চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসন

নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর তাঁতিপাড়ায় হামলা, ককটেল বিস্ফোরণে

ঢিলে ঘরের ভাঙা কাঁচ দেখাচ্ছেন সুকুমার প্রামাণিক। সোমবার দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার হরিনগরে
ছবি: প্রথম আলো

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনে নির্বাচন–পরবর্তী সহিংসতায় একটি গ্রামের তাঁতি সমিতির কার্যালয়ে ভাঙচুর এবং কয়েক বাড়িতে ইটপাটকেল ছোড়া হয়েছে। নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর গতকাল রোববার সন্ধ্যা সাতটার দিকে ইউনিয়নের হরিনগর তাঁতিপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া রাত সাড়ে ১০টার দিকে গ্রামের একটি মন্দিরের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন নৌকার প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য চিকিৎসক সামিল উদ্দিন আহমেদ। মোট ১৫৮টি ভোটকেন্দ্রে তিনি পেয়েছেন ৭৯ হাজার ৮১২ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ নজরুল ইসলাম ট্রাক প্রতীকে পেয়েছেন ৭২ হাজার ৭০৯ ভোট।

আজ সোমবার দুপুরে হরিনগর গ্রামে গিয়ে কথা হয় স্থানীয় ইউপির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ভুদেব চন্দ্র দাস, আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড সভাপতি বিভূতি ভূষণ দাস, তাঁতি সমিতির নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি দ্বীজেন্দ্র নাথ দাস, সুকুমার প্রামাণিক ও আরও কয়েকজনের সঙ্গে। তাঁরা জানান, রোববার সন্ধ্যা সাতটার আগে সমিতির কার্যালয়ের সামনে এসে ২৫-৩০ জন যুবক ইটপাটকেল ছুড়ে মারেন। বাইরে রাখা কয়েকটি প্লাস্টিকের চেয়ার ভাঙচুর করেন। অশ্লীল গালিগালাজ করেন। হুমকি দিতে দিতে ফিরে যাওয়ার সময় রাস্তার পাশের সুকুমার প্রামাণিক, সুবোধ দাসসহ বেশ কয়েকজনের বাড়িতে ইটপাটকেল ছোড়েন।

ঘটনার পর থেকে সবাই ভয়ের মধ্যে আছেন জানিয়ে সুকুমার প্রামাণিক বলেন, ‘আমার বাড়িটি গ্রামের শেষ প্রান্তে। ট্রাক প্রতীকের কর্মী-সমর্থকেরা সমিতির কার্যালয়ে সন্ত্রাস করে যাওয়ার সময় আমার বাড়িতে বৃষ্টির মতো ঢিল ছোড়ে। ঘরের কাচ ভেঙে যায়। বাড়িতে তখন স্ত্রী একাই ছিলেন।’

ইউপি সদস্য ভূদেব চন্দ্র দাস বলেন, ‘তাঁতি সমিতির কার্যালয়ের সামনে ভাঙচুর করার সময় আমি প্রতিবাদ জানাই, কিন্তু তারা আমার কথা শোনেনি। চিৎকার করে তারা গালিগালাজ করছিল।’ ঘটনায় কারা জড়িত, তাদের নাম বলতে চাননি ভূদেবসহ অন্যরা। এ প্রসঙ্গে তাঁরা বলেন, ‘এলাকায় আমাদের ব্যালেন্স করে চলতে হয়।’

হরিনগর তাঁতিপাড়ার লোকজন জানান, এই গ্রামের লোকজন যে প্রার্থীকে ভোট দেন, তিনিই বেশি ভোট পান। এ জন্য তাঁরা ট্রাক প্রতীকের পক্ষের চাপ থেকে মুক্ত থাকতে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ভাগাভাগি করে ভোট দিয়েছেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের নাম না বললেও তাঁরা জানান, পাশের গ্রামের ট্রাকের সমর্থকেরা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন।

ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি বিভূতি ভূষণ দাস বলেন, ‘৭০ সাল থেকে আওয়ামী লীগে ভোট দিয়ে আসছি। কিন্তু কোনোবারই এমন ঘটনা ঘটেনি। বরাবরই এ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ বেশি ভোট পায়। এবার ট্রাক মার্কাই নৌকার চেয়ে দুই ভোট বেশি পেয়েছে। কিন্তু এতে তাদের মনঃপূত হয়নি। তারা (ট্রাকের লোকজন) আরও বেশি ভোট বেশি আশা করেছিল।’

এ ঘটনায় মামলা হবে জানিয়ে শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘তবে কারা জড়িত, তা কেউ বলতে চান না। না বলুক, আমাদের সোর্স দিয়ে সেটা খুঁজে বের করব। মামলায় কেউ বাদী হতে না চাইলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে। জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হবে। মন্দিরের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। বাড়িতে ঢিল ছুড়লেও কোনো বাড়িতে ঢোকেনি কেউ। ওই গ্রামে উভয় পক্ষেরই লোক আছে।’

এ বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও তাঁর অনুসারীদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এই প্রার্থীর অন্যতম সক্রিয় কর্মী নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।

গ্রামটিতে হামলার কথা শুনেছেন জানিয়ে সংসদ সদস্য সামিল উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনার কথা শুনেছি। পুলিশকে বলা হয়েছে। আমি আজই (সোমবার) ওই গ্রামে গিয়ে প্রকৃত ঘটনা জানার পর এ বিষয়ে কথা বলব।’

তবে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত ওই গ্রামে যাননি সামিল উদ্দিন।