ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কোথাও যানজট না থাকলেও সন্ধ্যায় এই মহাসড়কে শুরু হয় থেমে থেমে যানজট। এরই মধ্যে বৃষ্টি শুরু হলে দুর্ভোগে পড়েন ঘরমুখী মানুষ। পুলিশ বলছে, গাজীপুর ও আশপাশের অনেক এলাকার শিল্পকারখানা ছুটি হলে ঈদ উদ্যাপন করতে একযোগে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছেন শ্রমিকেরা। অনেকেই ছাতা নিয়ে, অনেকেই আবার মাথায় পলিথিন পেঁচিয়ে ছুটে চলছেন কোনো গন্তব্যের দিকে।
তবে বৃষ্টি ও অতিরিক্ত যাত্রী থাকায় পরিবহনগুলো অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে বলেও অভিযোগ করেন যাত্রীরা। এদিকে চন্দ্রা এলাকায় যানজট নিরসনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি চন্দ্রা এলাকা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য ড্রোনের ব্যবহার করছে পুলিশ।
রাজশাহীর পবা এলাকার আবদুস সাত্তার বলেন, ‘দুপুরের পর আমাদের কারখানা ছুটি হয়েছে। এরপর বাসা থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছি। জয়দেবপুরের তিন সড়ক এলাকা থেকে কোনাবাড়ী আসার পথেই বৃষ্টি নামে। পল্লী বিদু্৵ৎ এলাকায় এসে কিছুক্ষণ যানজটে আটকে থাকি। এখন চন্দ্রায় গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি।
সিরাজগঞ্জের বেলকুচি এলাকার ফজল মিয়া বলেন, ‘ছুটিও হয়েছে, এদিকে বৃষ্টিও নেমেছে। বৃষ্টি কখন থামবে জানি না। এ জন্য ছাতা নিয়ে বের হয়েছি। অনেকেই ভিজে রওনা হয়েছেন। চন্দ্রা ত্রিমোড়ে এসে দেখলাম, গাড়ি আছে তবে যাত্রী আরও বেশি। পরিবহনগুলো অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে; কিন্তু কেউ কিছু বলছেন না।’
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানান, দেশের অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ণ দুটি মহাসড়ক ঢাকা-টাঙ্গাইল এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক গাজীপুর জেলার ওপর দিয়ে গেছে। শিল্পাঞ্চল হওয়ায় এ জেলা থেকে কয়েক লাখ মানুষ ঈদযাত্রায় শামিল হোন। ঈদের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বরাবরের মতোই মহাসড়ক দুটিতে বিশেষ ব্যবস্থা নেয় প্রশাসন। বৃহস্পতিবার ঈদযাত্রার প্রথম দিনে সকালে সড়ক ও মহাসড়ক ছিল অনেকটা ফাঁকা। গাজীপুর, আশুলিয়া ও সাভারের আশপাশের কয়েকটি কারখানায় আংশিক ছুটি হওয়ায় দুপুরের পর থেকে মহাসড়কে যাত্রীর চাপ বাড়তে। সন্ধ্যার পর বৃষ্টি শুরু হলে এবং কারখানা শ্রমিকেরা বাড়ি যাওয়া শুরু করলে, সড়কের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দেখা দেয় যানজট।
রাজধানীর গাবতলী থেকে যাত্রী নিয়ে রংপুরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন বাসচালক রাশিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে বের হওয়ার পরপরই আমিন বাজার পর্যন্ত যানবাহনের প্রচুর চাপ রয়েছে। এরপর সাভার, নবীনগর, বাইপাইল, শ্রীপুর, কবিরপুরসহ মহাসড়কটির প্রতিটি মোড়ে মোড়ে যানবাহনের ধীরগতি রয়েছে।
একই চিত্র দেখা গেছে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে। মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে রয়েছে দেখা গেছে যানবাহনের জট। তবে সেই জট বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। মহাসড়কের সালনা, রাজন্দ্রেপুর, হোতাপাড়া, ভবানীপুর, বাঘেরবাজার, গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি, মাওনা চৌরাস্তা পাড় হয়েই পল্লী বিদ্যুৎ মোড়, এমসি বাজার, নয়নপুর ও জৈনাবাজার এলাকার মোড়গুলোতে যানবাহনের চাপ রয়েছে। যাত্রী ওঠানামা করানোর ফলে অল্প সময়ের জন্য জটের তৈরি হচ্ছে, কিছু সময়ের মধ্যে সেই জট স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে।
নাওজোড় হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, সন্ধ্যার পর কারখানা শ্রমিকেরা বাড়ি যাওয়া শুরু করে একই সঙ্গে বৃষ্টি শুরু হলে মহাসড়কের কয়েকটি পয়েন্টে যানবাহনের ধীরগতি হয়। তবে থেমে থেমে যানবাহন চলছে।
গাজীপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) নাজমুস সাকিব খান বলেন, ঈদযাত্রা যানজট মুক্ত রাখতে চন্দ্রাসহ জেলায় বৃহস্পতিবার সাড়ে সাতশ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তারা বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে কাজ কাজ করছে।