লামায় ম্রো ও ত্রিপুরাদের প্রতিটি পরিবারকে ৫ একর জমি দেওয়ার প্রস্তাব

সংসদীয় উপকমিটির সদস্যরা বান্দরবানের লামার রেংয়েনপাড়া সফরে গেলে ম্রো ও ত্রিপুরারা ভূমি সমস্যার বিষয়গুলো তাঁদের কাছে তুলে ধরেন। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় সরইয়ের রেংয়েনপাড়ায়
ছবি: মংহাইসিং মারমা

বান্দরবানে লামা উপজেলার সরইয়ে ম্রো ও ত্রিপুরাদের পরিবারকে পাঁচ একর করে মোট ২০৬ একর জমি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির গঠিত উপকমিটি। আজ বুধবার লামার রেংয়েনপাড়া সফরে গিয়ে উপকমিটি এ প্রস্তাব দেয়। ম্রো-ত্রিপুরাদের সঙ্গে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের ভূমি বিরোধ তদন্তে সংসদীয় উপকমিটির সদস্যরা রেংয়েনপাড়া সফরে গিয়েছিলেন।

সংসদীয় উপকমিটির প্রস্তাবের জবাবে ম্রোরা বলেন, সংসদীয় উপকমিটির কাছে তাঁরা পূর্ব সিদ্ধান্তমূলক প্রস্তাব চান না। নিরপেক্ষ তদন্ত আশা করেন। শুধু রাবারবাগানের ইজারার দলিলপত্র দেখিয়ে যদি লামা রাবার ইন্ডাস্টিজকে জমির মালিক বলা হয়, তাহলে তাঁদের কিছুই করার নেই।

আজ বেলা ১১টায় সংসদীয় উপকমিটির সদস্যরা রেংয়েনপাড়ায় পৌঁছান। তাঁদের মধ্যে ছিলেন উপকমিটির আহ্বায়ক ও চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনের সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, রাঙামাটির সংসদ সদস্য দীপঙ্কর তালুকদার, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন রাবার বোর্ডের চেয়ারম্যান সৈয়দা সারওয়ার জাহান, জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি, পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম প্রমুখ।

রেংয়েনপাড়ায় ম্রো, ত্রিপুরা পাড়াবাসী ও লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রির পরিচালকদের উপস্থিতিতে আলোচনা সভা হয়। সভায় ম্রো সোসিয়েল কাউন্সিলের পক্ষে খামলাই ম্রো এবং জেলা পরিষদের সদস্য সত্যহা পানজি প্রতিটি পরিবারকে পাঁচ একর জমি দেওয়ার প্রস্তাব মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান পাড়াবাসীদের।

সংসদীয় উপকমিটির আহ্বায়ক এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী বলেন, পাড়ার কোনো পরিবারের জমির মালিকানা দলিল নেই। লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রি কোম্পানিকে রাবারবাগান উন্নয়নের জন্য জমি ইজারা দিয়েছে সরকার। এরপরও রাবার ইন্ডাস্ট্রি তাদের ইজারার জমি থেকে ২০৬ একর জমি জেলা প্রশাসক বরাবর হস্তান্তর করবে। ওই জমি রেংয়েনপাড়া, লাংকমপাড়া ও জয়চন্দ্রপাড়ার ৩৬টি পরিবারের জন্য পাঁচ একর করে ১৮০ একর বিশেষ ব্যবস্থায় বন্দোবস্ত করে দেওয়া হবে। আরও ২৬ একর জমি যৌথ প্রয়োজনের জন্য পাড়াবাসীর কাছে হস্তান্তর করা হবে। ভূমি বিরোধ নিয়ে পাড়াবাসীর বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলো প্রত্যাহারের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এ সময় রেংয়েনপাড়ার কার্বারি (পাড়াপ্রধান) রেংয়েন ম্রো ও লাংকমপাড়ার বাসিন্দা ইংচং ম্রোসহ ম্রোরা বলেন, ‘আমাদের বাপ-দাদা চৌদ্দ পুরুষের জুমচাষের জমি। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে, লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের জমি। এমন হলে করার কিছুই নেই।’ ইংচং ম্রো বলেন, সংসদীয় উপকমিটির কাছে তাঁরা নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার আশা করেন। কী করা হবে, পূর্বসিদ্ধান্ত নিয়ে তদন্তে আসা অনাকাঙ্ক্ষিত।

ভূমি সমস্যা সমাধানে সংসদীয় উপকমিটির সদস্যরা বান্দরবানের লামার রেংয়েনপাড়া সফরে গেলে ম্রো ও ত্রিপুরা পাড়াবাসী বিভিন্ন প্লাকার্ড নিয়ে তাঁদের দাবি তুলে ধরেন। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় সরইয়ের রেংয়েনপাড়ায়

আলোচনা শেষে সংসদীয় উপকমিটির আহ্বায়ক তিনটি পাড়া থেকে দুজন করে ছয়জনকে উপকমিটির প্রথম বৈঠকে উপস্থিত থাকার আহ্বান জানান। বৈঠক আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত হবে।

উল্লেখ্য, লামা উপজেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে সরই ইউনিয়নের রেংয়েনপাড়া, লাংকমপাড়া ও জয়চন্দ্রপাড়ার জুমচাষের ৩৫০ একর জমি গত বছরের ২৬ এপ্রিল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ম্রো ও ত্রিপুরাদের অভিযোগ, লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রি কোম্পানি পরিকল্পিতভাবে তাঁদের জমি পুড়িয়ে দিয়েছে। এ ঘটনার ঠিক এক বছর পর বিষয়টি তদন্তের জন্য সংসদীয় উপকমিটি ঘটনাস্থলে যায়।