বরিশাল সিটি নির্বাচন

পাল্টাপাল্টি সমাবেশের মধ্য দিয়ে সাদিক ও খায়ের আবদুল্লাহর বিরোধ প্রকাশ্যে

মে দিবস উপলক্ষে সভার আয়োজন করে জাতীয় শ্রমিক লীগ বরিশাল জেলা ও মহানগর শাখা। এতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন। নগরের সদর রোডে
ছবি: প্রথম আলো

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নকে কেন্দ্র করে বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ও তাঁর চাচা দলীয় প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহর সমর্থকদের মধ্যে ভেতরে-ভেতরে ক্ষোভ ও বিরোধ চললেও এত দিন তা প্রকাশ্যে আসেনি। সোমবার মে দিবস উপলক্ষে একই স্থানে পৃথক মঞ্চ করে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ করার মধ্য দিয়ে সেই সুপ্ত বিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে।

বিরোধের এই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল গত শনিবার। ওই দিন বরিশালে পৃথক দুটি অনুষ্ঠানে সদর আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক কারও নাম উল্লেখ না করে বরিশালে প্রতিহিংসার রাজনীতি, নগরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের স্থবিরতাসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ঝাড়েন।

প্রতিমন্ত্রীর এই বক্তব্য সাদিক আবদুল্লাহর সমর্থকদের মধ্যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এর রেশ কাটতে না কাটতেই বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে সাদিক আবদুল্লাহ ও তাঁর চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহর মধ্যে শীতল লড়াই প্রকাশ্যে আসে মে দিবস উপলক্ষে সোমবার দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ডাকাকে কেন্দ্র করে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগর আওয়ামী লীগের অন্তত চারজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে এ ধরনের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নির্বাচনী মাঠে একটা সুস্পষ্ট বার্তা দেবে, আওয়ামী লীগ এখানে সংঘবদ্ধ নয়।

ওই নেতাদের মধ্যে দুজন মনে করেন, মে দিবস ঘিরে আওয়ামী লীগের একটি কর্মসূচি হতে পারত। নগর ও জেলা আওয়ামী লীগ এমন উদ্যোগ নিয়ে দলীয় প্রার্থীকে সেই মঞ্চে কথা বলার সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল। ওই দুই নেতা এ ক্ষেত্রে গত ২০১৩ সালের সিটি নির্বাচনের প্রসঙ্গটির উদাহরণ সামনে আনেন। ওই নির্বাচনে প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরণ দলের একটি অংশের গোপন বিরোধিতার কারণে হেরে গিয়েছিলেন।

মহান মে দিবস উপলক্ষে সোমবার নগরের সদর রোডে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে পৃথক দুটি মঞ্চে সমাবেশের আয়োজন করে শ্রমিক লীগ। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করলেও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। খায়ের আবদুল্লাহর সমর্থক জেলা ও মহানগর শ্রমিক লীগ দুপুর ১২টায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে। বেলা তিনটায় একই স্থানে সমাবেশ করেন সাদিক আবদুল্লাহর সমর্থক শ্রমিক লীগের অপর অংশের নেতা-কর্মীরা। দুপুর ১২টার সমাবেশে খায়ের আবদুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন। তবে সাদিক আবদুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন না।
আবুল খায়ের আবদুল্লাহর সমর্থক জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি শাহজাহান হাওলাদার, মহানগর শ্রমিক লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন, জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সুলতান মাহামুদসহ অন্য নেতারা এই সমাবেশের আয়োজক ছিলেন।

সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারী মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক পরিমল চন্দ্র দাসসহ অন্য নেতারা পাল্টা সমাবেশ করেন বিকেলে।

এ ব্যাপারে বরিশাল নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আবুল খায়ের আবদুল্লাহর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য মীর আমিন উদ্দীন বলেন, ‘এর পেছনে আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে, নগরবাসীর মধ্যে এর মাধ্যমে কৌশলে একটি বার্তা দেওয়া, সেটি হলো আওয়ামী লীগের ভেতরে বিভক্তি আছে। এর সুযোগ যাতে অন্য প্রার্থী নিতে পারেন, সে লক্ষ্যেই উদ্দেশ্যমূলকভাবে এটা করা হয়েছে বলে আমি মনে করি।’

তবে সাদিক আবদুল্লাহর পক্ষে সমাবেশ আয়োজক মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক পরিমল চন্দ্র দাস বলেছেন, ‘মহান মে দিবস উপলক্ষে আমরা প্রতিবছরই আলোচনা সভার আয়োজন করি। জেলা ও মহানগর শ্রমিক লীগ এ সভা আহ্বান করে। এতে বিভক্তির কিছু দেখছি না। দল যাঁকে নৌকা দিয়েছে, তাঁর সঙ্গেই আমরা কাজ করব। দলীয় সিদ্ধান্ত তো মানতেই হবে।’

দলীয় সূত্র জানায়, মহান মে দিবসে বড় ধরনের জমায়েত করার পরিকল্পনা নিতে গত শনিবার সন্ধ্যায় নগরের ৩০টি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভার্চ্যুয়ালি সভা করেন মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ। নগরের কালীবাড়ি সড়কে তাঁর বাসভবনের সামনে দলীয় নেতা-কর্মীদের এই সভায় ঢাকা থেকে যোগ দেন মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ। এ লক্ষ্যে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীরও ওই দিন ঢাকায় যান এবং তিনিও ভার্চ্যুয়াল সভায় যোগ দিয়ে বক্তব্য দেন। ওই সভায় মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ ও এ কে এম জাহাঙ্গীর মহান মে দিবস উপলক্ষে সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিয়ে আলাপ করেন। ওই সভায় মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ অবশ্য তাঁর চাচার পক্ষে নির্বাচনী মাঠে কাজ করার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা-বর্মীদের কাজ করার আহ্বান জানান।

দলীয় সূত্র জানায়, সাদিক আবদুল্লাহর পক্ষে পাল্টা সমাবেশ আহ্বান করা নিয়ে নগর ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যেও ভিন্নমত ছিল। কিন্তু এসব ভিন্নমত উপেক্ষা করেই এই সভা আহ্বান করা হয়।

এ বিষয়ে জানার জন্য নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীরের সঙ্গে সোমবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তাঁর মুঠোফোনে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সাতবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

মহানগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আফজালুল করিম বলেন, এ ধরনের পাল্টা সমাবেশ ভোটারদের মধ্যে ভুল বার্তা দেবে নিঃসন্দেহে।

আবুল খায়ের আবদুল্লাহ দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বরিশালে আসেন গত ১৮ এপ্রিল। ওই দিন তাঁকে দেওয়া সংবর্ধনায় উপস্থিত ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর ও জেলা সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস। তাঁরা ওই দিন দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু দুটি সভায় উপস্থিত হয়ে বক্তৃতা দেওয়া ছাড়া দলীয় প্রার্থীর পাশে তাঁদের আর দেখা যায়নি। এমনকি যোগযোগও রক্ষা করছেন না।

জানতে চাইলে তালুকদার মো. ইউনুস সোমবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘পৃথক দুটি সমাবেশ আহ্বান করায় আমি কোনোটিতেই অংশ নেব না।’ পাল্টাপাল্টি সমাবেশ করাটাকে কীভাবে দেখছেন—এমন প্রশ্নে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।