নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে প্রতিপক্ষের এজেন্টদের মারধরের পর বেঁধে রাখা এবং সোনারগাঁয়ে কেন্দ্র ঘেরাও করে প্রতিপক্ষের এজেন্টদের ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগের মধ্য দিয়ে জেলার তিন উপজেলায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। এ দুটি উপজেলাসহ রূপগঞ্জেও সকাল আটটায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এসব উপজেলায় ভোট গ্রহণ চলবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন–সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
আগেই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেওয়ায় বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেই।
আড়াইহাজার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজালাল মিয়া (দোয়াত-কলম প্রতীক), উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি কাজী সুজন ইকবাল (আনারস প্রতীক) এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য ও সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম (ঘোড়া)।
এ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে রফিকুল ইসলাম ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে শাহিদা মোশারফ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগেই নির্বাচিত হয়েছেন।
উপজেলাটির দোয়াত–কলমের প্রার্থী শাহজালাল মিয়া আজ সকাল আটটায় অভিযোগ করেন, ঘোড়া প্রতীকের সাইফুল ইসলাম স্বপনকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে তাঁর পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু। গতকাল সোমবার রাতভর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে তাঁর (শাহজালাল) অন্তত শতাধিক এজেন্ট ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের তুলে নিয়ে হুমকি ও মারধর করেছেন সংসদ সদস্যের সমর্থকেরা। ফলে ভোরে নতুন করে তাঁকে এজেন্ট খুঁজতে হয়েছে।
শাহজালাল মিয়া বলেন, ‘রাত ১২টায় দুপ্তারা ইউনিয়নের পাঁচগাঁও মনোহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দেওয়ানপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সব এজেন্টকে তুলে নিয়ে হুমকি দেয় একই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্যের ছোট ভাই নাজমুল ইসলাম। সকালে ভোট শুরুর আগে খাগকান্দা ইউনিয়নের ১৫ নম্বর ডোমারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পাঁচানি মাদ্রাসা কেন্দ্রে দোয়াত–কলমের অন্তত পাঁচ এজেন্ট ঢুকতে গেলে তুলে তাঁদের তুলে নিয়ে মারধরের পর বেঁধে রাখা হয়েছে।’
শাহজালাল মিয়ার অভিযোগ, তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ঘোড়া প্রতীকের সাইফুল ইসলামের স্বজন মফিজুল ইসলাম এবং মো. রুবেল এজেন্টদের মারধরের পর ওই এলাকার মরহুম চেয়ারম্যান তোঁতা মিয়ার বাড়িতে তাঁদের বেঁধে রেখেছেন।
অন্যদিকে সোনারগাঁ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন মোট চার প্রার্থী। তাঁরা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম (ঘোড়া প্রতীক), উপজেলার সদ্য সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বাবুল হোসেন ওমর (আনারস প্রতীক), উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম (মোটরসাইকেল প্রতীক) ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী হায়দার (দোয়াত-কলম প্রতীক)।
আজ সকালে মাহফুজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সোনারগাঁয়ের সম্ভুপুরা ইউনিয়নের চর কিশোরগঞ্জ, চর হোগলা ও কাঁচপুরের একটি কেন্দ্র ঘেরাও করে দখলে নিয়েছে আনারস প্রতীকের প্রার্থী বাবুল হোসেনের সমর্থকেরা। তাঁরা ঘোড়া প্রতীকের কোনো এজেন্ট ও ভোটারদের কেন্দ্রে ঢুকতে দিচ্ছেন না। এ বিষয়ে মৌখিকভাবে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন তিনি।
এসব বিষয়ে কথা বলতে আড়াইহাজারের সংসদ সদস্যের ভাই নাজমুল ইসলাম ও সোনারগাঁয়ের চেয়ারম্যান প্রার্থী বাবুল হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করে ও খুদে বার্তা পাঠিয়েও তাঁদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে এবার ভোটের মাঠে আছেন দুই প্রার্থী। তাঁরা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য হাবিবুর রহমান (দোয়াত-কলম প্রতীক) ও রূপগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু হোসেন ভূঁইয়া (আনারস প্রতীক)।
এই উপজেলায় সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য ও রংধনু গ্রুপের পরিচালক মিজানুর রহমান ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ফেরদৌসী আক্তার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্ত রূপগঞ্জের নির্বাচনে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
তিন উপজেলায় নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আজ সকালে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সাকিব আল রাব্বি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আড়াইহাজারে দুটি কেন্দ্রে এজেন্ট মারধর ও সোনারগাঁয়ে তিনটি কেন্দ্রে এজেন্ট ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ এসেছে। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিয়েছি।’