দ্বৈত নাগরিকত্বসংক্রান্ত জটিলতায় প্রার্থিতা বাতিলের পর প্রথম নির্বাচনী এলাকায় ফিরেছেন বরিশাল-৪ (মেহেন্দীগঞ্জ-হিজলা) আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাম্মী আহম্মেদ। আজ বুধবার শাম্মী আহম্মেদ প্রথমে মেহেন্দীগঞ্জ ও পরে হিজলায় ফিরে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন।
হিজলায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শাম্মী আহম্মেদ বলেন, ‘আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। তবে আইনের প্রতি আমি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল। আশা করি, আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে প্রার্থিতা ফিরে পাব।’
সকালে বরিশাল হয়ে মেহেন্দীগঞ্জে আসেন শাম্মী আহম্মেদ। তাঁকে বরণ করতে মেহেন্দীগঞ্জ স্টিমার ঘাটে নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা উপস্থিত ছিলেন। বেলা আড়াইটার দিকে তিনি মেহেন্দিগঞ্জ থেকে হিজলার বাউশিয়া লঞ্চঘাটে এসে পৌঁছালে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী তাঁকে বরণ করেন। এরপর তিনি নেতা-কর্মীদের নিয়ে হিজলা উপজেলা সদরের টেকের বাজার, উপজেলা সদর, হরিনাথপুর ইউনিয়নের হরিনাথপুর বাজার ও গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়নের কাউরিয়া বাজারে যান। এ সময় তিনি ২৯ ডিসেম্বর বরিশালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় নেতা-কর্মীদের যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান।
বরিশাল-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য পংকজ নাথ। এবার তাঁর জায়গায় আওয়ামী লীগে মনোনয়ন দেওয়া হয় দলের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহম্মেদকে। কিন্তু দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকায় নির্বাচন কমিশন তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করে। ওই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করলেও আদালত কমিশনের দেওয়া আদেশ বহাল রাখেন। এরপর প্রার্থিতা ফিরে পাওয়াসহ প্রতীক বরাদ্দের নির্দেশনা চেয়ে গতকাল মঙ্গলবার লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেছেন তিনি। আবেদনটি ২ জানুয়ারি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।
শাম্মী আহমেদের আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইতিমধ্যে হাইকোর্টের আদেশের প্রত্যয়িত অনুলিপি পেয়েছি। অস্ট্রেলিয়া দূতাবাস থেকে তাঁর নাগরিকত্ব প্রত্যাহারের আবেদন মঞ্জুরের তথ্যও হাতে এসেছে। দূতাবাসে ২৭ নভেম্বর আবেদনটি করা হয়েছিল। আবেদনটি ২২ ডিসেম্বর অনুমোদিত হয়েছে। অনুমোদনের বিষয়টি দূতাবাস ও দুই দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে। নাগরিকত্ব প্রত্যাহারের আবেদন করার দিন (২৭ নভেম্বর) থেকেই এটি কার্যকর হবে। এ কারণে প্রার্থিতা ফিরে পাওয়াসহ শাম্মী আহমেদকে প্রতীক বরাদ্দ দিতে নির্দেশনা চেয়ে আবেদনটি করা হয়েছে। ২ জানুয়ারি ওই আবেদনের শুনানি হবে।’
সংসদ সদস্য পংকজ নাথ এবার দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় তাঁর সমর্থকদের দীর্ঘদিনের প্রভাব-প্রতিপত্তি খর্ব হয়। অনেকে এলাকা ছেড়ে যান। কিন্তু ৩০ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আকস্মিকভাবে তিনি অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এরপর তিনি শাম্মী আহম্মেদের বিরুদ্ধে দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকার অভিযোগ করেন। এতে তাঁর প্রার্থিতা বাতিল হওয়ার পর পংকজ নাথ তাঁর সমর্থকদের নিয়ে আবার এলাকায় সরব হন। অন্যদিকে শাম্মীর সমর্থকেরা কোণঠাসা হয়ে পড়েন।
আজ শাম্মী আহম্মেদের হিজলায় ফেরার খবরে তাঁর সমর্থক নেতা-কর্মীরা আবার উজ্জীবিত হয়েছেন। বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে হাজারো নেতা-কর্মী ছুটে আসেন। এ সময় হিজলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ, সহসভাপতি নজরুল ইসলাম, শাহাবুদ্দিন আহমেদ, আমির হোসেন মাস্টার, কাজী শাহ নেওয়াজ জাহাঙ্গীর, আবদুল লতিফ খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলতাব মাহমুদসহ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সুলতান মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ ও সাংগঠনিক উপজেলা কাজীরহাট আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা শাম্মী আহম্মেদের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ। তাঁরা এখনো আশাবাদী, শাম্মী আহম্মেদ লিভ টু আপিলে তাঁর প্রার্থিতা ফিরে পাবেন।