গাজীপুরে শিকলবন্দী থেকে মুক্ত হলো সেই কিশোর

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মাঝুখান গ্রামে কিশোর মিলনকে শিকল দিয়ে এভাবেই বেঁধে রাখা হয়েছিল। সম্প্রতি তোলা
প্রথম আলো

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মাঝুখান পশ্চিমপাড়া এলাকার সেই কিশোর মিলন হোসেন (১৪) শিকলবন্দী অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়েছে। তার লেখাপড়া ও থাকা-খাওয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন মেজর কনিকা আক্তার ও তাঁর স্বামী আইনজীবী কামরুল ইসলাম। শুক্রবার বিকেলে এই দম্পতি কিশোরের দায়িত্ব নেন।

প্রতিবেশী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ছোট দুই ছেলেমেয়ে ফেলে মা ময়না বেগম চলে যান। এরপর বাবা শাকিল মিয়া সন্তান দুটিকে লালনপালন করেন। গত আগস্ট মাসে শাকিল অসুস্থ হয়ে মারা যান। এর পর থেকে দুই ভাইবোন অসহায় অবস্থায় পড়ে। এর মধ্যে বোন আয়েশা আক্তারের (৯) জায়গা হয়েছে স্থানীয় এতিমখানায়। আর ভাই মিলন হোসেনের জীবন কাটছিল শিকলবন্দী অবস্থায়। তার গ্রাম পুলিশ সদস্য চাচার দাবি, মিলন দুষ্ট স্বভাবের। এ জন্য তাকে শিকলবন্দী করে রাখা হয়েছিল।

এ নিয়ে ১৪ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোর ছাপা পত্রিকায় ‘কিশোর ভাতিজাকে শিকলবন্দী করে রেখেছেন চাচা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বিষয়টি নজরে পড়ে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকার বাসিন্দা ও ঢাকা সিএমএইচের নার্সিং বিভাগে দায়িত্বে থাকা মেজর কনিকা আক্তার ও তাঁর স্বামী গাজীপুর জেলা জজ আদালতের আইনজীবী কামরুল ইসলামের।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে কিশোর মিলনদের বাড়িতে যান আইনজীবী কামরুল ইসলাম। তিনি মিলনের চাচা ও চাচিকে জানান, তাকে আর যেন শিকলবন্দী করে রাখা না হয়। সেই সঙ্গে আগামী এক–দেড় মাস যাতে মিলনের খাওয়ার কোনো সমস্যা না হয়, সে জন্য খাদ্যসামগ্রী দিয়ে আসেন।

এ বিষয়ে কামরুল ইসলাম বলেন, ‘কালিয়াকৈরর মৌচাক এলাকায় আমাদের বাসায় মিলনকে নিয়ে আসা হবে। এরপর স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে বা মাদ্রাসায় তার লেখাপড়ার ব্যবস্থা করা হবে। মিলনের ভবিষ্যতের সব দায়িত্ব আমরা নিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, পত্রিকায় সংবাদটি পড়ে তাঁর স্ত্রী খুবই আবেগপ্রবণ হয়ে যান। তাঁর স্ত্রীর আগ্রহের কারণেই কিশোর মিলনের দায়িত্ব নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

মাঝুখান গ্রামের বাসিন্দা মো. মোহসিন বলেন, এক মাসও হয়নি তাঁদের গ্রামের মো. শাকিল হোসেন অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। বাবা মারা যাওয়ার পর দরিদ্র চাচা-চাচি মিলনকে ঠিকমতো খাবার দিতে পারতেন না। মিলনের দুষ্টুমি ঠেকাতে ঘরের খুঁটির সঙ্গে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এবার মিলনকে শিকল থেকে মুক্ত করা হয়েছে। এতে তাঁরা খুশি হয়েছেন।

স্বজন ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আয়েশা ও মিলনকে রেখে তাদের মা পালিয়ে গেছেন। এরপর তাদের বাবা শাকিল মিয়া আবার বিয়ে করেন। সেই স্ত্রী থাকেন সৌদি আরবে। দীর্ঘদিন ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে ২০ আগস্ট মারা যান শাকিল। মৃত্যুর কয়েক দিন পরই মিলনের চাচা ভাতিজি আয়েশাকে স্থানীয় একটি এতিমখানায় পাঠিয়ে দেন আর শিকল দিয়ে বেঁধে রাখেন ভাতিজা মিলনকে।