ভারত সীমান্তবর্তী ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার বাঘাডাঙ্গা গ্রাম। অধিকাংশ গ্রামবাসী কৃষিকাজ করেন। গ্রামের ৬০-৭০ জন ব্যক্তি চোরাকারবারির সঙ্গে জড়িত। আগে তাঁরা গরু চোরাচালান করলেও এখন কেউ কেউ স্বর্ণ চোরাচালান করেন। সম্প্রতি বিজিবির হাতে স্বর্ণের একটি চালান ধরা পড়ে। বাঘাডাঙ্গা গ্রামের তরিকুল ইসলাম ওই স্বর্ণের চালান ধরিয়ে দেন বলে অভিযোগ করেন অন্য কারবারিরা। এ নিয়ে মারামারির ঘটনাও ঘটে। ওই ঘটনার জেরেই প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে দুজনকে হত্যা করা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার বাঘাডাঙ্গা গ্রাম ঘুরে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য উঠে আসে। গতকাল বুধবার বিকেলে ওই গ্রামে ‘স্বর্ণ চোরাচালান নিয়ে দ্বন্দ্বে’ গুলি করে দুজনকে হত্যা করা হয়। নিহত ব্যক্তিরা হলেন ওই গ্রামের শামীম ইসলাম (৩৫) ও মন্টু মণ্ডল (৫০)।
আজ বেলা তিনটা পর্যন্ত তাঁদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের মর্গে ছিল। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি। পুলিশ কাউকে আটকও করতে পারেনি। গ্রামে পুলিশ টহল আছে। স্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাঘাডাঙ্গা গ্রামের মোড়ে মোড়ে পুলিশ অবস্থান করছে। জোড়া খুনের ঘটনা নিয়ে এলাকার মানুষ নানা আলোচনা করছেন। ঘটনাস্থল তরিকুল ইসলামের বাড়ির সামনে লোকজন আসছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠা তরিকুল ও তাঁর ছেলে সাইদুল ইসলাম বাড়িতে নেই। এলাকাবাসীর ধারণা, তাঁরা ভারতে পালিয়ে গেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ভারত সীমান্তঘেঁষা গ্রামটিতে প্রায় ১৩ হাজার মানুষের বসবাস। যাঁদের বেশির ভাগের পেশা কৃষি। গ্রামে ৬০-৭০ জন মানুষ আছেন, যাঁরা চোরাকারবারির সঙ্গে জড়িত। তাঁদের মধ্যে ৭-৮ জন আগে গরু চোরাচালান করলেও এখন স্বর্ণ চোরাচালান করেন। গতকালের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিরাও স্বর্ণের চোরাচালান করে বলে তাঁরা কয়েকজন জানান। ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্বে তাঁরা মারা গেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক বাসিন্দা প্রথম আলোকে বলেন, সম্প্রতি বিজিবির হাতে স্বর্ণের একটি চালান ধরা পড়ে। বাঘাডাঙ্গা গ্রামের তরিকুল ওই চালান ধরিয়ে দেন বলে দোষারোপ করেন অন্য কারবারিরা। এ নিয়ে শামীম, তাঁর বড় ভাই রফি উদ্দিন ও চাচা মন্টু মণ্ডলের সঙ্গে তরিকুলের রেষারেষি শুরু হয়। দুই মাস আগে বাঘাডাঙ্গা বাজারে মারামারিও হয়। গতকাল শামীম-মন্টুরা তরিকুলের বাড়িতে হামলা করেন। তখন তরিকুল সিঁড়ি বেয়ে প্রাচীরের ওপর উঠে গুলি চালান।
তরিকুলের প্রতিবেশীদের ভাষ্য, তরিকুলের বাড়িতে হামলা হলে তিনি প্রথমে অস্ত্র বের করে তাঁদের (শামীম-মন্টু) চলে যেতে বলেন। তাঁরা না যাওয়ায় তিনি গুলি চালান। এতে দুজন নিহত হন। ঘটনার পর থেকে তরিকুল ছেলেকে নিয়ে পালিয়ে যান। তাঁর স্ত্রী জ্যোৎস্না বেগম জানান, তরিকুল কোথায় গেছেন, তিনি জানেন না।
মহেশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আজ বিকেল পর্যন্ত থানায় মামলা হয়নি। তবে মামলার প্রক্রিয়া চলমান। পুলিশ এ পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি। হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্তসহ জড়িত অন্যদের ধরতে পুলিশের তৎপরতা অব্যাহত আছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালের পর বাঘাডাঙ্গা সীমান্তে চোরাচালানের সময় বিএসএফের গুলিতে অন্তত ১০ জন প্রাণ দিয়েছেন। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এ সীমান্তে হঠাৎ স্বর্ণ চোরাচালানকারিরা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি স্বর্ণের চালান আটকের পর বিষয়টি দৃশ্যমান হয়েছে। সর্বশেষ গত বুধবার মহেশপুর উপজেলার মাটিলা সীমান্ত থেকে ৪০টি স্বর্ণের বার জব্দ করে বিজিবি। তখন রিমন হোসেন নামের একজনকে আটক করা হয়।
বিজিবি সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মহেশপুর সীমান্ত এলাকা থেকে ৩০৪টি স্বর্ণের বার জব্দ করেছে বিজিবি। ৩৮ কেজি ৪০ গ্রাম ওজনের ওই স্বর্ণের বাজারমূল্য আনুমানিক ২৬ কোটি ২৯ লাখ ১৪ হাজার টাকা। এ সময় আটজন চোরাকারবারি আটক হয়েছেন। মামলা হয়েছে ১২টি।