জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকা থেকে ধীরে ধীরে পানি নামছে। তবে বন্যার্ত মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র খাদ্যসংকট। বানভাসিদের অনেকেই অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বন্যার্তদের অভিযোগ, সরকারিভাবে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।
জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পানি পরিমাপক আবদুল মান্নান আজ সোমবার সকাল ১০টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি ১০ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৭৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে পানি কমার ধরন খুব ধীরগতির। বন্যা পরিস্থিতির তেমন উন্নতি না হলেও পানি কমেছে। পানি বাড়ার আশঙ্কা না থাকলেও এলাকা থেকে পানি নামতে কিছুটা সময় লাগবে।
আজ সকাল আটটার দিকে দেখা যায়, ইসলামপুর উপজেলার জরুলতলা-ইসলামপুর সড়ক থেকে পানি কিছুটা কমেছে। তবে এখনো পানিতে তলিয়ে আছে সড়কটি। ফসলের মাঠে এখনো কোথাও বুক বা কোমরসমান পানি আছে। ঘরবাড়িতে এখনো পানি থাকায় রাস্তা বা উঁচু জায়গায় পবাদিপশু রেখেছেন বানভাসিরা। অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো ডুবে থাকায় দুর্গত এলাকার লোকজন নৌকায় চলাচল করছেন।
নৌকায় যাচ্ছিলেন পূর্ব বলিয়াদহ এলাকার হাফিজুল রহমান। তিনি বলেন, ‘গত মঙ্গলবার হঠাৎ করে গ্রামে পানি চলে আসে। এরপর টানা পাঁচ দিন পানি বাড়ছে। প্রথম দুই দিন ঘরে মাচা করে ছিলাম। গত শুক্রবার থেকে পুরো মাচা ডুবে গেছে। ফলে ডেবরাইপ্যাচ এলাকায় আশ্রয় নিয়েছি। গত পাঁচ দিনে কেউ কোনো ধরনের ত্রাণসামগ্রী নিয়ে আসেননি।’
একই অভিযোগ করেন স্থানীয় কয়েকজন। তাঁরা বলেন, গত সাত দিনে এলাকাটিতে কেউ ত্রাণসামগ্রী নিয়ে যাননি।
স্থানীয় মানুষের অধিকাংশ দিনমজুরি বা কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বন্যার কারণে এক সপ্তাহ ধরে এসব পরিবারের পুরুষ সদস্যরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এখন তাঁরা তিন বেলা ঠিকমতো খেতে পারছেন না। অনেকেই গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে আছেন। মাঠের জমি পানির নিচে তলিয়ে আছে। এ কারণে গোখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।
বন্যাকবলিত কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত বেশির ভাগ মানুষ হতদরিদ্র। অনেক পরিবার বেশ কয়েকবার নদীভাঙনের শিকার হয়েছেন। তাঁরা নিঃস্ব এখন। এর মধ্যে প্রতি বছরই আঘাত হানে বন্যা।
স্থানীয় মানুষের অধিকাংশ দিনমজুরি বা কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বন্যার কারণে এক সপ্তাহ ধরে এসব পরিবারের পুরুষ সদস্যরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এখন তাঁরা তিন বেলা ঠিকমতো খেতে পারছেন না। অনেকেই গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে আছেন। মাঠের জমি তলিয়ে আছে। এ কারণে গোখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে অনেকে গাছের পাতা ও পাটের পাতা খাওয়াচ্ছেন গবাদিপশুকে।
দুর্গত এলাকায় স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ হচ্ছে। প্রতিদিনই দুর্গত এলাকায় ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। বন্যার্তদের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ আছে।জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বন্যার্তরা অভিযোগ করেন, বেশির ভাগ দুর্গত এলাকায় এখনো ত্রাণসামগ্রী পৌঁছায়নি। এতে হতদরিদ্র বন্যার্তদের মধ্যে খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। তবে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, দুর্গত এলাকায় স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ হচ্ছে। প্রতিদিনই দুর্গত এলাকায় ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। বন্যার্তদের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ আছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে, ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জেলার বকশীগঞ্জ, দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ী উপজেলার ৩২টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার ২ লাখ ৩ হাজার ২৮ জন এই বন্যায় সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। প্লাবিত হয়েছে রাস্তাঘাট, হাটবাজার, ফসলি জমি, মৎস্যখামার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরি ত্রাণসহায়তা হিসেবে ৫০০ মেট্রিক টন চাল, ১০ লাখ টাকা ও ৪ হাজার ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ৪৮০ মেট্রিক টন চাল, ৬ লাখ টাকা ও ৪ হাজার ৫০ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। বর্তমানে ২৩০ মেট্রিক টন চাল, ৪ লাখ টাকা ও ৪৫০ প্যাকেট শুকনা খাবার মজুত রয়েছে।