গজনি অবকাশকেন্দ্র, মধুটিলা ইকোপার্কসহ অনেক কিছু নিয়ে শেরপুর এখন বৃহত্তর ময়মনসিংহের আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র। সড়কপথে যোগাযোগ ভালো হওয়ায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে খুব সহজে ও স্বল্প সময়ে শেরপুরে ভ্রমণ করা যায়। এই শীতে ভ্রমণের জন্য স্বাগত জানাচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি গারো পাহাড়ের শেরপুর।
গজনি অবকাশকেন্দ্র
শেরপুর জেলা সদর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে ঝিনাইগাতী উপজেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের পাদদেশে গজনি অবকাশকেন্দ্র অবস্থিত। এলাকাটি ব্রিটিশ আমল থেকেই পিকনিক স্পট হিসেবে পরিচিত। গজনি এলাকায় একটি পুরোনো বটগাছের পূর্ব দিকে আনুমানিক ২০০ ফুট উঁচু পাহাড়ের টিলায় নির্মাণ করা হয়েছে তিন তলার ‘অবকাশ ভবন’। এটি পর্যটকদের জন্য রেস্টহাউস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আছে পাতালপুরী, মৎস্যকন্যা, হাতিসহ বিভিন্ন প্রাণীর ভাস্কর্য। গারো পাহাড়ের মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে সাইট ভিউ টাওয়ার। এখানে উঠে চারপাশে তাকালে চোখে পড়ে শুধু সবুজ আর সবুজ। দূরে আছে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সবুজে ভরা পাহাড়।
পর্যটক ও ভ্রমণপিপাসুদের আকৃষ্ট করতে সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গজনি অবকাশকেন্দ্রে ছয়টি নতুন রাইডার চালু করা হয়েছে। লেকে প্যাডেল বোটে চড়ে বেড়ানোর সুযোগ আছে। পাহাড়ের বুকজুড়ে তৈরি করা হয়েছে সুদীর্ঘ ওয়াকওয়ে। লেকের পাড় ধরে হেঁটে যাওয়া যাবে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে। পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম জলপ্রপাত ‘আলোকের ঝরনাধারা’।
মধুটিলা ইকোপার্ক
গারো পাহাড়ের চারদিকে সবুজের মায়াময় পরিবেশ। নৈসর্গিক সৌন্দর্যমণ্ডিত এই মধুটিলায় গড়ে তোলা হয়েছে আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র ‘মধুটিলা ইকোপার্ক’। শেরপুর জেলা সদর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে নালিতাবাড়ী উপজেলার শমশ্চূড়া বিটের ৪০ হেক্টর বনভূমি জুড়ে গড়ে উঠেছে পার্কটি। এই পার্কের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা।
গারো পাহাড়ের মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ১০০ ফুটেরও বেশি উচ্চতার ওয়াচ টাওয়ার। এখানে উঠে সবুজের সমারোহে চোখে জুড়িয়ে যায়।
ঐতিহাসিক ঘাগড়ালস্কর খান মসজিদ
সোয়া ২০০ বছরের প্রাচীন ঐতিহাসিক ঘাগড়ালস্কর খান মসজিদটি স্থাপত্যকলার এক অনুপম নিদর্শন। এটি শেরপুর জেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে ঝিনাইগাতী উপজেলার ঘাগড়ালস্কর গ্রামে অবস্থিত। কালের আবর্তে এটি এখন খানবাড়ি মসজিদ নামে পরিচিত। ২০০২ সাল থেকে এটি জাতীয় জাদুঘর ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের নিয়ন্ত্রণে আছে।
মসজিদে যেসব নিদর্শন পাওয়া গেছে সে অনুসারে ধারণা করা হয়, বক্সার বিদ্রোহীদের নেতা হিরোঙ্গি খাঁর বিদ্রোহের সময় মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল। আজিমোল্লাহ খান মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। মসজিদটির দরজার ওপর খোদাই করা একটি ফলকে আরবি ভাষায় এর প্রতিষ্ঠাকাল উল্লেখ করা হয়েছে হিজরি ১২২৮ বা ইংরেজি ১৮০৮ সাল। মসজিদের মাঝখানে বড় গম্বুজের চারপাশ ঘিরে আছে ছোট-বড় ১০টি মিনার।
মাই সাহেবা মসজিদ
মাই সাহেবা মসজিদের নির্মাণকাল আনুমানিক ২৫০ বছর আগে। এটিও এ জেলার প্রাচীন নিদর্শনের একটি। বর্তমানে মসজিদটি আধুনিক ভাবধারায় পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। বক্রাকারে খিলানের ব্যবহার এবং সুউচ্চ মিনার দুটি দৃষ্টিনন্দিত। এটি শেরপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে শেরপুর সরকারি কলেজর দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে অবস্থিত।
গোপীনাথ ও অন্নপূর্ণা মন্দির
শেরপুর শহরের নারায়ণপুর এলাকায় অবস্থিত গোপীনাথ ও অন্নপূর্ণা মন্দিরের নির্মাণকাল ১৭৮৩ সাল। নির্মাতা জমিদার সত্যেন্দ্র মোহন চৌধুরী ও জ্ঞানেন্দ্র মোহন চৌধুরী। পাঁচ কক্ষবিশিষ্ট মন্দিরটি পদ্মস্তম্ভ দ্বারা দণ্ডায়মান। স্তম্ভের শীর্ষে ও কার্নিশে আছে ফুল ও লতাপাতার নকশাসংবলিত অপরূপ স্থাপত্য। মন্দিরের জানালাগুলোর ওপরে আছে কারুকার্য।
জি কে পাইলট উচ্চবিদ্যালয়
জি কে পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের নির্মাণকাল ১৯১৯ সাল। এর প্রতিষ্ঠাতা জমিদার গোবিন্দ কুমার চৌধুরী। ব্রিটিশ ধারায় নির্মিত প্রতিষ্ঠানটিতে অনেকগুলো পাঠদান কক্ষ, সুপ্রশস্ত জানালা আছে। সামনের পুকুরটি স্কুলের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে।
দুই জিআই পণ্য
শেরপুরে আছে দুটি ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য, ছানার পায়েস ও তুলসীমালা চাল। এখানে বেড়াতে এলে ছানার পায়েসের স্বাদ নেওয়ার পাশাপাশি সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়া যাবে সুগন্ধি তুলসীমালা চাল।