এখন কেউ যেন দেশকে বিভক্ত করতে না পারে, সে ব্যাপারে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘আমরা একটা সুযোগ পেয়েছি। সে জন্য আমি সরকারি কর্মকর্তা, পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ সব বাহিনীকে অনুরোধ করতে চাই, আসুন, এই সুযোগ আমরা কাজে লাগাই। আবার আমরা বাংলাদেশকে সমস্ত বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গড়ে তুলি।’
আজ রোববার বিকেলে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার সাকোয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে এক জনসভায় বক্তব্য দেন মির্জা ফখরুল। ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ স্লোগান নিয়ে বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি এই জনসভার আয়োজন করে।
সারা দেশে আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতা-কর্মীকে বিপদে ফেলে পালিয়ে গেছেন শেখ হাসিনা, এই মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, জনগণকে বোকা বানিয়ে তিনটা নির্বাচন করে জোর করে ক্ষমতায় ছিলেন শেখ হাসিনা। তিনি ভেবেছিলেন, কোনো দিন ক্ষমতা থেকে যাবে না। কিন্তু দেখেন, কীভাবে মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে পরিবারের সবাইকে নিয়ে হাসিনাকে পালিয়ে যেতে হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘যেই নেত্রী বলেছিলেন আমি পালাই না, আমি ভয় পাই না, আমি মুজিবের বেটি, আমি পালাই না। আজকে সেই মহিলা সারা দেশের অসংখ্য আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিপদে ফেলে পালিয়ে গেছেন। বাকি নেতা যারা ছিল, তারা বন্দী হয়ে গেছে দুর্নীতি করার অভিযোগে। এই হচ্ছে ফ্যাসিবাদের পরিণতি; যারা জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়।’
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, ‘আজকে ওপারে পালিয়ে গিয়ে হাসিনা ওখান থেকে ষড়যন্ত্র করছে, চক্রান্ত করছে। একটা মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে—এখানে নাকি আমাদের হিন্দু ভাইদের ওপর অত্যাচার করা হচ্ছে। আমরা খুব শান্তিপ্রিয় মানুষ। আমরা সব সময় হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, মুসলমান একসঙ্গে বসবাস করি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫৩ বছর হয়েছে। কাহাও কাহাও (কেউ কেউ) কহচে (বলছে) যে ৭১ ভুলে যাবে। একাত্তরকে আমরা ভুলতে পারি না। ৭১–এ আমাদের স্বাধীন দেশের জন্ম হয়েছে। আমি আমার নিজেকে চিনতে পেরেছি ৭১ সালে। আমরা নিজের একটা ভূখণ্ড তৈরি করতে পেরেছি। আমরা ওপরে ওঠার একটা সুযোগ পেয়েছি। সেই সুযোগটা আমাদের কাজে লাগাতে হবে।’
ছাত্র-জনতাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমি ছাত্র-জনতাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, আমাদের ভাইয়েরা যাঁরা ১৫ বছর লড়াই করেছেন, তাঁদের ধন্যবাদ জানাতে চাই। তাঁরা নিজেদের বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে আমাদের জন্য আবার একটা সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। যেন আমরা দেশে আবার একটা গণতান্ত্রিক পথ সৃষ্টি করতে পারি। আমরা এখানে সব মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে চাই। কেউ তিনবার ১৫ বছর ধরে ভোট দিতে পারেন নাই। এই ভোটের অধিকারটা আমরা ফিরিয়ে দিতে চাই।’
দলের সংস্কার প্রস্তাবের কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ২০১৬ সালে “ভিশন বাংলাদেশ টুয়েন্টি-থার্টি” দিয়েছিলেন। আর আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব ২০২২ সালে ৩১ দফা দিয়েছেন। সেই ৩১ দফা কী, সংস্কার প্রস্তাব। এই সংস্কারটা আমরা চাই। এই সংস্কার বলতে বুঝি, আমরা যেন ভোটটা দিতে পারি, আমাদের দেশে যেন শান্তি থাকে, জিনিসপত্রের দাম যেন কম হয়, মারামারি যেন না হয়, চুরি–ডাকাতি যেন না হয়। আর কথায় কথায় ঘুষ যেন দিতে না হয়। এ রকম একটা বাংলাদেশ আমরা চাইছি।’
জনসভা শেষে বিএনপির মহাসচিব বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পঞ্চগড়ের পাঁচ শহীদ ও ২০২৩ সালে পঞ্চগড়ে বিএনপির আন্দোলনের সময় সংঘর্ষে মারা যাওয়া একজন বিএনপি নেতার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করেন।
পঞ্চগড় জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ফরহাদ হোসেন আজাদের সভাপতিত্বে জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা বেবী নাজনীন, কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক সম্পাদক নওশাদ জমির, কেন্দ্রীয় নেতা ইশরাক হোসেনসহ দল ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বক্তব্য দেন।