তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন সমশের মবিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ) আসনে বিএনপির মনোনয়নে সংসদ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ফয়সল আহমদ চৌধুরী।
আজ শনিবার বেলা আড়াইটায় সিলেট নগরের মীরবক্সটুলা এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন করে ফয়সল আহমদ চৌধুরী এ অভিযোগ করেন। তাঁর অভিযোগ, সম্প্রতি একটি টেলিভিশন চ্যানেলের আলোচনায় অংশ নিয়ে সমশের মবিন চৌধুরী বিএনপি ও তাঁর (ফয়সল) সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করেছেন। সমশেরের সঙ্গে তাঁর (ফয়সল) ফোনালাপের বিষয়টি অসত্য।
ফয়সল আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘সমশের মবিন আমার ও স্থানীয় বিএনপি সম্পর্কে নানা বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করেছেন। তিনি (সমশের) বিএনপির রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার পর তাঁর সঙ্গে এখন পর্যন্ত ফোনে কিংবা সরাসরি কোনো কথা হয়নি। কিন্তু টিভি চ্যানেলে তিনি মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়ে আমার সঙ্গে ফোনালাপের বিষয়টি অবতারণা করেছেন। তাঁকে অবিলম্বে এ বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছি।’
অভিযোগের বিষয়ে সমশের মবিন চৌধুরীর মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান, জেলা বিএনপির সহসভাপতি আশিক উদ্দিন, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মাহবুবুল হক চৌধুরী, বিয়ানীবাজার পৌর বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন, বিয়ানীবাজার উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছরওয়ার হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুর রহমান, গোলাপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি নোমান উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান, গোলাপগঞ্জ উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মামুন আহমদ, পৌর যুবদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল আজিজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সমশের মবিন চৌধুরী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১৫ সালে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন। ২০১৮ সালের ৮ ডিসেম্বর বিকল্পধারা বাংলাদেশে যোগ দিয়ে পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হন। পরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৬ আসনে বিকল্পধারার মনোনয়নে তিনি প্রার্থী হন। যদিও নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে সমর্থন জানিয়ে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।
সমশের মবিন চৌধুরীকে দলছুট, নীতিহীন ও পথভ্রষ্ট রাজনীতিবিদ আখ্যা দিয়ে ফয়সল আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘রাজনীতিতে আমার পথচলা তাঁর মতো ডিগবাজির মাধ্যমে নয়। আমি জাতীয়তাবাদী দলের একজন নিবেদিত কর্মী। দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রদল থেকে রাজনীতি করে আসছি। দলে ত্যাগ ও অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আমাকে সিলেট-৬ আসনে দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়। কিন্তু বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকারের কারচুপি ও দিনের ভোট রাতে করার মাধ্যমে আমার জয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়।’
লিখিত বক্তব্যে ফয়সল আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘তিনি (সমশের) একসময় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। দলের ক্রান্তিলগ্নে সরকারের দালালি করার উদ্দেশ্যে তিনি রাজনীতি থেকে অবসর নেন। পরে বিকল্পধারায় যোগ দিয়ে সিলেট-৬ আসনের সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন। গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারের মানুষ ঘৃণাভরে তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি ভোট পান মাত্র ১৯১টি। এরপর দীর্ঘদিন ঘাপটি মেরে ছিলেন। গণতন্ত্রকামী সব রাজনৈতিক দল যখন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করছে, ঠিক তখনই আন্দোলনের পিঠে ছুরিকাঘাত করার অপতৎপরতা শুরু করেছেন তিনি। সরকারের ক্রীড়নক হয়ে কথিত একটি কিংস পার্টির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়ে আবার সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার খায়েশ নিয়ে নানা কূটচাল চালাচ্ছেন।’
ফয়সল আহমদ চৌধুরী বলেন, সম্প্রতি একটি টিভি চ্যানেলে বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ বিএনপি এবং তাঁর সম্পর্কে চরম মিথ্যাচার করেছেন। তিনি মনে করেন, তাঁর (সমশের) মিথ্যাচারের মূল উদ্দেশ্য তাঁর (ফয়সল) জনপ্রিয়তা নষ্ট করা। তাঁর এ আচরণ তাঁকে (সমশের) আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করবে। এ সময় তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা নিশ্চিতের দাবি জানান।
এর আগে টিভি চ্যানেলে দেওয়া সমশের মবিন চৌধুরীর বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে গত সোমবার বিকেলে বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা বিএনপি পৃথকভাবে উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। এ সময় সমশের মবিনকে দলটির নেতারা দুটো উপজেলায় অবাঞ্ছিত ঘোষণার পাশাপাশি কুশপুতুল দাহ করেন। এ ছাড়া সমশের মবিনকে তাঁর বক্তব্য প্রত্যাহারেরও আহ্বান জানান।