রাজশাহীতে লাইভ চলাকালে দুই সাংবাদিকের ওপর হামলায় অংশ নেওয়া বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) কার্যালয়ের এক কর্মচারীর পদোন্নতি হয়েছে। এ কর্মচারীর নাম সেলিম রেজা। ২৬ সেপ্টেম্বর সেলিমসহ ৩১ জনের পদোন্নতির আদেশে সই করেন বিএমডিএর সচিব শরিফ আহম্মেদ। এক দিন পর পদোন্নতি পাওয়া ব্যক্তিদের তালিকা বিএমডিএর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
সাংবাদিকদের মারধরের ঘটনায় করা মামলায় সেলিম ৩ নম্বর আসামি। তাঁকে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে বিএমডিএর সচিব শরিফ আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, এটা নিয়ে বিএমডিএর বোর্ড ডিরেক্টরে আগে থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া ছিল। তিনি সচিব হিসেবে শুধু স্বাক্ষর করেছেন। পদোন্নতি পাওয়া ব্যক্তির বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে। এ বিষয়ে আদালত যে আদেশ দেবেন, পরে তা পালন করা হবে।
বিএমডিএ সূত্রে জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বরে এক দাপ্তরিক আদেশে মোট ৩১ জনের পদোন্নতি দেওয়া হয়। এর মধ্যে তালিকার ১৪ নম্বরে আছেন সাংবাদিকদের ওপর হামলা মামলার আসামি সেলিম রেজার নাম। বিএমডিএর সদর দপ্তরের অফিস সহায়ক থেকে তাঁকে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। তিনি বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশীদের দপ্তরের অফিস সহায়ক ছিলেন। মামলাটির প্রধান আসামি নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশীদ।
মামলার বাদী ও এটিএন নিউজের রাজশাহী প্রতিনিধি বুলবুল হাবিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বোধগম্য হচ্ছে না, একজন ফৌজদারি মামলার আসামি কীভাবে পদোন্নতি পান? তাঁরা কী আইনের ঊর্ধ্বে? একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান কী ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা ও জবাবদিহিহীনতার মধ্যে থাকলে এমনটি ঘটতে পারে।’
রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, একজন ফৌজদারি মামলার আসামিকে পদোন্নতি দিয়ে বিএমডিএ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। তাঁরা কোনো কিছুকেই তোয়াক্কা করছে না। খুব শিগগির রাজশাহীর সাংবাদিকদের নিয়ে নতুন কর্মসূচি হিসেবে বিএমডিএ কার্যালয় ঘেরাও করা হবে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও রাজপাড়া থানার উপপরিদর্শক কাজল কুমার নন্দী বলেন, এ মামলায় ইতিমধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ তৎপর আছে।
প্রসঙ্গত, বিএমডিএ কার্যালয় থেকে টেলিভিশন লাইভ চলাকালে এটিএন নিউজের রাজশাহী প্রতিনিধি বুলবুল হাবিব ও ক্যামেরাপারসন রুবেল ইসলামের ওপর হামলা করা হয়। এ ঘটনায় ওই রাতেই বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশীদসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে এবং ৮ থেকে ১০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে নগরের রাজপাড়া থানায় মামলা করেন বুলবুল হাবিব। সাংবাদিকদের আন্দোলনের মধ্যে ১৪ দিনের মাথায় ওই মামলায় ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে বিএমডিএর ভান্ডাররক্ষক মো. জীবন ও গাড়িচালক আবদুস সবুরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা বর্তমানে কারাগারে আছেন। তবে এ মামলার প্রধান আসামিসহ অন্যদের গ্রেপ্তার না করায় সাংবাদিকেরা ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন। তাঁরা বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করে আসছেন।