বরগুনা–১ (সদর, আমতলী ও তালতলী) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুসহ ৯ জনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভার নামে নির্বাচনী প্রচারণামূলক জনসভা করার অভিযোগে এই নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
বরগুনা-১ আসনের নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আহমদ সাঈদ স্বাক্ষরিত নোটিশটি আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে গ্রহণ করেন অভিযুক্তদের আইনজীবী মজিবুল হক। নোটিশে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে অভিযুক্তদের লিখিত বক্তব্য নির্বাচনী অনুসন্ধানী কমিটির কাছে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ধীরেন্দ্র দেবনাথের পাশাপাশি কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়া ব্যক্তিরা হলেন বরগুনার আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও আমতলী পৌরসভার মেয়র মো. মতিয়ার রহমান, তালতলী উপজেলার কড়ইবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল বারেক মাঝি, তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রেজবি-উল-কবির জমাদ্দার, আমতলী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ কাদের, আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জি এম হাসান, তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও তালতলী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান, সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও জেলা কৃষক লীগের সভাপতি আজিজুল হক এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্বাস হোসেন মন্টু মোল্লা।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্তরা গত শনিবার সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত তালতলী উপজেলা খাদ্য গুদামসংলগ্ন কলবাড়িতে উপজেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠানের নামে নির্বাচনী প্রচারণামূলক একটি জনসভা করেন এবং নির্বাচনে জয় লাভের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন, যা নির্বাচনী আচরণবিধিমালার লঙ্ঘন বলে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম সরোয়ার টুকুর পক্ষে আইনজীবী হুমায়ূন কবির নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। ওই লিখিত অভিযোগে বলা হয়, আমতলী পৌরসভার মেয়র মো. মতিয়ার রহমান স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এজেন্ট দিতে দেবেন না বলে বক্তব্য প্রদান করেন। ১৮ তারিখের পর খেলা শুরু হবে। আওয়ামী লীগের বাহিরে কিছুই হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ‘ঠ্যাং ভেঙে দেওয়ার’ হুমকি দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণামূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে তালতলী উপজেলার কড়ইবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল বারেক মাঝির বিরুদ্ধে।
নির্বাচন কমিশনের জাতীয় সংসদ নির্বাচন আচরণবিধিমালায় বলা আছে, কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কিংবা তার মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তাঁর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি ভোট গ্রহণের জন্য নির্ধারিত তিন সপ্তাহ সময়ের আগে কোনো ধরনের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করতে পারবেন না। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ হবে। এর আগে ভোটের প্রচার চালানোর সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে অভিযুক্তদের পক্ষে নোটিশ গ্রহণকারী আইনজীবী মজিবুল হক বলেন, আজ সকালে সবার পক্ষে তিনি জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কাযালয় থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ গ্রহণ করেছেন। সবার কাছে তিনি চিঠি পৌঁছে দেবেন।
এদিকে নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘণের অভিযোগে গতকাল রোববার দুপুরে আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা বন্ধ করে দেয় উপজেলা প্রশাসন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশেষ বর্ধিত সভা গতকাল সকাল ১০টায় পৌর শহরের আবদুল্লাহ মার্কেটে শুরু হয়। সভা স্থানে ছয়টি মাইক ব্যবহার করে সভার কার্যক্রম চালাচ্ছিলেন নেতারা। এতে আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা নৌকার জনসভায় পরিণত হয়।