রাজবাড়ী সদর উপজেলার চর বাগমারা গ্রামের সরোয়ার হোসেন বিশ্বাস বাড়ির উঠানে আঙুর ফলের চাষ করে সফল হয়েছেন
রাজবাড়ী সদর উপজেলার চর বাগমারা গ্রামের সরোয়ার হোসেন বিশ্বাস বাড়ির উঠানে আঙুর ফলের চাষ করে সফল হয়েছেন

বাড়ির আঙিনায় থোকায় থোকায় রঙিন আঙুর

বাড়ির আঙিনায় বাঁশের মাচায় থোকায় থোকায় ঝুলছে বাহারি রঙের বিদেশি আঙুর। সবুজ, হলুদ, লাল রঙের থোকায় থোকায় ঝুলে থাকা আঙুর পথচারীদের নজর কাড়ছে। এ নিয়ে রঙিন স্বপ্ন বুনছেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার চর বাগমারা গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা সরোয়ার হোসেন বিশ্বাস ওরফে সরোয়ার বাবু।

সরোয়ার পরীক্ষামূলকভাবে বাড়ির আঙিনায় দুই শতক জায়গায় আঙুর চাষ করে সফল হন। ইউটিউব দেখে দুই বছর ধরে তিনি আঙুর চাষ করছেন। এর আগেও চেষ্টা করেছেন, তবে তখন সফল হতে পারেননি। শখের বসে চাষ করে সফল হওয়ায় এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের পরিকল্পনা নিয়ে প্রায় এক একর জমি প্রস্তুত করছেন। মিষ্টি এসব আঙুরের চারা দেশের প্রায় ৪০টি জেলায় বিক্রি করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পেয়ে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসছেন আঙুর দেখতে ও চারা কিনতে। বর্তমানে তাঁর সংগ্রহে আছে রাশিয়ার ৬টি, ইতালি ও ভারত থেকে আনা ১২টি জাতের চারা।

রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে চর বাগমারা গ্রামে সরোয়ারের বাড়ি। সম্প্রতি সড়ক থেকে কয়েক মিনিটের পথ হেঁটে তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, উঠানে বাঁশের বড় মাচা জাল দিয়ে ঘেরা। সবুজ, হলুদ আর লাল রঙের কাঁচা-পাকা আঙুর থোকায় থোকায় ঝুলছে। এগুলো পরিচর্যার কাজ করছিলেন সরোয়ার নিজেই। তাঁর বড় ভাই আজিজুর রহমান বিশ্বাস তাঁকে সহযোগিতা করছিলেন।  

ঢাকার পোশাক ব্যবসায়ী মো. রোকন প্রামাণিক এই আঙুরের বাগান দেখতে এসেছেন। সঙ্গে তাঁর সন্তান। ঈদের ছুটিতে বাড়িতে এসেছেন। বাড়ি থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে বাগান আছে শুনে ঘুরতে এসেছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘দেশের মাটিতে এত সুন্দর বিদেশি ফল! এই আঙুর অনেক মিষ্টি।’

দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসছেন সরোয়ারের গাছের রঙিন আঙুর দেখতে

কৃষি উদ্যোক্তা সরোয়ার বিশ্বাস বলেন, ছাত্রজীবন থেকে আঙুরের প্রতি তাঁর ঝোঁক ছিল। আবহাওয়া ও মাটির বৈশিষ্ট্য না জেনে ইউটিউব দেখে শখের বসে আঙুর চাষে আগ্রহ বাড়ে। ১৯৯৪ সালে বিসিকের একটি নার্সারি থেকে চারা এনে বাড়িতে রোপণ করেছিলেন। তবে সেই আঙুর ছিল খুবই টক। সেই অভিজ্ঞতা থেকে মিষ্টি জাতের আঙুর চাষ করার সিদ্ধান্ত নেন। গত বছর ইউটিউবে কুড়িগ্রামে রাশিয়ান জাতের মিষ্টি আঙুর চাষ দেখে ফোনে যোগাযোগ করেন। সেখান থেকে চারা সংগ্রহ করে বাড়ির আঙিনার দুই শতক জমিতে লাগান। আট মাসের মাথায় ফলন আসে। ৫ কেজির মতো আঙুর ধরে এবং ভালোই মিষ্টি হয়। এখন ওই গাছ থেকে প্রায় দেড় মণ আঙুর পেয়েছেন। আরও কিছু গাছে ফল আসার অপেক্ষা।

আঙুরের পাশাপাশি মিশ্র ফলের বাগান গড়ে তুলেছেন সরোয়ার। করোনাকালে ঘরে বসে ইউটিউব দেখে এসব পরিকল্পনা করেন তিনি। পরে তিন ভাই মিলে গড়ে তুলেছেন মিশ্র ফলের বাগান। তাঁদের বাগানে আছে মাল্টা, কমলা, পেয়ারা, চায়না কমলা, কলা, করমচা ও আম।

সরোয়ারেরা তিন ভাই মিলে গড়ে তুলেছেন মিশ্র ফলের বাগান। গাছের পরিচর্যা করছেন সরোয়ারের ভাই আজিজুল বিশ্বাস

সরোয়ার বিশ্বাসের আঙুর চাষের খবর শুনে স্থানীয় কৃষি বিভাগ ও প্রশাসনের লোকজন এসেছেন। চোখে দেখার পাশাপাশি চেখেও দেখেছেন। গাছের একেকটি থোকায় ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম আঙুর ঝুলে আছে। জৈব সার ছাড়া কোনো কীটনাশক বা রাসায়নিক সার ব্যবহার করেননি। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে প্রায় ২০ হাজার টাকার আঙুর এবং ৪০টি জেলায় ৭০ হাজার টাকার চারা বিক্রি করেছেন। এখনো গাছে লাখ টাকার আঙুর আছে। নিজেকে সফল উদ্যোক্তা বলে মনে হচ্ছে। কৃষি বিভাগ ও সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বাণিজ্যিকভাবে আঙুর চাষে সফল হওয়া সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।

সরোয়ারের বড় ভাই আজিজুর রহমান বিশ্বাস বলেন, করোনাকালে পরিবহন ব্যবসায় ক্ষতি হলে ছোট ভাই সরোয়ারের কথায় কৃষি খামারে মনোযোগ দেন। নিজেদের এক একর জমিতে দুই লাখ টাকা খরচ করে মিশ্র ফলের বাগান করেন। প্রথম বছরেই তাঁদের খরচের টাকা উঠে গেছে।

রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জনি খান বলেন, ‘সরোয়ার বিশ্বাসের বাড়িতে গিয়ে আঙুর খেয়েছি। খুবই মিষ্টি ও রসালো। তাঁরা এক একর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে চাষের উদ্যোগ নিয়েছেন। যদি তাঁরা এখানে সফল হন, তাহলে কৃষকদের নিয়ে আঙুর চাষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেব। এখানে বাড়তি তেমন খরচ নেই। জৈব সার ও ভালো মাটির পাশাপাশি নিয়মিত পানি দিয়ে পরিচর্যা করতে হয়।’