কপোতাক্ষ নদের ওপর সেতু নির্মাণকাজ চলছে ধীরগতিতে। বৃহস্পতিবার বেলা একটার দিকে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার মাগুরা বাজার এলাকায়
কপোতাক্ষ নদের ওপর সেতু নির্মাণকাজ চলছে ধীরগতিতে। বৃহস্পতিবার বেলা একটার দিকে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার মাগুরা বাজার এলাকায়

মেয়াদ শেষের প্রায় দুই বছর পরও সেতুর কাজ ৬০ শতাংশ বাকি, ভোগান্তি

সাতক্ষীরার তালা উপজেলার মাগুরা বাজারের কপোতাক্ষ নদের ওপর সেতু নির্মাণকাজের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার পর প্রায় ২৩ মাস পেরিয়ে গেছে। কিন্তু সেতুর কাজে মাত্র ৪০ শতাংশ শেষ হয়েছে। বাকি ৬০ শতাংশ কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে, তা জানেন না কেউ। সেতুটি নির্মাণে ধীরগতির কারণে উপজেলার মাগুরা ও ইসলামকাটি ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন। এ কারণে স্থানীয় লোকজনকে খেয়ানৌকায় করে কপোতাক্ষ নদ ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সাতক্ষীরা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গ্রামীণ সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ (সিআইবিআরআর) প্রকল্পের আওতায় তালার মাগুরা বাজার এলাকায় কপোতাক্ষ নদের ওপর একটি সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ৮০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৫ দশমিক ৫ মিটার প্রস্থের সেতুটি নির্মাণের জন্য ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্রের কাজটি পায় খুলনার জেটটি-এসই (জয়েন্ট ভেঞ্চার) ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। সেতু নির্মাণের জন্য চুক্তিমূল্য ১১ কোটি ৬ লাখ ৮৪ লাখ টাকা। কাজ শুরু জন্য কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০২১ সালের ১২ জানুয়ারি। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের ১১ জানুয়ারির মধ্যে; কিন্তু মেয়াদ শেষের প্রায় দুই বছর পরও কাজ শেষ হয়নি।

তালা উপজেলার মধ্য দিয়ে পূর্ব-পশ্চিমে প্রবহমান কপোতাক্ষ নদ। নদের দক্ষিণ পাশে মাগুরা ইউনিয়ন ও উত্তর পাশে ইসলামকাটি ইউনিয়ন। দুই ইউনিয়নের মানুষের যাতায়াত সহজ করতে ও ভোগান্তি কমাতে সেতুটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সেতুর কাজ শেষ না হওয়ায় প্রতিদিন ইসলামকাটি, মাগুরাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে খেয়ায় ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থী, কৃষক, শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করেন।

মাজার এলাকার বাসিন্দা তনয় দাশ বলেন, সেতু নির্মাণ শুরুর পর থেকে এক দিন কাজ হলে তিন দিন বন্ধ থাকে। আড়াই বছর আগে কাজ শুরু হলেও গড়ে ছয় মাস কাজ হয়নি। দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকার পর সপ্তাহ দু-এক আগে আবার কয়েকজন কাজ শুরু করেছেন।

বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সরেজমিন দেখা যায়, সেতু নির্মাণে পাঁচ–ছয়জন শ্রমিক কাজ করছেন। সেতুটি নির্মাণের জন্য ছয়টি খুঁটির (পাইলিং ক্যাব) করার কথা। সেখানে করা হয়েছে চারটি। দুটি খুঁটি এখনো নির্মাণ করা হয়নি। নির্মাণাধীন সেতুটির পাশ দিয়ে খেয়ায় কপোতাক্ষ নদ পার হয়ে মাগুরার পাশ থেকে  ইসলামকাটিতে যাচ্ছেন কৃষিশ্রমিকেরা। স্থানীয় চায়ের দোকানি বাবুল বৈদ্য বলেন, সেতুর কাজ হচ্ছে কোনো রকমে। এভাবে কাজ করলে কবে শেষ হবে, তা কেউ বলতে পারবেন না।
স্থানীয় মাগুরা উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী রহিমা খাতুন ও সাদিয়া আক্তার জানায়, যেখানে সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে, তার পাশে আগে পাকা খেয়াঘাট ছিল। নৌকাও ছিল কয়েকটি। পারাপারে তেমন ঝুঁকি ছিল না। কিন্তু সেতু নির্মাণের জন্য পাকা খেয়াঘাট ভেঙে ফেলা হয়েছে। এর পর থেকে বাঁশের সাঁকোর ওপর দিয়ে খেয়ায় উঠতে হয়। প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী ইসলামকাটির পার থেকে মাগুরায় যাতায়াত করে।

ইসলামকাটি ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের মশিয়ার শেখ, লৎফর রহমান, জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে খেয়াঘাটে কথা হয়। তাঁরা জানান, প্রতিদিন ভোরে খেয়া দিয়ে পার হয়ে মাগুরায় কাজ করতে যান কয়েক শ কৃষিশ্রমিক। একটি খেয়ার কারণে ঘাটে পার হতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়।

সেতু নির্মাণকাজের শ্রমিক সরদার ইনামুল হক বলেন, তাঁরা কাজটি শুরু করেছেন ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে। এরপর নানা কারণে মাঝেমধ্যে কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। গত ৫ আগস্টের পর থেকে টানা তিন মাস বন্ধ রাখার পর নভেম্বর মাসে আবার কাজ শুরু করেছেন। সেতুর ৫০ শতাংশ কাজ সমাপ্ত হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যদি ঠিকমতো কাজ করে, তাহলে বাকি কাজ ২০২৫ সালের মধ্যে শেষ করা সম্ভব।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খুলনার জেটটি-এসই (জয়েন্ট ভেঞ্চার) মালিক জিয়াউল আহসানের মুঠোফোনে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠাসের সেতু নির্মাণকাজের তদারক কর্মকর্তা প্রশান্ত বিশ্বাস বলেন, অর্থনৈতিক সংকটের কারণে তাঁদের প্রতিষ্ঠান কাজ যথাসময়ে শুরু করতে পারেনি। কাজ পাওয়ার পর নির্মাণসামগ্রীর মূল্য বেড়ে যাওয়ায় কাজ করা হচ্ছে ধীরগতিতে।

সাতক্ষীরার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান জানান, কাজ দেরি করে শুরু করেছেন ঠিকাদার। এরপর নদ খননের জন্য আরও দেরি হয়েছে। বর্তমানে ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সেতুর একটি অংশের ওপরের অংশ ঢালাই দেওয়া হবে কয়েক দিনের মধ্যে। ২০২৫ সালের ৩০ মে পর্যন্ত সময় বাড়ানোর জন্য ২০২৪ সালের ১৯ নভেম্বর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বলা হয়েছে।