ময়মনসিংহে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) অভিযানের পর ফয়সাল খান নামের এক তরুণের মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি। তিন কার্যদিবস শেষে গতকাল বুধবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা থাকলেও জমা দেওয়া হয়নি। তদন্তের জন্য আরও কিছু সময় লাগবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় মামলার ৯ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আজিজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘তদন্ত কমিটি কাজ করছে। দেখা যাক, তারা কখন প্রতিবেদন দিতে পারে। মৌখিকভাবে আমাকে জানানো হয়েছে, কাজটি চলমান রয়েছে, শেষ করতে কয়েক দিন লাগবে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ ছাড়া আসামি ধরতে আমাদের অনেক টিম কাজ করছে। আমরা বিষয়টিকে খুব বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।’
গত রোববার রাতে জেলা পুলিশ সুপার তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন। অভিযানে ডিবি পুলিশের তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় ঘটনাটিতে ‘পুলিশের ব্যত্যয়’ খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল। তদন্ত শেষ করতে আরও কত দিন সময় লাগতে পারে, এ বিষয়ে জানতে গতকাল বুধবার রাত থেকে আজ বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত কয়েক দফায় ফোন করা হয় তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মো. শামীম হোসেনকে। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি।
ফয়সাল খান ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সরিষা কাশিপুর এলাকার মো. সেলিম খানের ছেলে। তিনি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ শেষ করে নগরের কেওয়াটখালী পাওয়ার হাউস রোডে বড় বোনের বাসায় থেকে চাকরির জন্য চেষ্টা করছিলেন।
ফয়সালের স্বজনদের ভাষ্য, চার বছর ধরে ফয়সালের সঙ্গে একই এলাকার এক তরুণীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সম্প্রতি মেয়েটির সরকারি চাকরি হয়। এর পর অন্য আরেকজনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে ঠিক হলে ফয়সালের সঙ্গে তরুণীর দূরত্ব তৈরি হয়। ফয়সাল বিয়েতে বাধা দিতে চাইলে তরুণীর বাবা ১০ নভেম্বর পর্নোগ্রাফি আইনে থানা ও ডিবি পুলিশের কাছে একটি অভিযোগ করেন। ওই দিন রাত সাড়ে নয়টার দিকে ফয়সালের বোনের বাসায় অভিযান চালায় ডিবি পুলিশ। ডিবির অভিযানের সময় দুজন বহিরাগত সঙ্গে ছিলেন। তাঁর মধ্যে একজন ছিলেন তরুণীর খালাতো ভাই। ডিবি অভিযান চালিয়ে যাওয়ার পর বাসার সামনে ফয়সালকে অচেতন ও রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ১৫ নভেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়।
এলাকাবাসী ও প্রতিবেশীদের দাবি, ওই অভিযানের সময় তরুণীর এক খালাতো ভাই ও অজ্ঞাতপরিচয় আরেক তরুণকে সঙ্গে নিয়ে যায় ডিবি। অভিযানে তাঁদের সঙ্গে থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ফয়সালের মৃত্যুর ঘটনায় ১২ নভেম্বর রাতে কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা করেন ফয়সালের বাবা সেলিম খান। এতে ওই তরুণীর বাবাসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিরা হত্যার উদ্দেশ্যে ছাদ থেকে ৬০ ফুট নিচে ফয়সালকে ফেলে দিয়েছে বলে মামলায় এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে।