ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় আটকে রেখে ফরিদপুরের সালথা উপজেলার কলেজশিক্ষার্থী শাকিল মিয়াকে (২৪) নির্যাতনের ঘটনায় মানব পাচার দমন আইনে মামলা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ভুক্তভোগী তরুণের বাবা টিটুল মিয়া বাদী হয়ে সাতজনের নাম উল্লেখ করে মামলাটি করেন। মামলার পর এক ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার ওই ছাত্রলীগ নেতার নাম এস এম শাকিল হোসাইন (২৮)। তিনি উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের বিভাগদী গ্রামের বাসিন্দা এবং উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি। মামলার প্রধান আসামি মুকুল ঠাকুরের জামাতা তিনি।
শুক্রবার বিকেলে সালথা থানা মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানায় পুলিশ। সংবাদ সম্মেলনে সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মাদ ফায়েজুর রহমান বলেন, মুক্তিপণের দাবিতে লিবিয়ায় শাকিল মিয়াকে আটকে রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে। ঘটনাটি গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ার পর সারা দেশে চাঞ্চল্য তৈরি হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী তরুণের বাবা বাদী হয়ে গতকাল সাতজনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেন।
ওসি ফায়েজুর রহমান বলেন, মামলার পর আজ সকালে অভিযান চালিয়ে এজাহারনামীয় আসামি শাকিল হোসাইনকে উপজেলার নকুলহাটি বাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। শাকিল মামলার প্রধান আসামি মুকুল ঠাকুরের জামাতা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি অনেক তথ্য দিয়েছেন। তবে কী ধরনের তথ্য দিয়েছেন, তা তিনি জানাননি।
সালথা উপজেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফিরোজ খান প্রথম আলোকে বলেন, শাকিল উপজেলা ছাত্রলীগের ৮ নম্বর সহসভাপতি। যে অভিযোগে শাকিলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সে ব্যাপারে উপজেলা ছাত্রলীগ তদন্ত করে জেলায় প্রতিবেদন দেওয়া হবে। এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগ যে সিদ্ধান্ত দেবে, সেটা তাঁরা মেনে নেবেন।
ফরিদপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল নগরকান্দা) মো. আছাদুজ্জামান বলেন, লিবিয়ায় শাকিল মিয়ার ওপর নির্মম নির্যাতন ও মুক্তিপণের বিষয়টি প্রথম থেকেই তাঁরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে আসছেন। এ ঘটনায় জড়িত প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন, গ্রেপ্তার শাকিল হোসাইনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। কাল শনিবার আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে রিমান্ডের আবেদন করবে পুলিশ।
অভাবের সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে চার মাস আগে প্রতিবেশী মুকুল ঠাকুরের মাধ্যমে ১২ লাখ টাকার বিনিময়ে ইতালির উদ্দেশে রওনা দেন কলেজশিক্ষার্থী শাকিল মিয়া। শাকিল সালথার রামকান্তপুর ইউনিয়নের রামকান্তপুর গ্রামের মো. টিটুল মিয়ার একমাত্র ছেলে। তিনি ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।
দালালেরা তাঁকে ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় নিয়ে যান। সেখানে আটকে রেখে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে তাঁকে দালালেরা নির্যাতন করছেন। এ নিয়ে প্রথম আলোতে ‘আব্বা কবে টাকা দিবা, ওরা আমাকে খাবারও দেয় না’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।