খালে পানি না থাকায় শুষ্ক মৌসুমে সেচ–সংকট দেখা দিচ্ছে।
বর্ষা মৌসুমে পানি সরতে না পারায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।
ময়লা–আবর্জনা ফেলে খাল ভরাট করে ফেলা হয়েছে।
পলিথিন, খাবারের উচ্ছিষ্ট, কাগজ, প্লাস্টিকের বোতল, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে যত্রতত্র। দেখলে মনে হবে আবর্জনার ভাগাড়। দুর্গন্ধে টেকা দায়। এ চিত্র পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলায় বয়ে যাওয়া পীরতলা খালের। বর্তমানে খালে পানির প্রবাহ নেই। ভাগাড় হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে খালটি। অনেকে আবার খালের জমি দখল করে স্থাপনা গড়ে তুলেছেন। একসময়ের পানিতে টইটম্বুর খালটি এখন মৃতপ্রায়।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, শুকনা মৌসুমে খেতের জন্য পানি–সংকট দেখা দিচ্ছে। এদিকে বর্ষা মৌসুমে পানি সরতে না পারায় খেতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে খালের দুই পাড়ের কৃষিকাজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
দুমকি উপজেলার পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব গেটসংলগ্ন পীরতলা বাজার। উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়নের বয়ে যাওয়া এই খালের দক্ষিণে লোহালিয়া নদীর গাবতলী থেকে পীরতলা বাজার হয়ে আঙ্গারিয়া ইউনিয়নের পায়রা নদীতে মিলেছে।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা আরও বলেন, পাঁচ কিলোমিটার এই খালে আগে নৌকা চলত। পীরতলা বাজারের ব্যবসায়ীরা নৌকায় মালামাল নিয়ে আসতেন। এই খালের দুই পাড়ে অন্তত ৫০০ হেক্টর কৃষিজমি রয়েছে, যার সেচকাজ এই খালের পানি দিয়ে হতো। খেতের পানি সংরক্ষণের জন্য দুই প্রান্তে ৮০ দশকে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) পীরতলা খালের আঙ্গারিয়া, কদমতলা ও গাবতলী এই তিনটি স্থানে জলকপাট নির্মাণ করেছিল। কিন্তু বছর দশেক আগে জলকপাটগুলো অকেজো হয়ে পরলে স্থানীয় লোকজন খালের মুখে বাঁধ দিয়ে দেন।
এদিকে ২০০০ সালের ৮ জুলাই দুমকিতে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। পীরতলা বাজারের গুরুত্ব অনেক বেড়ে যায়। তখন অনেকেই নিজের জমি দাবি করে খালের মধ্যে সীমানা দিয়ে পাকা স্থাপনাও নির্মাণ করে ফেলে। এ ছাড়া খালের দুই পাড়ের মানুষ বাজারের আবর্জনা সব খালে ফেলতে থাকে। এই অবস্থায় খাল আবর্জনার স্তূপ হয়ে পরে।
পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার পীরতলা খাল ভরাট করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হয়েছে। গড়ে তোলা হয়েছে ভাগাড়। এতে অনেক স্থানে খালটির অস্তিত্ব নেই।
গত বুধবার দেখা যায়, খালের দুই পাড় দখলে নিয়ে ঘরবাড়ি আর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে বসেছেন শতাধিক ব্যক্তি। পীরতলা বাজারের দক্ষিণে আমতলা থেকে উত্তরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পর্যন্ত বেশি অবৈধ স্থাপনা চোখে পড়ে।
পীরতলা বাজারের আরেক ব্যবসায়ী মো. শামীম আজাদ খালের পাড়ে স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। তিনি বলেন, ক্রয়সূত্রে এই জমির মালিক তাঁরা।
বাজারের কিছু ব্যবসায়ী বলেন, খালটি পরিষ্কার করে পানির স্বাভাবিক প্রবাহের জন্য জলকপাট নির্মাণ করতে হবে।
এদিকে খালে থাকা আবর্জনার দুর্গন্ধে দুর্ভোগে পড়েছে সৃজনী বিদ্যানিকেতন নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। পীরতলা বাজারের পূর্ব দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ বিদ্যালয়ের অবস্থান। বিদ্যালয়টির পাশ ঘেঁষে বয়ে গেছে পীরতলা খাল। খালের পাড়ের খাবার হোটেলসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। প্রতিদিন পীরতলা বাজারসহ খাবার হোটেলের বর্জ্য খালে ফেলা হচ্ছে। ফলে এ স্থানে অপেক্ষাকৃত বেশি দুর্গন্ধ।
প্রধান শিক্ষক মো. আবদুল কুদ্দুস বলেন, খালটিতে আবর্জনা ফেলে পরিবেশ নষ্ট করছে। শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পরেছে। তাঁরা চান দ্রুত খালটি দূষণ ও দখলমুক্ত করা হোক।
খালটিতে স্বাভাবিক পানির প্রবাহ বন্ধ হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন খালের দুই পাড়ের কৃষকেরা। শ্রীরামপুর গ্রামের কৃষক আলী হোসেন প্যাদা (৬০) জানায়, খালের পাড়ে তাঁর দুই একর কৃষি জমি রয়েছে। খেতের পানিনিষ্কাশন হয় না। জলাবদ্ধতায় ক্ষতি হচ্ছে, আবার শুকনা মৌসুমে পানির সংকট দেখা দিচ্ছে। স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পীরতলা খালের দুই পাড় দখলের ফলে ইউনিয়নের অন্তত দেড় হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। খাল দখলমুক্ত ও দুই মুখসহ তিনটি স্থানে জলকপাট দেওয়ার দাবি জানান তাঁরা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইমরান হোসেন বলেন, এই আমন মৌসুমের অতিবৃষ্টির কারণে খেতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বীজতলা ডুবে রয়েছে। এ বছরও ২৭০ হেক্টর চাষাবাদের আওতায় আনা যাচ্ছে না।
ইউএনও মো. শাহীন মাহামুদ বলেন, পীরতলা খালটি দখলমুক্ত করাসহ খালের আবর্জনার পরিষ্কার করার নির্দেশনা রয়েছে। তিনি সরেজমিনে খালটি দেখেছেন। প্রথমে খালের আবর্জনা পরিষ্কার করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এরপর জেলা প্রশাসন থেকে খালের দুই পাড়ে অবৈধ দখলদারদের তালিকা করে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং পরে খাল খনন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) পটুয়াখালী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ হোসেন বলেন, স্থানীয় লোকজন খালের মুখে বাঁধ দেওয়ায় পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। তবে জলকপাট নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।