর

কুয়েত এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে উঠে পড়া শিশুটিকে শিকলে বেঁধে রেখেছে পরিবার

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
ফাইল ছবি

ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থা ফাঁকি দিয়ে ফ্লাইটে উঠে পড়া শিশুটিকে তার পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়া হয়েছে। তবে শিশুটিকে এখন শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছেন পরিবারের সদস্যরা। ১২ বছর বয়সী ওই শিশুর বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলায়।

মুকসুদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, ‘বিমানবন্দর থানা থেকে আমাদের থানায় ফোন করা হলে আমরা শিশুটির পরিবারের খোঁজ করে তার পরিবারকে সংবাদ দিই। সংবাদ দেওয়ার পর তারা তাকে বিমানবন্দর থানা থেকে নিয়ে আসে। বর্তমানে শিশুটি তার বাড়িতেই আছে।’

শিশুটি গত সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে নিরাপত্তাবেষ্টনী পেরিয়ে কুয়েত এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে উঠে পড়ে। রাত সোয়া তিনটার দিকে কুয়েত এয়ারওয়েজের ওই ফ্লাইট উড্ডয়নের কথা ছিল। শিশুটিকে ফ্লাইটের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কেবিন ক্রুরা তাকে তার আসনে বসতে বলেন। তার গতিবিধি সন্দেহজনক হওয়ায় কেবিন ক্রু তাকে তার মা-বাবার পাশে বসতে বলেন। তখন শিশুটি জানায়, মা–বাবা তার সঙ্গে নেই। কার সঙ্গে উড়োজাহাজে উঠেছে, সেটাও বলতে পারছিল না। এমনকি তার সঙ্গে পাসপোর্ট, টিকিট ও বোর্ডিং পাসও ছিল না।

বাড়িতে আনার পর শিশুটির পায়ে শিকল দিয়ে ঘরের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রেখেছেন পরিবারের সদস্যরা।

এ ঘটনার পর বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ১০ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এ ঘটনা তদন্তে কমিটিও গঠন করা হয়েছে। আর শিশুটিকে বিমানবন্দর পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

শিশুটির চাচা বলেন, গতকাল বুধবার সকালে তিনি (চাচা) তাকে বিমানবন্দর থানা থেকে বাড়ি নিয়ে আসেন। তবে বাড়ির সামনে ইজিবাইকে নেমে চাচা ঘরে ঢুকলেও শিশুটি সেখান থেকে পালিয়ে যায়। পরে বেলা একটার দিকে এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে তাকে খুঁজে আনা হয়। বাড়িতে আনার পর শিশুটির পায়ে শিকল দিয়ে ঘরের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রেখেছেন পরিবারের সদস্যরা।

শিশুটির বাবা সবজি বিক্রেতা। বয়স যখন দেড় বছর, তখন তার বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। তখন থেকে সে বাবার কাছেই থাকে। বাবা কিছুদিন পর আবার বিয়ে করেন।

শিশুটির চাচার দাবি, তাঁর ভাতিজা খুবই দুরন্ত। পড়ালেখার ভয়ে সে প্রায়ই বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। তাকে হাফেজিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি করা হয়েছিল। সেখান থেকে সে বারবার পালিয়ে আসে বলে তাকে স্থানীয় আরেকটি মাদ্রাসায় ভর্তি করা হয়। সে মাঝেমধ্যেই বাড়ি থেকে চলে যেত, আবার ফিরে আসত। তিন মাস আগে সে বাগেরহাটের মোংলায় যায়। সেখান থেকে লোকজন মুকসুদপুরে পাঠিয়ে দেন। সে মুকসুদপুর না এসে ঢাকায় চলে যায়। পরে সেখান থেকে রাজবাড়ী যায়। গত তিন বছরে তার বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার মাত্রা বেড়েছিল। তার ভাতিজা কীভাবে উড়োজাহাজে উঠল, সে ব্যাপারে তাঁরা কিছুই বুঝতে পারছেন না।