কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হাটবাজারে বিক্রি হচ্ছে পাকা আম। থাইল্যান্ডের বারোমাসি কাটিমন প্রজাতির এই আমের চাহিদাও রয়েছে ক্রেতাদের মধ্যে। তাই চড়া দাম হলেও কাটিমন আম কিনছেন অনেকে। সড়কের পাশে ফুটপাতের ফলের দোকানেও বিক্রি হচ্ছে এসব আম। দেখতে হলুদ রঙের এই আম স্বাদে বেশ মিষ্টি। বাজারে চাহিদা থাকায় বাগানিরাও কাটিমন আম চাষে ঝুঁকছেন বলে জানান বিক্রেতারা।
টেকনাফ বাস স্টেশনে ফলের ব্যবসা করেন আবুল হাশেম। তিনি জানান, প্রতি কেজি ২৫০ টাকা দরে প্রায় ৬৫ কেজি পাকা কাটিমন আম কিনেছেন তিনি। আমগুলো সব স্থানীয় হোসেন আহমদের (৪৪) বাগানের। প্রতি কেজি ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে এসব আম। দাম বেশি হলেও ক্রেতারা কিনছেন। আম আসার সঙ্গে সঙ্গেই ২০-২৫ কেজি বিক্রি হয়ে গেছে। বারোমাসি আমের মধ্যে কাটিমন আঁশহীন ও সেরা।
আবুল হাশেমের দোকানে আম কিনতে এসেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল গফুর। তিনি বলেন, ‘কাটিমন আমে কোনো আঁশ নেই। এই আম কাঁচা খেতে যেমন মিষ্টি, তেমনি পাকলেও দারুণ স্বাদ। ছেলেমেয়েদের খুব পছন্দ। তাই ১ হাজার ৫০০ টাকায় ৫ কেজি আম কিনেছি।’
প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে কাটিমন আমের চাষ করছেন হোসেন আহমদ। টেকনাফ পৌর শহর থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে পাহাড়ি এলাকা মিঠাপানির ছড়ায় নিজের ফল বাগানের আড়াই কানি জমিতে আমগাছ লাগিয়েছেন তিনি। গত বুধবার সন্ধ্যায় কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের নতুন পল্লানপাড়া গ্রামের বাসিন্দা হোসেন আহমদ। তিনি জানান, ২০২০ সালে ২০০টি বারোমাসি থাই কাটিমন আমগাছের চারা কেনেন তিনি। এ জাতের গাছ থেকে বছরে তিনবার আম পাওয়া যায়। ফেব্রুয়ারিতে আসা মুকুল থেকে মে-জুন মাসে আম পাকে, মে মাসের মুকুল থেকে জুলাই-আগস্ট মাসে আম পাকে এবং নভেম্বরের মুকুল থেকে ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে আম পাকে। গত বছর আট টন আমের ফলন হয়েছিল। তবে এবার অনাবৃষ্টির কারণে মুকুল ও গুটি ঝরে গেছে। সব মিলিয়ে এবার তিন থেকে চার টন আম পাবেন বলে আশা করছেন তিনি। সারা বছর গাছে আম ধরায় অসময়ে কয়েক গুণ বেশি দামে বিক্রি হয় থাই কাটিমন। এতে স্থানীয় চাষিদের মধ্যে কাটিমন চাষের আগ্রহ বেড়েছে।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কাটিমন আমটি দেখতে কিচুটা লম্বাটে আকারের। এই প্রজাতির আম দেশে নতুন। আমের আঁটি তুলনামূলক ছোট। পাকলে হলুদ রং ধারণ করে। তবে আমটির এত খ্যাতি মিষ্টতার জন্য। প্রতিটি আমের ওজন ২৫০ থেকে ৩৫০ গ্রাম। একই গাছে একসঙ্গে মুকুল, গুটি ও পাকা আম থাকে। আম নামানোর পর প্রতিবার গাছের ডাল ছেঁটে দেওয়া হয়। এরপর কচি যে শাখা গজায়, সেই শাখায় আবার মুকুল আসে। কাটিমন থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়ায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়। ধীরে ধীরে বাংলাদেশেও এর চাষ হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাকিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম বা ইন্দোনেশিয়ার প্রজাতির আমগাছগুলো ভালো ফল দিচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামে। ভৌগোলিক ও পরিবেশগত কারণে টেকনাফেও আগাম জাতের আমের ফলন হচ্ছে। ফলন ভালো হওয়ায় জাতটি দ্রুত বিস্তার লাভ করছে। এখন অনেক কৃষক এবং সাধারণ মানুষ এসে কাটিমন চাষের নিয়ম জানতে চান। টেকনাফের হোসেন আহমদ তাঁদের জন্য ভালো দৃষ্টান্ত।